কিছুদিন হয় রবার্ট ফিস্কের ‘দ্য গ্রেট ওয়ার ফর সিভিলাইজেশন – দ্য কঙ্কার অফ দ্য মিডল ইস্ট’ পড়ছি। পরতে পরতে জড়িয়ে আছে ঘটনাবহুল এক জীবনের বিভিন্ন বিবরণ। ১ম বিশ্বযুদ্ধের এক আহত সৈনিকের ছেলের মূল্যবোধের কথা। ২য় বিশ্বযুদ্ধের বিভীষিকার ছায়ায় গড়ে ওঠা এক বালকের বেদনার কথা। মধ্যপ্রাচ্যের তুমুল ডামাডোলের মাঝে দিনাতিপাত করা এক সাংবাদিকের অভিজ্ঞতার কথা।
প্রাথমিক পর্যায়ের অনেকটা জুরে আছে ওসামা বিন লাদেনের সাথে ফিস্কের সাক্ষাৎ ও সাক্ষাৎকার। ইতিহাস কত রহস্যময়, আর মানুষ কত অর্বাচীন, সেকথা ঘুরে-ফিরে মনে আসছে বারবার। প্রথম ইরাক যুদ্ধের কথা আমরা জানি সবাই। জর্জ বুশ সিনিয়র ইরাকে তাঁর সৈন্য পাঠিয়েছিলেন সাদ্দাম হোসেনকে কুয়েত থেকে বিতাড়িত করতে। সেই যুদ্ধে সাদ্দাম পরাজিত হন, নিজ দেশের সীমানার মধ্যে অন্তরীণ হন, আফগানিস্তানে তালেবান ছত্রচ্ছায়ায় ওসামা বিন লাদেন তাঁর সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন, আমেরিকায় আক্রমণ হয়, আফগানিস্তান নিরস্ত হয়, ইরাক দখল ও সাদ্দামের ফাঁসি কার্যকর হয়।
আজকে পশ্চিমা বিশ্বের মাথাব্যাথা ইরাক ও আল-কায়েদার সম্ভাব্য যোগাযোগ নিয়ে। মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাস অন্য ভাবেও রচিত হতে পারতো। বিন লাদেন সৌদি আরব থেকে বিতাড়িত হয়ে আশ্রয় নেন সুদানে। অথচ এই সুদান ছিল তাঁর অপছন্দের তালিকার রাষ্ট্র। সাদ্দাম কুয়েত দখলের পর মুখ্য ভয় ছিল সৌদি আরব দখলের দিকে এগিয়ে যাবার। সেই সময় বিন লাদেন তার মুজাহেদিনদের নিয়ে সাদ্দামের মুখোমুখি হতে চেয়েছিলেন। সৌদি বাদশা মার্কিন সৈন্য প্রবেশ করতে দেওয়ার কথা বিবেচনা করলে এই বিন লাদেনই সাবধান করেছিলেন, মার্কিন সেনা কোনদিন পারস্য উপত্যকা ছাড়বে না। প্রেসিডেন্ট বুশের লিখিত প্রতিজ্ঞার উপর ভরসা করে সৌদি বাদশা মার্কিনি সাহায্য নিলেন, দেশছাড়া করলেন বিন লাদেনকে। যুদ্ধ হল, প্রতিজ্ঞা রইলো না।
ইতিহাস যদি অন্যভাবে রচিত হত, তাহলে কেমন হত আজকের মধ্যপ্রাচ্য? বিন লাদেন তাঁর উগ্র মৌলবাদ বজায় রাখতেন, এটা নিয়ে সন্দেহ নেই আমার। কিন্তু রাজনীতির বাকি চেহারা আদতে কতটা ভিন্ন হত? বিন লাদেনের জেহাদের সূচনা এবং মুখ্য লক্ষ্য তো মার্কিনমুক্ত আরব বিশ্ব। এই পালে কি আদৌ হাওয়া পড়তো সাদ্দাম বনাম বিন লাদেন যুদ্ধ হলে? বিন লাদেনকে কি আফগানিস্তানে আশ্রয় নিতে হত? তালেবানরা তো বিন লাদেনের পছন্দের তুলনায়ও কট্টর ছিল!
কুয়েত ক্রস-ড্রিলিং করছিল ইরাকে, তাই সাদ্দাম নাকি জর্জ বুশের দেওয়া অস্ত্র ও অনুমতি নিয়েই আক্রমণ করেছিলেন। এরকমটা শুনেছি এক কালে। সাদ্দামকে ঝুলানো হল ১৯৮৮এর আগের অন্যায়ের দায়ে। খুব আশায় ছিলাম সাদ্দামের বিচারকার্যের মধ্যে দিয়ে সেই সময়ের রাজনীতি পরিষ্কার হবে। হল না। তাহলে কি আরব বিশ্বে ঘাঁটি গড়বার মাস্টার প্ল্যান থেকেই সাদ্দামকে অস্ত্র দেওয়া, অনুমতি দেওয়া, যুদ্ধে হারানো, এবং তাঁর মুখ বন্ধ করে রাখা?
যাক, অত্যাচার হোক যথা তথা, মৃত্যু হোক ঝুলে।
No comments:
Post a Comment