Thursday, January 24, 2008

কত কী করার আছে বাকি

অমরত্বপিয়াসী এক জাতিস্মর আমি। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে হাজার বছর ধরে আমি পথ হেঁটেছি পৃথিবীর পথে। বাদলের রাতে বন্যা দেখেছি লাবণ্যের চোখে, যন্ত্রকৌশল অর্জন করে হারিয়েছি প্রকৃতির বিরূপতাকে, গড়েছি পেরিক্লিসীয় এথেন্স, রেনেসাঁর ইতালি, আর অষ্টাদশ শতকের ফ্রান্স - তবে আর বাকি কী?

সত্বার ক্ষুদ্রতা স্বীকার করে গোর্কির কাছে হাত পেতে বলছি, "আজ আমরা বায়ুতে পাখির মত উড়তে শিখেছি, শিখেছি মাছের মত জলে সাঁতরাতে, শিখিনি কেবল ডাঙায় মানুষের মত হাঁটতে।" পরকে ধনহীন করে ধনবান হয়েছি, শ্রেণীসংগ্রামের ধারাবাহিকতায় যুদ্ধে প্রাণ দিয়েছি, পারিনি কেবল একবার সকলে মিলে এক হতে, ভিন্নতর বিশ্বাস ও মতকে মেনে নিতে।

পৃথিবীর বুকে ঐক্য একবার হলেও ধনসাম্যে এসেছে, একবারও আসেনি ধর্মনিরপেক্ষতার রূপে। মানবের মাঝের দেবত্ব ভুলে, ধর্মের আফিম খেয়ে, ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিন্নতার কারণে যত প্রাণ দিয়েছি, তত প্রাণ কোন বিশ্বযুদ্ধেও দেইনি। তাই আজ চাই এই বিভেদ নিরসন। চাই ভাবনার মুক্তি। চাই রেনেসাঁর বুদ্ধির পাশাপাশি হৃদয়গত দিকটিও আত্মস্থ করা। চাই ধর্ম-সমপ্রদায় থেকে সমপ্রদায়টুকু না নিয়ে ধর্মকে নেওয়া, তার মানবতাবাদী দিকটি তুলে ধরা।

মোতাহের হোসেন চৌধুরী বলেছিলেন, ভুল পথে চলে চলে আজ আমরা টিকিত্ব আর দাড়িত্বে আমরা পাণ্ডিত্ব আর মোল্লাত্ব না খুঁজে খুঁজি যথাক্রমে হিন্দুত্ব আর মুসলমানত্ব। ধর্মের নামে এভাবেই বহুযুগ ধরে আমরা আত্মনিয়ন্ত্রণের খোলসে আত্মনির্যাতন করছি। কথাগুলো এতকাল পরও সত্য। আজও আত্মার মুক্তি আসেনি, মেরুদণ্ড ঋজু হয়নি, দৃষ্টির সীমা দিগন্ত ছাড়ায়নি।

আজ তাই চাই অ্যান্টিনোমিয়ানিজম। চাই প্রথাগততা, নীতিগততা, আর তথাকথতার ঊর্ধ্বে সেই মানবধর্ম যা সম্পর্ককে করে মসৃণ, কৌণিক নয়। চাই সেই উদার ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি যা সন্ধান দেয় জীবন্ত আত্মার আনন্দময় জগতের। চাই ধর্মনিরপেক্ষতার সেই গঙ্গায় অবগাহন, যা শত পঙ্কিলতা বহন করেও শুভ্র, সুন্দর, পবিত্র। এর ব্যতিরেকে নীচতা আর হীনতার কারাবদ্ধ যে ধর্মের সন্ধান মেলে, তারই জন্য বার্নার্ড শ' বলে গেছেন, সেই ব্যাক্তি থেকে সাবধান, যার ঈশ্বরের বসত আকাশে।

তাই আজ বাকি আছে সেই দিন আনা, যেদিন কোন নজরুল আর রচবেন না,

"তব মসজিদ-মন্দিরে প্রভু নাই মানুষের দাবি,
মোল্লা-পুরুত লাগায়েছে তার সকল দুয়ারে চাবি।"

No comments: