"তোমরা কোন দেশ থেকে? ইন্ডিয়া?"
উহু, বাংলাদেশ।
"ব্যাংলাডেশ? সেটা কোথায়?"
ঐ যে ইন্ডিয়ার পাশের ছোট্ট দেশটা, ওটা।
"তোমাদের ভাষা কী?"
বাংলা।
"?"
বেঙ্গলি।
"আহ! তোমাদের ওদিকের লোকেরা খুব স্মার্ট হয়।"
(কপট লজ্জা!)
"তা তোমরা কি হিন্দুইজম অনুসরণ কর?"
না, আমরা মুসলিম। আমাদের দেশের ৮৫% লোক মুসলিম।
"(ওহ, শিট! ফাইশা গেলাম রে! হেল্প! বম্ব! টেররিস্ট!)"
হাহ হাহ! না, ওরকম করে তাকানোর কিছু নাই। আমরা আরব বেল্টের বাইরের একটা মুসলিম দেশ। আমাদের ওখানে তলোয়ার দিয়ে ইসলাম কায়েম হয় নাই। ইট ওয়াজ এ কনশাস ডিসিশন। আমাদের পশ্চিমে বিশাল একটা হিন্দু রাষ্ট্র, আর পূর্বে দল বেঁধে সব বৌদ্ধ রাষ্ট্র। আমরা ভিন্ন।
"কী জানি রে বাবা। তবে মুসলিমরা খুব ক্রেইজি। খুব অস্থির, অসহিষ্ণু।"
না, আমরা তেমন না। আমরা গান গাই, আমাদের মেয়েরা পেটখোলা কাপড় পরে ঘুরে বেড়ায়...
"ওহ! সসসসাড়ড়ড়ি?"
হ্যা, শাড়ি। আমাদের মধ্যে ভারতীয় সংস্কৃতির প্রভাব অনেক বেশি। ১০০০ বছর আগে আমরা সবাই হিন্দু ছিলাম, তারও ১০০০ বছর আগে ছিলাম বৌদ্ধ। আমাদের মধ্যে তাই ঐ মূল্যবোধগুলো আজও রয়ে গেছে।
"তাহলে তোমরা মুসলিম হলে কীভাবে?"
গানে গানে।
"হোয়াট? ঠাট্টা করো, না?"
মোটেই না। সুফিজম দিয়ে ইসলামের প্রবেশ বাংলায়। ভারতবর্ষ খুব ধর্মনিরপেক্ষ ছিল সবসময়ই। ব্রিটিশগুলো এসে সব নষ্ট করলো। '৪৭-এ জোর করে আমাদের পাকিস্তান বানিয়ে দিয়ে গেলো।
"ওহ, এখন মনে পড়ছে। তোমরাই ইস্ট প্যাকিস্ট্যান ছিলে, তাই না?"
আন্টিল ১৯৭১। তোমরা তো তখন ওদের ইয়ার! ৭ম নৌবহর পাঠিয়ে দিল তোমাদের নিক্সন সাহেব।
"উফফ, নিক্সন!"
হ্যাঁ, কী বুঝে যে এমন একটা প্রেসিডেন্ট বানালা! যাক, হি ইজ নো লঙ্গার দ্য ওয়ার্স্ট!
"(কাষ্ঠ হাসি)"
তোমরা যে কী করছো মুসলমানদের সাথে! এক কাতারে ফেলে সবাইকে মাপছো। খুব আনফেয়ার। আমার মত মডারেটদের দূরে ঠেলে দিচ্ছো দিনদিন।
"বাট ইউ মুসলিমজ আর সো ক্রেইজি!"
অ্যাপারেন্টলি নট ক্রেইজি এনাফ টু বম্ব দ্য রঙ কান্ট্রি! লুক, আমরা টুইন টাওয়ার ধ্বংস করা সমর্থন করি না। তবে টুইন টাওয়ার যেই শোষণের প্রতীক, সেটারও বিরোধী।
"কিন্তু কেন? ওটা তো ফ্রি ট্রেডের প্রতীক!"
ফ্রি ট্রেড মাই অ্যাস! এখন আউটসোর্সিঙ্গে এত গা জ্বলে কেন? আমরা তো আরও জঘন্য শোষণ সয়ে এসেছি। আমাদের দেশে আমরা মাথা কুটে মরছি তালেবানি শক্তি ঠেকাতে, ওদিকে বাইরে এসে এমন ঝামেলায় পড়ছি যেন দাদার গোত্র থেকে আমরা সন্ত্রাসী। ইন ফ্যাক্ট, বিন লাদেনের পরিবার তো ভালই আছে। আমাদের উপর এত ফ্যাকরা কেন রে ভাই?
"তা ঠিক, আমরা কিছু ব্যাপারে একটু বেশি বেশি করে ফেলছি। ইট ইজ অল ভেরি আনফরচুনেট।"
ইউ বেট! সবচেয়ে খারাপ তোমাদের ইমিগ্রেশন।
"কেমন?"
আমি এই দেশে আসার আগে আমাকে স্ট্রিপ সার্চ করা হয়েছে।
"আই এম স্যরি টু হিয়ার দ্যাট, ম্যান!"
জানুয়ারির শীতের সকালে।
"শিট!"
এক প্লেন লোকের সামনে। প্লেনের দরজার বাইরে দাঁড় করিয়ে।
"ওহ নো!"
আমি প্রোফাইলিঙ্গের পক্ষে, আমি ডোমেস্টিক সারভেইলেন্স সমর্থন করি। আমাকে সার্চ করারও পক্ষে আমি। আই নো আই ফিট দ্য সাসপিশাস প্রোফাইল। তবে আমাকে মনে হয় একটা আলাদা রুমে নিয়ে গেলেও পারতো।
"জানি না কী বলবো। আমি খুবই লজ্জিত, দুঃখিত।"
আমি আরো ঝামেলায় পড়েছিলাম ইমিগ্রেশনে। ১১:৩০-এ প্লেন নেমেছিল। আমি লাইনের শেষে ছিলাম। ইমিগ্রেশন অফিসার বলে দিল, দাঁড়িয়ে থাকো আড়াই ঘন্টা। আমি লাঞ্চে যাব। পেছনের অফিসার চোখ বাঁকিয়ে তাকানোর পর ডাকলো। বলে দিলো আমাকে ঢুকতে দেওয়া যাবে না। আবার চোখ বাঁকানো, আবার হুঁশে ফেরা।
"আমরা সবাই ওরকম না। তোমার কপাল খারাপ আসলে।"
হ্যাঁ, শুরুতেই রেডনেকের পাল্লায় পড়েছিলাম আর কি!
"হোহ হোহ হোহ! ওয়েলকাম টু অ্যামেরিকা!"
আমার সবচেয়ে পছন্দের অভিজ্ঞতাও কিন্তু এই দেশেই।
"তাই নাকি?"
আমার বাইসাইকেল চুরি গিয়েছিল একবার। ২০০৪-এর অগাস্ট। ডিপ সাউথে থাকি। ঘেমে শেষ কাজে আসতে আসতে। আমার সাথে আরও ৬ জন কাজ করে। জিজ্ঞেস করে জানল কারণ। পরদিন কাজে গিয়ে দেখি একটা খামে হাতে লেখা কিছু ভাল কথা, আর সাথে ১২৫ ডলার। ওদের আগের দিনের বেতন। আমি যেন আরেকটা বাইক কিনি, তাই।
"খুবই টাচিং ঘটনা।"
খুবই। আরেকটা আছে। একবার বৃষ্টি নামে নামে এক সন্ধ্যায় একটা গাড়ি থামলো পাশে। জানালা নামিয়ে এক মহিলা বললো, এই ছাতাটা তুমি রাখো। বললাম আমি লাইব্রেরিতে বসবো। জোর করে গছিয়ে দিল। ‘আমি গাড়িতে উঠে গেছি, এটা এখন তোমার কাজে লাগবে বেশি’। ছাতাটা আমি রেখে দিয়েছি। কোনদিন পথের কাউকে দেব বলে।
"সি, উই আর নট অল টু ব্যাড।"
জানি। এই দেশটা অনেক বড়। আকারে, মনেও। তবে ইউ কুড ডু বেটার ইন টার্মস অফ চুজিং রেপ্রিসেন্টেটিভস।
"(দীর্ঘশ্বাস)"
আমি লাদেন না, তুমিও বুশ না। অনেকেই ভুলে যাই আমরা এটা। আর, জন যখন গণ হয়ে যায়, তখন তার অনেক স্বাভাবিক বোধও লোপ পায়। আমরা কেউই এই দোষ থেকে মুক্ত না। এটা ভুলে যাওয়া খুব সহজ যে উই অল ব্লিড রেড।
"ইয়া, উই অল ওয়্যার আওয়ার প্যান্টস ওয়ান লেগ অ্যাট এ টাইম।"
No comments:
Post a Comment