Tuesday, July 10, 2007

প্রবাসের কথোপকথন ৪

দিদি, ভাল আছেন?

এইতো আছি, ভাই। সারাদিন কাজ সেরে ফিরলাম মাত্র।

দাদা বাসায় নেই?

না, আপনার দাদা এখনও কাজে। রাত ৩টা পর্যন্ত কাজ। আমি গিয়ে নিয়ে আসবো।

দাদা কী ভাগ্যবান! আপনার মত একটা বৌ পেয়েছেন। আপনার মত বৌ এযুগে বিরল।

এত তেলাতে হবে না। আপনার দাদা আসলে কিছু বলবো?

না না, এমনি ফোন করলাম। আপনাদের কুশলাদি জানতে।

হুম, জানলেন তো। যাক, এবার আমি একটু খেতে যাই? খুব ক্ষুধা লেগেছে, ভাই।

আমাদের যে কী হবে, দিদি। সারাদিন ল্যাবে থাকি, ঘরে এসে কিছু করার নাই। রান্না-খাওয়ার কথা কী আর বলবো।

সেই দিন তো সবারই গেছে, ভাই। আমরা যে কত কষ্টের মধ্যে দিয়ে গেছি, তা অনেকেই জানে না।

দাদা ঘরে আসলে আপনি কত মজার মজার রান্না করে খাওয়ান। দাদার তো পূর্ণ জীবন।

আপনি বিয়ে করে ফেলেন একটা, তাহলেই হল। আর আমার রান্নার যা ছিরি!

আরে বিয়ে করে ভুগবো কেন অযথা? মেয়েরা সব বুদ্ধু, বুঝলেন? কথা বুঝে না কিছু না। অবাস্তব সব ব্যাপারে তাদের যত বাড়াবাড়ি। কারও মধ্যে কোন বাস্তবজ্ঞান নাই।

তাহলে আমিও বোকা, বাস্তবজ্ঞানবর্জিত? এভাবে বলাটা মনে হয় না ঠিক হল, মতিন ভাই।

না না, আপনার মত বৌ পাওয়া তো ভাগ্যের ব্যাপার!

এসব ফালতু কথা তাহলে আমাকে বলার কী মানে আছে, ভাই?

আরে দিদি, আপনার মত বৌ একটা পেলে তো বর্তে যেতাম।

কেন, আপনি না ঢাকা গেলেন এই শীতে। মেয়ে-টেয়ে দেখেননি কোন?

তা আর পারলাম কই, দিদি? গিয়েই তো পড়লাম হরতাল আর অবরোধের মধ্যে। আর, আমি তো আবার বিয়ের জন্য তেমন একটা উৎসাহী ছিলাম না কখনই। তবু মা-বাবার দিক ভেবে, আর বড় ভাইবোনদের তাগিদে কিছু মেয়ে দেখতে হল।

ও, তলে তলে এতদূর? আমাদের সামনে তো শোভিনিস্টিক কথাবার্তা বলেন এত, ওদিকে দেশে গিয়ে মেয়েও দেখে এসেছেন? তা বিয়েটা কবে করছেন?

আরে ধুর, কী যে বলেন না এসব। বাংলাদেশের মেয়েরা তো দেখি আজকাল বিয়েই করতে চায় না! কেউ আমেরিকা আসতে চায় না। সবাই শুধু বিবিএ খুঁজে!

আপনি হয়তো এমন কাউকে দেখেছেন যার বাইরে আসার ইচ্ছা নেই। আমেরিকা থাকার হরর স্টোরিগুলো এখন সব বাবা-মা জানেন। তাদের মেয়ে যে দেশে থাকলেই ভাল থাকবে, এই সহজ উপলব্ধিটা এসে গেছে তাদের মধ্যে। আমিই তো আমার সব মাসি-কাকুদের বলি যেন মেয়েকে বাইরে বিয়ে না দেয়।

আমেরিকা আসা খুব দরকার, দিদি। আমরা যে বুয়েটে পড়াশুনা করেছি, সেটা ভাবলেও কেমন লাগে এখন। এখানে এসে মনে হচ্ছে কিছুই দেখিনি, কিছুই শিখিনি। এরকম একেকটা ল্যাব বুয়েটে থাকলে কত কী করা যেত।

কী করার আছে বলেন? সব তো আর সম্ভব না। আপনার মত গুণী ছাত্ররাই দেশ ঠিক করে দিবেন নাহয়। তা আমি এবার ছাড়ি? রান্না বসাতে হবে।

হয়েছে কি বুঝলেন, দিদি...

দেখেন ভাই, আপনি বিয়ে করতে চান, নাকি চান না? চাইলে একটা বিয়ে করে ফেললেই তো হল। এত বাছাবাছির কিছু নাই। আমাকে কেন বলছেন এসব? আপনার না কয়দিন আগেও একটা প্রস্তাব এল।

কিন্তু ঐ মেয়ে তো কমিউনিটি কলেজে পড়ে মেয়ে!

এসব কী বলছেন? আশ্চর্য মানুষ তো আপনি। একটা মেয়ে কমিউনিটি কলেজে পড়ে বলে তাকে বিয়ে করবেন না? সুন্দরী মেয়ে, আমেরিকান সিটিজেন, ফ্যামিলি ভাল। আর কী চান?

না না, কী যে বলেন! আমি তো রাজপুত্রের মত ছেলে!

মানে? কী যা তা বলছেন এগুলো? মাথা ঠিক আছে আপনার?

এভাবে নিচ্ছেন কেন, দিদি? দেখুন, আমি বুয়েট থেকে পাশ করা ছেলে। দেখতে-শুনতে খারাপ না। লম্বা গড়ন। আমেরিকায় এমএস করেছি। এখানে এসে তো টুকটাক শিল্পী প্রতিভার বিকাশও ঘটেছে। আমি কেন কমিউনিটি কলেজে পড়া মেয়ে বিয়ে করবো?

তাহলে কেমন মেয়ে চান?

বুয়েটের ছেলেরা তো ধরেন ডাক্তার মেয়ে চায়...

তো করলেন না কেন ডাক্তার মেয়ে? হরতালের জন্য যেতে পারেননি মেডিকেল কলেজে?

তা আর পারলাম কই, বলেন? সকালে তো বেরই হতে পারতাম না বাসা থেকে। সন্ধ্যার পরে দু-তিনটা মেয়ে দেখতাম হয়তো।

এভাবে বলছেন? আশ্চর্য! কয়টা মেয়ে দেখলেন ৩ সপ্তাহে?

গোটা পঞ্চাশেক হবে হয়তো। বিয়ে তো খুব জরুরী ব্যাপার, বুঝলেন না! একটু তো যাচাই-বাছাই করে মেয়ে দেখতে হয়। হুট করে একটা বিয়ে করে শেষে সারাজীবন পস্তানোর ভয় আছে।

কিছু মনে করবেন না, ভাই। এরকম করলে সারাজীবন এমনিতেই পস্তাতে হবে। রুস্তম ভাইয়ের মত হাল হবে শেষে।

রুস্তম ভাইয়ের কথা আর বলবেন না। উনি তো আমার ইয়ার মানুষ। বিশেষ জ্ঞানী ব্যাক্তি। ওনার কাব্যগুণ খুবই বিরল। কেউ পাত্তা দেয় না, এটা খুব দুঃখজনক ব্যাপার।

কী বলেন এগুলো? উনি তো বাচ্চা বাচ্চা মেয়েদের সাথে প্রেম করা নিয়ে অশ্লীল সব কথাবার্তা লেখেন! তায় আবার সামাজিক অনুষ্ঠানে ওনাকে স্বরচিত কবিতা পাঠ করতে না দিলে ক্ষেপে চলে যান। ওনার মত খুঁতখুঁতে হলে আপনাকেও ওনার মত একা থাকতে হবে।

উনি হয়তো ওনার সাথে মানানসই কাউকে পাননি এখনও। পেয়ে গেলেই গলায় মালা পড়াবেন।

শুনুন, ভাই। এত ঝুটঝামেলা বাদ দিয়ে একটা বিয়ে করে ফেলুন সোজা। আপনার মাথায় বিয়ে করার আদিম ভূতটা ঢুকেছে। মেয়েদের নিয়ে এসব আজেবাজে কথা বাদ দিয়ে চোখটা একটু মাটিতে নামান। নয়তো রুস্তম ভাইয়ের মত কুড়ি বছর পর কোন এক বাড়ি গিয়ে আবিষ্কার করবেন যে মেয়ের মাকেও দেখতে এসেছিলেন আপনি।

দিদি কী যে বলেন, আমি তো পাত্র হিসেবে...

প্রবাসের কথোপকথন ৩

কেমন আছো?

বেঁচে আছি।

তা তো দেখতেই পারছি।

হ্যাঁ, কিছু ব্যাপার বদলায় না। সব সময়ের মতই আছে এই জবাবটা। বেঁচে আছি। আমার এক নানা বলেন...

...কেটে যাচ্ছে, তবে রক্তপাত হচ্ছে না। জানি। পুরান কথা। যাক, আগে বাড়ো। এখানে কেন?

এমনিই। দেশে আসলাম সপ্তাহ খানেক হয়। তোমাদের সবার খবর নিতে আসা। আন্টি দেখছি মলিন অনেক। শুভ্র বড় হয়ে গেছে বেশ। কোন ক্লাসে এখন?

মা ভালই আছে। শুভ্র ফাইভে এবার। ভুলে গেছো মনে হয়। অবশ্য তোমার কোনদিন এসব ব্যাপারে নজরও ছিল না। আমিই তো কত কথা শুনতাম তারিখ নিয়ে মাতামাতির জন্য। তোমার ডক্টরেট ডিগ্রির কতদূর? জীবনের সবচেয়ে ক্রিটিকাল টাইম কাটলো, নাকি বাকি আছে এখনো?

হাহ হাহ। খোঁচা দিচ্ছো?

হয়তো বা, হয়তো না!

আবারো?

কী জানি!

ভালই চালাচ্ছো। মজা লাগছে। বুকের কোথাও একটু কেমন কেমনও লাগছে যদিও।

হ্যাঁ, তুমি আর তোমার কেমন কেমন লাগা। কেমন কেমন লাগে, বুক ধরফর করে।

খুব করে।

যাক, এসব কথা কেন বলছি? আর কিছু বলবা? চা-নাস্তা দেই। আমি এখন গরম পানি ছাড়াও কিছু রান্না জানি।

নাহ, থাক। বেশিক্ষন বসবো না। চা খাই না, জানোই তো। তবে মাঝে কিছুদিন সিগারেট ধরার চেষ্টা করেছিলাম। পোষালো না। আমার জন্য না ওসব।

আমাকে এসব কেন শোনাচ্ছো?

দুঃখিত। কাজের কথায় আসি। ছবি আর চিঠিগুলোর জন্য এসেছি। সাথে তোমাকে আরেকবার দেখা। আসলেই সুন্দর হয়ে গেছো। কতদিন পরে দেখলাম তোমাকে! তুমিই বলেছিলে, মেয়েরা বিয়ের পর সুন্দর হয়ে যায়। আমি শেষবার যাবার পর সুন্দর হয়েছিলে, আর হলে আমাকে ছেড়ে যাবার সময়।

অন্যদের জড়িয়ে কথা বলা ছাড়তে পারবে না তুমি কোনদিনই। তবে দেখে ভাল লাগলো যে তুমি পরোক্ষ খোঁচা দিতে শিখেছো। এখন আর গালি দাও না। জীবনে কাজে লাগবে এই শিক্ষাটা তোমার।

দুঃখিত। যাক, ছবি আর চিঠিগুলো।

ওগুলো আমার। কাউকে দেবো না আমি ওগুলো।

আমি যে কেউ না, আমি অন্তু। আমি ছবি না, আমি মানুষ। যেখানে আমি নেই, সেখানে আমার ছবি কেন থাকবে?

ঠিক আছে, এনে দিচ্ছি। আর কিছু?

নাহ, আর কিছুই না। অনেক কষ্টে ভুলেছি তোমাকে। ভাবি নাই তুমি এই ভাবে ছুঁড়ে ফেলবে আমাকে। মন থেকেই জানতাম যে সবদিক গুছিয়ে নেবার সময়টুকু আছে। তবে ভালই হয়েছে। তোমাকে হারিয়ে নিজেকে খুঁজে পেয়েছি আবার। জীবনটা এখন অনেক হালকা আবারো। আই অ্যাম ব্যাক টু দ্য হ্যাপি-গো-লাকি লাইফস্টাইল।

আমি কাউকেই ছুঁড়ে ফেলিনি। তুমিই সময় থাকতে ঠিক হওনি। এটা আমার দোষ না। তুমি নিজেই তোমার জায়গা হারিয়েছো।

ভুল অনেকই করেছি তোমার সাথে। মানুষ হিসাবে অপরিশীলিত ছিলাম, অনিশ্চিত জীবন ছিল। তবে আমার আরেকটু সময় প্রাপ্য ছিল। অত দ্রুত আরেক জনের সাথে এতটা জড়িয়ে না পরলেও পারতে।

আমি তোমাকে কোন কৈফিয়ত দিতে বাধ্য নই।

চাচ্ছিও না। কথাপ্রসঙ্গে বলছিলাম।

আমি একদিনে ঐ অবস্থায় যাইনি। তুমি দিনের পর দিন আমাকে একটু একটু করে ওরকম করেছো। অনেক কষ্টে আমি বের হয়ে এসেছিলাম তোমাকে ভালবাসা থেকে।

ঠিক ততটাই সহজে সেই ভালবাসা দিলে দিলে আর কাউকে। আমি তোমার মত করে বের হতে পারিনি। আমার বুকের সবটা জুড়ে থাকা অবস্থায় ছুঁড়ে ফেললে আমাকে তুমি। তুমি আর কাউকে ভালবাসতেই পারো, তবে আমার সাথে সম্পর্কটা শেষ করে ওপথে হাঁটলেও হত।

আমার জন্যও সহজ ছিল না। কত রাত একা কেঁদেছি তুমি ঠিক হওয়ার অপেক্ষায়। সবাই বলত কেন শেষ করে দেই না এমন সম্পর্ক। আমি বলতাম তুমি ঠিক হয়ে যাবে, তোমার জেদ কমবে এক সময়, আমার ভালবাসা তোমাকে পথে ফেরাবে এক সময়। আমি জানি না আমি ঠিক করেছি, নাকি ভুল। তবে ওতে আর কিছু আসে-যায় না আমার।

আমারও না। অনেক কষ্টে হলেও ধাক্কাটা সামলেছি শেষ পর্যন্ত। অনেক শিখেছি জীবনের ওই অংশটুকু থেকে। অনেক শক্ত হয়েছি এখন মানুষ হিসাবে।

যাক, আমার মত ডেড ওয়েট কিছু তো দিতে পেরেছে তাহলে তোমার মত ওজনদার মানুষকে!

ভুলো না কিছুই তুমি। আমরা আসলেই অন্য জগতের মানুষ দুইজন। আমি ফরগেটিং হলেও ফরগিভিং না, তুমি ফরগিভিং হলেও ফরগেটিং না। আমি যতটা শক্ত, তুমি ততটাই নরম। আমি মেঘের যতটা নিচে, তুমি ততোটাই উপরে। দশ হাজার মাইলের দূরত্ব তো আছেই।

আমাদের দূরত্ব বা পার্থক্যের জন্য আমরা আজকে আলাদা নই। তোমার আচরণের জন্যই তুমি আমাকে হারিয়েছো।

আমার কষ্টগুলো তোমাকেই একটা স্বচ্ছন্দ জীবন দেওয়ার জন্য ছিল। পশুর মত বেঁচে কি মানুষের মত আচরণ করা যায়?

তার চেয়ে আমার সাথে একটু ভাল ব্যবহার করলেই হত। তুমি পথে থাকলে আমি তোমাকে ছেড়ে যেতাম না।

আমি পথে থেকেছি। আমি জানি পথে থাকার মধ্যে কোন রোমান্টিকতা নেই। তোমাকে, আমাকে, আমাদের উত্তরপ্রজন্মকে যেন কোনদিন পথে থাকতে না হয়, সেই জন্যই আমার সংগ্রামটা ছিল। তোমার কাছে আমি সময় চেয়েছিলাম বারবার। হাতের একেবারে কাছে ছিল সবকিছু। এনগেজমেন্টের আংটিটাও কিনে পাঠিয়েছিলাম।

এসব বলে আর কী লাভ? সময়টা চলে গেছে। আমরা কেউই আগের জায়গায় নেই। একটু সময় দাও, ওগুলো এনে দেই।

সাথে কমিটমেন্ট রিংটাও দিও। যেটা হাতে পড়ে আমার ভালবাসার অষ্টম বার্ষিকিতে বলেছিলে কোনদিন ছেড়ে যাবে না, যেটা হাতে পড়ে অন্যের বাহুলগ্না হয়েছিলে তার মাত্র দেড় বছর পর।

কমিটমেন্ট মানে যেকোন মূল্যে সাথে থাকা না। কমিটমেন্ট মানে বিশ্বাস আর মর্যাদা দেওয়া, কমিটমেন্ট মানে একটু ভাল ব্যাবহার।

এই তর্কের শেষ নেই। সাড়ে নয় বছর দিলাম, দুইটা আংটি দিলাম, রক্ত পানি করে তোমার জন্য একটা সুখের জীবন তৈরি করার সংগ্রাম করলাম। জানি না একটা মেয়েকে ধরে রাখতে হলে আর কী করতে হয়।

অন্যকে জড়িয়ে বাজে কথা না বলা, বিশ্বাস, আর কিছু আন্তরিকতা। তোমরা সব ছেলেরাই এক রকম। তোমাদের সাথে কী করলাম, তারচেয়ে বড় সব সময় অন্যের সাথে কী করলাম সেটা।

আমরা অনেক বেশি পোজেসিভ নিজেদের নারীর ব্যাপারে, হ্যাঁ। কিন্তু সেটা তো ভালবাসি বলেই।

পোজেসিভ হওয়া কোন সমস্যা না। আমরাও সেটা পছন্দই করি। কিন্তু সব ছেলেই সন্দেহবাতিকগ্রস্ত। সবাই।

সাবধানতাকে সন্দেহ বলে ভুল করা কিন্তু খুব সহজ।

তুমি আমাকে কোনদিন বিশ্বাস করতে পারো নি।

বিশ্বাস করেছি, পাখি। তবে ভরসা করতে পারি নি। তুমি আমার উপর ভরসা করতে, আমার ভুল ধরে দিলে আমি সাধ্যমত শুধরাবো, এটা জানতে। তবে এই বিশ্বাস কোনদিন করতে পারোনি যে আমি একটা সময় নিজের ভুলগুলো নিজেই বুঝবো। সম্পর্কে বিশ্বাস আর ভরসা দুটোই লাগে। আমরা কেউই একটার বেশি করতে পারি নি।

আমি আর তোমার পাখি না।

সেটাই। পাখি ডাকাটাই কাল হয়েছে। পাখি ডেকেছি দেখেই হয়তো উড়ে গেছো। তোমার কথা মত জান ডাকলেই চলতো। সম্বোধনটা আর দশ জনের মত হত। সম্পর্কটাও। ভাঙনের প্রান্তে দাঁড়াতে হত না এভাবে। পাখিরা পাখাদের ছেড়ে চলে যায়, জানরা জানদের ছেড়ে যায় না।

সেন্টিমেন্টাল কথাবার্তা বলে লাভ নেই। আমার আর ওসবে কোন প্রতিক্রিয়া হয় না। আমিও এখন রিয়ালিস্টিক।

দেখতেই পারছি। তা বড়লোক বাপের গাড়ি হাঁকানো প্রেমিকটা কেমন আছে?

তুমি একটা পশুই থেকে যাবে। তোমার বাজে কথা শুনতে বাধ্য না আমি। আমার আরও কাজ আছে।

আমার মত করে তোমাকে হাসায়?

তোমার মত করে কাঁদায় না।

তুমি সুখে থাকলেই খুশি আমি। আমিও মেনে নিয়েছি যে আমাদের জুড়ি লেখা ছিল না কিসমতে। কৌতূহল থেকেই জানতে চেয়েছিলাম।

নানা কেমন আছেন?

নেই আর।

জানাবার প্রয়োজনও বোধ করলে না আমাকে?

কী করতে? শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত আফসোস করে গেছে। তুমি কেন তার কাছে অভিযোগ করলে না। শুধরে দিত আমাকে, শাসন করে দিত।

আমি খুব খারাপ। এটাই শুনতে চাচ্ছো তো?

উহু। তেতো কথার জন্য দুঃখিত। আমি তোমাকে দোষ দেই না। তুমি ভাল থাকো, এটাই চাই। আমি তোমাকে চাইতে আসিনি। তোমাকে ভোলাতে, বা কষ্ট দিতেও আসিনি। আই অ্যাম ওভার ইউ। অনেক কষ্টে, অনেক বন্ধুর পথ ধরে। আমি আর তোমাকে আগের মত ভালবাসি না। আমি আর তোমাকে চাই না।

হাসালে, অন্তু।

কেন?

ইউ আর নট ওভার মি।

ভুল। খুব ভুল। তুমি চেনো না এই আমাকে। এটা নতুন আমি। তোমার প্রত্যাখ্যানের আগুনের ছাই থেকে গড়ে ওঠা নতুন এক আমি।

তুমি এখনও আমার চোখের দিকে তাকালে নার্ভাস হয়ে যাও। বসো, এক কাপ চা দেই।

প্রবাসের কথোপকথন ২

ম্যা এল্প ডা নেস্কিন লা?

(আমাকে বলল?)

সা! ইউ অডা অ ন?

জ্বী, দুঃখিত। একটা বার্গার দেবেন মেহেরবানি করে।

বাগা হু?

জ্বী, একটা বিগ ম্যাক বার্গার দেবেন?

আ নাম্বা ওয়া?

না না! আমি শুধু বার্গারটা চাই। দুই টাকা চল্লিশ পয়সার বার্গারটুকু হলেই চলবে আমার।

বাগা? হু ইউ ওয়ান বাগা বাগা?

(প্রাণপণে ইঙ্গিতে বোঝানোর চেষ্টা)

ও, শুধু স্যান্ডউইচটা চাই?

জ্বী, ম্যাডাম। আমার কোক-ফ্রাই লাগবে না।

এ! গেট ডিস ডগ আ স্যান্ডউইচ।

(আমাকে বলল?)

এ ইয়ু গো। ইউ ওয়ান এনিহু এলস?

আ ট্রে অ্যান্ড সাম সস প্লিজ।

ইউ ওয়ানা হু?

(রক্ষা কর মাবুদ! কিসের মধ্যে পরলাম এটা? চাই বার্গার, সাধে মানুষ!)

এ নিগা! ডিস ডগ টক সো ফানি শি!

(অগত্যা আবারো ইঙ্গিত।)

ও, হিয়ার ইজ দেম ট্রে।

(ভুল শুনলাম নাকি? কী বলে এগুলা?)

হোয়াই ইউ ইজ স্ট্যান্ডিং ডেয়া স্টিল?

কিছু সস চেয়েছিলাম, দেবেন?

সস? বারবিকিউ, হানি, অ রেঞ্চ?

ওহ, থুক্কু। কেচাপ, কেচাপ।

ম্যা ইউ ফুল অফ ট্রাবল অ্যান্ড শি। ওয়াচ্চু থিংক ইউ ইজ? লেম্মি গেড্ডেম আডা কাস্টোমা।

ফিশ আউট অফ ওয়াটার, ম্যাম। ফিশ আউট অফ ওয়াটার।

হু?

প্রবাসের কথোপকথন ১

"তোমরা কোন দেশ থেকে? ইন্ডিয়া?"

উহু, বাংলাদেশ

"ব্যাংলাডেশ? সেটা কোথায়?"

ঐ যে ইন্ডিয়ার পাশের ছোট্ট দেশটা, ওটা

"তোমাদের ভাষা কী?"

বাংলা

"?"

বেঙ্গলি

"আহ! তোমাদের ওদিকের লোকেরা খুব স্মার্ট হয়।"

(কপট লজ্জা!)

"তা তোমরা কি হিন্দুইজম অনুসরণ কর?"

না, আমরা মুসলিমআমাদের দেশের ৮৫% লোক মুসলিম

"(ওহ, শিট! ফাইশা গেলাম রে! হেল্প! বম্ব! টেররিস্ট!)"

হাহ হাহ! না, ওরকম করে তাকানোর কিছু নাইআমরা আরব বেল্টের বাইরে একটা মুসলিম দেশআমাদের ওখানে তলোয়ার দিয়ে ইসলাম কায়েম হয় নাইইট ওয়াজ এ কনশাস ডিসিশনআমাদের পশ্চিমে বিশাল একটা হিন্দু রাষ্ট্র, আর পূর্বে দল বেঁধে সব বৌদ্ধ রাষ্ট্রআমরা ভিন্ন

"কী জানি রে বাবাতবে মুসলিমরা খুব ক্রেইজিখুব অস্থির, অসহিষ্ণু।"

না, আমরা তেমন নাআমরা গান গাই, আমাদের মেয়েরা পেটখোলা কাপড় পরে ঘুরে বেড়ায়...

"ওহ! সসসসাড়ড়ড়ি?"

হ্যা, শাড়িআমাদের মধ্যে ভারতীয় সংস্কৃতির প্রভাব অনেক বেশি১০০০ বছর আগে আমরা সবাই হিন্দু ছিলাম, তারও ১০০০ বছর আগে ছিলাম বৌদ্ধআমাদের মধ্যে তাই ঐ মূল্যবোধগুলো আজও রয়ে গেছে

"তাহলে তোমরা মুসলিম হলে কীভাবে?"

গানে গানে

"হোয়াট? ঠাট্টা করো, না?"

মোটেই নাসুফিজম দিয়ে ইসলামের প্রবেশ বাংলায়ভারতবর্ষ খুব ধর্মনিরপেক্ষ ছিল সবসময়ব্রিটিশগুলো এসে সব নষ্ট করলো'৪৭-এ জোর করে আমাদের পাকিস্তান বানিয়ে দিয়ে গেলো

"ওহ, এখন মনে পড়ছেতোমরাই ইস্ট প্যাকিস্ট্যান ছিলে, তাই না?"

আন্টিল ১৯৭১তোমরা তো তখন ওদের ইয়ার! ৭ম নৌবহর পাঠিয়ে দিল তোমাদের নিক্সন সাহেব

"উফফ, নিক্সন!"

হ্যাঁ, কী বুঝে যে এমন একটা প্রেসিডেন্ট বানালা! যাক, হি ইজ নো লঙ্গার দ্য ওয়ার্স্ট!

"(কাষ্ঠ হাসি)"

তোমরা যে কী করছো মুসলমানদের সাথে! এক কাতারে ফেলে সবাইকে মাপছোখুব আনফেয়ারআমার মত মডারেটদের দূরে ঠেলে দিচ্ছো দিনদিন

"বাট ইউ মুসলিমজ আর সো ক্রেইজি!"

অ্যাপারেন্টলি নট ক্রেইজি এনাফ টু বম্ব দ্য রঙ কান্ট্রি! লুক, আমরা টুইন টাওয়ার ধ্বংস করা সমর্থন করি নাতবে টুইন টাওয়ার যেই শোষণের প্রতীক, সেটারও বিরোধী

"কিন্তু কেন? ওটা তো ফ্রি ট্রেডের প্রতীক!"

ফ্রি ট্রেড মাই অ্যাস! এখন আউটসোর্সিঙ্গে এত গা জ্বলে কেন? আমরা তো আরও জঘন্য শোষণ সয়ে এসেছিআমাদের দেশে আমরা মাথা কুটে মরছি তালেবানি শক্তি ঠেকাতে, ওদিকে বাইরে এসে এমন ঝামেলায় পড়ছি যেন দাদার গোত্র থেকে আমরা সন্ত্রাসীইন ফ্যাক্ট, বিন লাদেনের পরিবার তো ভালই আছেআমাদের উপর এত ফ্যাকরা কেন রে ভাই?

"তা ঠিক, আমরা কিছু ব্যাপারে একটু বেশি বেশি করে ফেলছিইট ইজ অল ভেরি আনফরচুনেট।"

ইউ বেট! সবচেয়ে খারাপ তোমাদের ইমিগ্রেশন

"কেমন?"

আমি এই দেশে আসার আগে আমাকে স্ট্রিপ সার্চ করা হয়েছে

"আই এম স্যরি টু হিয়ার দ্যাট, ম্যান!"

জানুয়ারির শীতের সকালে

"শিট!"

এক প্লেন লোকের সামনেপ্লেনের দরজার বাইরে দাড় করিয়ে

"ওহ নো!"

আমি প্রোফাইলিঙ্গের পক্ষে, আমি ডোমেস্টিক সারভেইলেন্স সমর্থন করিআমাকে সার্চ করারও পক্ষে আমিআই নো আই ফিট দ্য সাসপিশাস প্রোফাইলতবে আমাকে মনে হয় একটা আলাদা রুমে নিয়ে গেলেও পারতো

"জানি না কী বলবোআমি খুবই লজ্জিত, দুঃখিত।"

আমি আরো ঝামেলায় পড়েছিলাম ইমিগ্রেশনে১১:৩০-এ প্লেন নেমেছিলআমি লাইনে শেষে ছিলামইমিগ্রেশন অফিসার বলে দিল, দাঁড়িয়ে থাকো আড়াই ঘন্টাআমি লাঞ্চে যাবপেছনের অফিসার চোখ বাঁকিয়ে তাকানোর পর ডাকলোবলে দিলো আমাকে ঢুকতে দেওয়া যাবে নাআবার চোখ বাঁকানো, আবার হুঁশে ফেরা

"আমরা সবাই ওরকম নাতোমার কপাল খারাপ আসলে।"

হ্যাঁ, শুরুতেই রেডনেকের পাল্লায় পড়েছিলাম আর কি!

"হোহ হোহ হোহ! ওয়েলকাম টু অ্যামেরিকা!"

আমার সবচেয়ে পছন্দের অভিজ্ঞতাও কিন্তু এই দেশেই

"তাই নাকি?"

আমার বাইসাইকেল চুরি গিয়েছিল একবার২০০৪-এর অগাস্টডিপ সাউথে থাকিঘেমে শেষ কাজে আসতে আসতেআমার সাথে আরও ৬ জন কাজ করেজিজ্ঞেস করে জানল কারণপরদিন কাজে গিয়ে দেখি একটা খামে হাতে লেখা কিছু ভাল কথা, আর সাথে ১২৫ ডলারওদের আগের দিনের বেতনআমি যেন আরেকটা বাইক কিনি, তাই

"খুবই টাচিং ঘটনা।"

খুবইআরেকটা আছেএকবার বৃষ্টি নামে নামে এক সন্ধ্যায় একটা গাড়ি থামলো পাশেজানালা নামিয়ে এক মহিলা বললো, এই ছাতাটা তুমি রাখোবললাম আমি লাইব্রেরিতে বসবোজোর করে গছিয়ে দিল আমি গাড়িতে উঠে গেছি, এটা এখন তোমার কাজে লাগবে বেশিছাতাটা আমি রেখে দিয়েছিকোনদিন পথের কাউকে দেব বলে

"সি, উই আর নট অল টু ব্যাড।"

জানিএই দেশটা অনেক বড়আকারে, মনেওতবে ইউ কুড ডু বেটার ইন টার্মস অফ চুজিং রেপ্রিসেন্টেটিভস

"(দীর্ঘশ্বাস)"

আমি লাদেন না, তুমিও বুশ নাঅনেকেই ভুলে যাই আমরা এটাআর, জন যখন গণ হয়ে যায়, তখন তার অনেক স্বাভাবিক বোধও লোপ পায়আমরা কেউই এই দোষ থেকে মুক্ত নাএটা ভুলে যাওয়া খুব সহজ যে উই অল ব্লিড রেড

"ইয়া, উই অল ওয়্যার আওয়ার প্যান্টস ওয়ান লেগ অ্যাট এ টাইম।"

হ্যাঁ, পিপল আর জাস্ট পিপল