tag:blogger.com,1999:blog-142511122024-03-12T15:47:58.350-04:00New Gaul Order"Progress, after all, is all about connecting the dots between the past and the future..."Unknownnoreply@blogger.comBlogger114125tag:blogger.com,1999:blog-14251112.post-79318398742508332232009-08-04T15:45:00.001-04:002009-08-04T15:46:40.336-04:00পোস্টারায়তনঃ ফেসঅফ<a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjNAq17415NU7-zsz50S2nfsoo_VpSc4j3DEUM2BRGPkE2HSn2gG9XBLwpezWiAHy5JPzpSVFgINAZ6vSivpzN67cZRE7Sj6t55IOQq-NwMZDL1BF9X1A1w-F8LWsffoM02SCpAlg/s1600-h/FaceOff.png"><img style="float:right; margin:0 0 10px 10px;cursor:pointer; cursor:hand;width: 192px; height: 320px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjNAq17415NU7-zsz50S2nfsoo_VpSc4j3DEUM2BRGPkE2HSn2gG9XBLwpezWiAHy5JPzpSVFgINAZ6vSivpzN67cZRE7Sj6t55IOQq-NwMZDL1BF9X1A1w-F8LWsffoM02SCpAlg/s320/FaceOff.png" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5366197376226901090" /></a><br />আশেপাশের দেশগুলোর তুলনায় আমাদের গণতন্ত্র অনেক বেশি প্রতিনিধিত্বশীল। দেশব্যাপী অরাজক আধুনিকতার প্রতিনিধিস্বরূপ দু'জন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী পেয়েছিলাম আমরা।<br /><br />ইয়ো আর আর-জে সমাজের সাথে তাল মিলিয়ে একজন বাংরেজিতে বলে গেছেন, "উই আর লুকিং ফর শত্রু।"<br /><br />আরেকজন কথা নয়, কাজে বিশ্বাসী। তিনি সমাজের সাথে মৌখিক ভাবে তাল না মিলিয়ে সোজা বিদেশ চলে গেছেন আমাদের পলায়নপরতার প্রতিভূ হয়ে।<br /><br />পোস্টারায়তনে রেখে গেলাম এই যুগোত্তীর্ণ ব্যাক্তিদ্বয়ের 'ফেসঅফ'।Unknownnoreply@blogger.com8tag:blogger.com,1999:blog-14251112.post-23581332837764554792009-08-04T15:43:00.002-04:002009-08-04T15:44:26.783-04:00ডিজিটাল বাংলাদেশঃ ২ [জাতীয় পরিচয়পত্র]<a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgq7Qksmj5c9JEVF9RKzDHwbXSeYij00ElWDMrjGEWWAuWWTQa87uGGK726w9tnKIvCa09Cdg73OIlghMcl1a1zy1P9FKlPF-gHm3cPhdsaOwvUrxyP5xFuTpeQ6FGlvr9r-LIZzQ/s1600-h/fingerprint-answers-dot-com.jpg"><img style="float:right; margin:0 0 10px 10px;cursor:pointer; cursor:hand;width: 258px; height: 303px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgq7Qksmj5c9JEVF9RKzDHwbXSeYij00ElWDMrjGEWWAuWWTQa87uGGK726w9tnKIvCa09Cdg73OIlghMcl1a1zy1P9FKlPF-gHm3cPhdsaOwvUrxyP5xFuTpeQ6FGlvr9r-LIZzQ/s320/fingerprint-answers-dot-com.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5366196775912026162" /></a><br /><span style="font-weight:bold;">জাতীয় পরিচয়পত্র ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট</span><br /><br />ভাবতে খারাপ লাগলেও এটাই সত্য যে ডিজিটাল দেশ গড়ার প্রথম শর্ত হলো প্রতিটি নাগরিককে একটি নম্বরে বন্দী করা। দ্বিতীয় কাজ হলো এই নম্বরটিকে যথাসম্ভব নিরাপদ করা। তৃতীয় কাজ হলো প্রতিটি নম্বরের মালিককে যথাসম্ভব নাগরিক সুযোগ-সুবিধা দেওয়া। বহু বছরের চেষ্টা শেষে গত নির্বাচনের আগে এই প্রথম ধাপটি অতিক্রম করলো বাংলাদেশ। রাজা থেকে উজির পর্যন্ত প্রত্যেকেরই একটি পরিচয়পত্র আছে। এতে ছবি আছে, আছে শনাক্তকরণের জন্য কিছু তথ্য। এই নম্বর বর্তমানে পাসপোর্ট থেকে নির্বাচন পর্যন্ত সর্বত্র ব্যবহার হচ্ছে।<br /><br />দুর্বৃত্তের কবল থেকে বর্তমান ধাঁচের পরিচয়পত্র খুব বেশিদিন নিরাপদ রাখা যাবে না। পৃথিবীময় তাই অনেক রকম প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে এই নম্বর বা পরিচয়পত্রগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য। দিন দিন যুক্ত হচ্ছে অনেক রকম ইলেকট্রনিক আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম। যে-দেশে গলাকাটা পাসপোর্টের প্রতুলতাই রোধ করার উপায় নেই, সে-দেশে স্রেফ ছবি দেখে শনাক্তকরণের উপর ভরসা রাখা দুষ্কর।<br /><br />পরিচয়পত্র নিরীক্ষার বর্তমান পদ্ধতি শুধুমাত্র ছবি মিলিয়ে দেখা। সরকারের কাছে একটি ছবি থাকে, আর ব্যবহারকারীর কাছে থাকে কার্ড। চোখের দেখায় ছবি মিলিয়ে রহিমকে রহিম বলে শনাক্ত করা হয়, করিমকে করিম বলে। এক্ষেত্রে জালিয়াতি প্রধানত দু’রকম হতে পারে।<br /><br />যেখানে কেন্দ্রীয় ভাবে সংরক্ষিত ছবির সাথে মিলিয়ে দেখা হয় – যেমন নির্বাচন কমিশন – সেখানে রহিমের মূল ছবিটি বদলে করিমের একটি ছবি রেখে দেওয়া দুষ্কর কিছু নয়। এরপর রহিমের অজান্তেই তার পরিচয়ে জীবন চালাতে পারে করিম।<br /><br />দ্বিতীয় পদ্ধতিটি হলো নিজের ছবি তুলে একটি পরিচয়পত্র তৈরি করে ফেলা। এটি ব্যবহার হতে পারে এমন স্থানে যেখানে ছবি ব্যবহার হলেও কেন্দ্রীয় ভাবে সংরক্ষিত ছবির সাথে মিলিয়ে দেখা হয় না – যেমন, বাজার-ঘাটে পরিচয় দেওয়া, ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সময় পরিচয়পত্র দেখানো, ইত্যাদি।<br /><br />এই দুর্বলতা নিরসনে ভবিষ্যতে এমন কার্ড দরকার যা তার চুম্বক-স্মৃতিতে কিছু মৌলিক তথ্য সংরক্ষণ করবে। এটি হতে হবে এমন তথ্য যা শুধু সেই পরিচয়পত্রের প্রকৃত মালিক জানবেন। ধরা যাক রহিম ও করিমের একজনের গুপ্ত সংকেত ১২৩, অন্য জনের ৪৫৬। শুধু এটুকু তথ্য থাকলে তা খুব সহজেই জেনে যাওয়া সম্ভব। প্রয়োজন তাই আরেকটু কঠিন কিছু।<br /><br />একটি পদ্ধতি হলো কেন্দ্রীয় সার্ভারে সংরক্ষিত ছবির সাথে স্বয়ংক্রিয় ভাবে মিলিয়ে নেওয়া। একটি স্ট্যাম্প-সাইজ ছবিতে প্রায় ৮০৪ পিক্সেল পরিমাণ তথ্য থাকে। এই পরিমাণ তথ্য ও আনুষাঙ্গিক প্রক্রিয়াকরণ দেশের যেকোন প্রান্ত থেকে কেন্দ্রীয় ভাবে যাচাই করার প্রয়াস সুতার উপর ট্রাক চালানোর মতো ব্যাপার। তুলনায় অনেক কার্যকর পদ্ধতি হলো আঙ্গুলের ছাপ মিলিয়ে নেওয়া। এটি বর্তমানে বহুল-ব্যবহৃত পদ্ধতিগুলোর একটি।<br /><br />প্রতিটি মানুষের হাতের ছাপ ভিন্ন। এমনকি যমজ ভাই-বোনের হাতের ছাপও ভিন্ন হয়। এটি প্রতিটি মানুষেরই আছে, এবং এটি কোন পাসওয়ার্ডের মতো কষ্ট করে মুখস্তও রাখতে হবে না। কম্পিউটারে এই ভিন্নতাকে ধারণ করা হয় কো-অর্ডিনেট সিস্টেমের মাধ্যমে। পাঠক নিজের ডান হাতের তর্জনীর দিকে তাকালে দেখবেন, কোনো কোনো স্থানে হাতের দাগগুলো ভাগ হয়ে গেছে কাটা চামচের মতো (ফর্ক), কোথাও কোথাও দাগের সমাপ্তি ঘটেছে (টারমিনেশন), আর কোথাও কোথাও তৈরি হয়েছে পাহাড়চূড়া (মিনুশা পয়েন্ট)। মূলত এই তিনটি বিশেষত্বের অবস্থান দিয়েই গঠিত হয় একজন মানুষের ‘পরিচয়’।<br /><br />এই তথ্য সংরক্ষণের জন্য একটি সাধারণ মেট্রিক্স যথেষ্ট। প্রান্তিক ভাবে বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই পদ্ধতিকে আরও শক্তিশালী করা সম্ভব। কেন্দ্রীয় সার্ভারেও নামের বিপরীতে একটি হাতের ছাপ সংরক্ষণ করা সহজতর। কেন্দ্র ও প্রান্ত উভয় ক্ষেত্রেই উচ্চতর প্রযুক্তি ব্যবহার করে পদ্ধতিটি শক্তিশালী করা সম্ভব। এই সামগ্রিক পরিবর্তন কোন ভাবেই তথ্য আদান-প্রদানের প্রক্রিয়াটি প্রভাবিত করবে না। পক্ষান্তরে, একটি ছবি কেন্দ্রীয় ভাবে যাচাই করার জন্য অনেক বেশি পরিমাণ তথ্য আদান-প্রদান করতে হয়। সাথে রয়েছে চেহারার বিভিন্ন অংশ খুঁজে বের করা, সেগুলোর আইগেন ভ্যালু নেওয়া, ইত্যাদি জটিলতা।<br /><br />পরীক্ষায় দেখা গেছে, যান্ত্রিক ভাবে যাচাইকৃত ছবির ব্যর্থতার হার ২০ থেকে ৪০ ভাগ। তুলনায় ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যবহার করলে ব্যর্থতার হার কমে ২.৫% -এ নেমে আসে। এখনও পর্যন্ত জানা পদ্ধতির মধ্যে শুধুমাত্র ডিএনএ পরীক্ষা করেই এর চেয়ে সফল ভাবে পরিচয় যাচাই করা সম্ভব।<br /><br />খুব সহসা না হলেও ২০২১ নাগাদ এই পদ্ধতি খুব সহজেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব বাংলাদেশে। জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির প্রাথমিক ধাপেই এ-ধরনের দিক-নির্দেশনা দেওয়া থাকলে সকল নাগরিকের হাতের ছাপ সংরক্ষিত থাকবে, যা ভবিষ্যতে অপরাধ দমনেও সাহায্য করবে ব্যাপক ভাবে।<br /><br />বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ক্রেডিট কার্ড কিংবা পাসওয়ার্ডের ধারণার সাথে পরিচিত নয়। ব্যবহারকারীকে স্বয়ংক্রিয় ভাবে শনাক্ত করা তাই অনেক দুষ্কর। ফিঙ্গারপ্রিন্ট-ভিত্তিক পদ্ধতি ব্যবহারের অন্যতম সুবিধা হলো নিরক্ষর মানুষের প্রতিও এটি প্রযুক্তিবান্ধব। যুগ যুগ ধরে চলে আসা টিপসই প্রথার সাথে সবাই পরিচিত। স্রেফ আঙুলের ছাপ ব্যবহার করে মানুষকে শনাক্ত করা গেলে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও বিভিন্ন রকম সুযোগসুবিধা দেওয়া সহজ হবে। নিরক্ষর কেউও খুব সহজে নিজের চাহিদার কথা জানাতে পারবেন।<br /><br />প্রযুক্তির সুফল প্রান্তিক নাগরিকের কাছে পৌঁছে দিতে হলে তিনটি ধাপ প্রয়োজন – পরিচয়, শনাক্তকরণ, এবং সেবা। সেবা খাত আগে থেকেই আছে, তবে তা মূলত শহরকেন্দ্রিক। পরিচয় তৈরি করা হচ্ছে নির্বাচনের প্রয়োজনে। শনাক্তকরণের সেতুটি গড়ে দিলেই মানুষ সহজে বিদ্যমান সেবা পেতে পারে। তবে এর সবচেয়ে বড় সুফল হলো ভোক্তাকে চেনার সুবিধা, তাঁর (অনেক ক্ষেত্রেই সহজ ও সীমিত) চাহিদা সম্পর্কে অবগত হওয়া। এই সুফল পেলে সেবা খাতও অনেক এগিয়ে যাবে।<br /><br />উদাহরণ হিসেবে সদ্য পাশ করা একজন কম্পিউটার/তড়িৎকৌশল প্রকৌশলীর দিকে তাকানো যায়। দেশের শীর্ষস্থানীয় এই ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ভবিষ্যৎ বলতে আছে বিদেশে চলে যাওয়া, মোবাইল কোম্পানিতে কাজ (এবং পাশাপাশি আইবিএ-তে এমবিএ) করা, নয়তো হাতে-গোনা কিছু আউটসোর্সিং কোম্পানিতে যোগ দিয়ে টুকটাক প্রোগ্রামিং করা। এঁদের যোগ্যতা ও সম্ভাবনা অনেক, কিন্তু এঁদের কাছে চাহিদা এটুকুই। এঁদের মাঝে মুষ্টিমেয় ক’জন মেটাচ্ছেন খুব উঁচু পর্যায়ের ভোক্তা/ক্রেতার দুরূহ কিছু চাহিদা। যদি এঁদের সবার কাছে কৃষক-মজুর-মুটেদের চাহিদা পৌঁছে দেওয়ার একটি পথ খুলে দেওয়া যায়, তবে তাঁরা খুব সহজেই তা পূরণ করতে পারেন। প্রকৌশলী থেকে ভোক্তা পর্যন্ত সবাইই তখন উচ্চতর অবস্থান অর্জন করবেন। এভাবেই প্রথমত ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যবহার করে একটি বিশ্বস্ত শনাক্তকরণ পদ্ধতি তৈরি করা যায়, এবং তা বিবিধ ভাবে কাজে লাগিয়ে আধুনিকায়ন করা যায়।<br /><br />প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এ-ধরনের বায়োমেট্রিক তথ্যসমৃদ্ধ চিপ ব্যবহার করেই ইলেক্ট্রনিক পাসপোর্ট তৈরি হয়। এই আধুনিক পাসপোর্টে একটি ডিজিটাল ছবি জুড়ে দেওয়া হয়। আগামী কিছু বছরের মধ্যে উন্নত বিশ্বে যাতায়াতের জন্য ইলেক্ট্রনিক পাসপোর্ট আবশ্যক হতে যাচ্ছে। অতএব, কোনো না কোনো পর্যায়ে বাংলাদেশের অনেক মানুষকেই নতুন করে পাসপোর্ট গ্রহণ করতে হবে। দেশব্যাপী কোনো প্রকল্প হাতে না নিলেও অন্তত এই নতুন পাসপোর্ট ইস্যুর সময় নিজস্ব একটি বায়োমেট্রিক ডেটাবেজ তৈরির দিকে নজর দেওয়া উচিত। অতঃপর সীমিত পরিসরে হলেও এর ব্যবহার ছড়িয়ে দেওয়া উচিত। এভাবেই হাঁটি হাঁটি পা পা করে কিছু বছরের মধ্যে একটি ব্যাপক তথ্যভাণ্ডার গড়ে উঠবে।Unknownnoreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-14251112.post-49628317613039071562009-08-04T15:39:00.003-04:002009-08-04T15:45:02.627-04:00ডিজিটাল বাংলাদেশঃ ১ [ভিশন ২০২১]<a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEi_swocOY8_W1K7hONCX4gEI1NdwUzldRT91Li6871RVNLCVmoHQota_lal5TZa5C7kreD_ec6faw4YVzMhfq06IfKzVqBh8EAeUMFPNy0-RBv0sveZLvOurT2aJDNXdbLZTQPjmQ/s1600-h/ShovonNazmus-StepOut.jpg"><img style="float:right; margin:0 0 10px 10px;cursor:pointer; cursor:hand;width: 278px; height: 320px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEi_swocOY8_W1K7hONCX4gEI1NdwUzldRT91Li6871RVNLCVmoHQota_lal5TZa5C7kreD_ec6faw4YVzMhfq06IfKzVqBh8EAeUMFPNy0-RBv0sveZLvOurT2aJDNXdbLZTQPjmQ/s320/ShovonNazmus-StepOut.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5366196317750779522" /></a><br /><span style="font-weight:bold;">ভিশন ২০২১</span><br /><br />ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। প্রত্যাশা পূরণের কথা উঠলে দলীয় নির্বাচনী ইশতেহারে পরিবেশিত এই চমকের কথাই জোর দিয়ে বলছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। ইশতেহারে পরিবেশিত 'ভিশন ২০২১'-এ লিপিবদ্ধ কথাগুলো বাংলাদেশকে কতটুকু "ডিজিটাল" করতে পারবে, এবং সত্যিকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, তা খতিয়ে দেখা সময়েরই দাবি।<br /><br />বহুল প্রচারিত এই ‘ভিশন ২০২১’ এর ব্যাপারে ইশতেহারে (বাংলায় আছে, ইংরেজিতে নেই) মাত্র সাত লাইনে যা বলা আছে, তার নির্যাস হলোঃ<br /><br /> ১. প্রতিভাবান তরুণ ও আগ্রহী উদ্যোক্তাদের সহায়তা দিয়ে সফটওয়্যার শিল্প ও আইটি সার্ভিসের বিকাশ সাধন করা হবে,<br /> ২. ২০১৩ সালে মাধ্যমিক স্তরে এবং ২০২১ সালে প্রাথমিক স্তরে আইটি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হবে,<br /> তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক টাস্কফোর্স সক্রিয় ও কার্যকর করা হবে,<br /> ৩. বিভিন্ন স্থানে হাইটেক পার্ক, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, আইসিটি ইনক্যুবেটর, এবং কম্পিউটার ভিলেজ স্থাপন করা হবে।<br /><br />খুব একটা বিস্তারিত কিছু নয়, বলা বাহুল্য। এই গোটা পঞ্চাশেক শব্দ বারংবার উচ্চারিত হচ্ছে আগামী দিনে দেশ গড়ার মূল লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে, মানুষও তাতেই বিশ্বাস স্থাপন করছে। যাঁরা ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে আরেকটু সবিস্তারে স্বপ্ন দেখতে চান, তাঁদের জন্য কিছু চিন্তার-খোরাক যোগানো যাক।<br /><br /><span style="font-weight:bold;">উন্নয়নের জন্য প্রকৌশল</span><br /><br />উন্নয়নের দিকে অগ্রসর হওয়ার দু’টি পথ আছে।<br /><br />একটি পথটি অনুকরণ-ভিত্তিক। অন্যের যা আছে, তা আমারও চাই।<br /><br />ভারতের অজস্র লোকাল ট্রেন আছে, আমাদেরও চাই। জাপান বা ইউরোপে বুলেট ট্রেন আছে, আমাদেরও চাই। নিউ ইউর্ক বা লন্ডনের মতো মেট্রোপলিটন শহরে পাতাল রেল আছে, আমাদেরও চাই। ব্রাজিলের সাও পাওলোতে পাতাল রেল না থাকলেও অনেক অনেক বাস এবং তার জন্য আলাদা লেন আছে, আমাদেরও এমন ‘ট্রেন অফ বাসেস’ চাই। উন্নত বিশ্বে ক্রেডিট কার্ড আছে, আমাদেরও এমন ‘প্লাস্টিক মানি’ চাই। আমেরিকার ডিজিটাল পাসপোর্ট আছে, আমাদেরও চাই। সিঙ্গাপুর বা ওয়াশিংটন ডিসি’র প্রতিটি কোণে ক্লোজ-সার্কিট ক্যামেরা আছে, আমাদের চাই। বাকি পৃথিবীর হাইস্পিড ইন্টারনেট আছে, আমাদেরও চাই। এমনি অনেক অনেক ব্যাপার।<br /><br />চোখ-কান খোলা রেখে চললে এমন অনেক কিছুই দেখা-জানা যায় প্রবাস থেকে। এ-ধরনের কিছু চাহিদার একটি সংকলন তৈরি কষ্টের কিছু নয়। তুলনায় অনেক কঠিন হলো এর পেছনের কারিগরী অবকাঠামো দাঁড় করানো। সদিচ্ছা থাকলে ব্যক্তিগত উদ্যোগ আর প্রযুক্তি কেনাবেচা করে এই ঘাটতির অনেকটাই খুব সহজে পূরণ সম্ভব।<br /><br />দ্বিতীয় পথটি একটু কঠিন। মুখস্ত বা চোথামারা পদ্ধতি দিয়ে এই পথে সমাধান মেলে না। এর জন্য দরকার নিজের দেশের প্রযুক্তি ব্যবহার, দেশজ মেধা ও শ্রম কাজে লাগানো, দেশের কথা মনে রেখে দেশের মতো করে তৈরি প্রকল্প হাতে নেওয়া।<br /><br />এ-ধরনের পরিকল্পণা হাতে নেওয়ার আগে অনেক চিন্তা-ভাবনা প্রয়োজন, দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা সব রকম মানবসম্পদের সাহায্য নেওয়া প্রয়োজন। জোট সরকারের পাঁচ বছর ধরে সবাই ব্যস্ত ছিল প্রতিবাদ-প্রতিরোধ নিয়ে। এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দু’বছর ধরে রাজনৈতিক দলগুলোরই কোন অস্তিত্ব ছিল না। ফলাফল, ক্ষমতার ব্যপ্তি থাকলেও পরিকল্পনার গভীরতা নেই।<br /><br />সর্বশেষ নির্বাচনে মহাজোটের মহাবিজয়ের পর অনেক বড় প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। এই দাবিগুলোর মধ্যে নৈমিত্তিক কাজে প্রশাসনিক দুর্নীতি কমানো ছাড়া তেমন বড় কিছু হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এই নিরাশার অন্যতম কারণ হলো, আমাদের বৌদ্ধিক পরিকল্পনাগুলো এটুকুতেই সীমিত। আজও আমরা চুরি এবং দুর্নীতিকে সমার্থক বলে জানি।<br /><br />যতদিন না ডিজিটাল বাংলাদেশের চাহিদাটুকু সাধারণ মানুষের কাছ থেকে আসছে, ততদিন এর জন্য সত্যিকার কাজ হবে না। সে-উদ্দেশ্যেই এই প্রকল্পগুলোর পেছনের কারিগরী শৈলী যথাসম্ভব সহজভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। এই প্রয়াসের লক্ষ্য একটাই – সাধারণ মানুষ প্রযুক্তিবিদের মতো ভাবতে শিখুক। তার এই ভাবনাই কালক্রমে চাহিদায় রূপান্তরিত হয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। অন্যথায় সুবর্ণ জয়ন্তীতে প্রগতিশীল বাংলাদেশ গড়ার সুবর্ণ একটি সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে।<br /><br /><span style="font-weight:bold;">বাংলাদেশের জন্য প্রকৌশল</span><br /><br />প্রকৌশল মানেই বাস্তববাদিতা। বিজ্ঞানীর মতো দার্শনিক ও নতুন চিন্তার বিলাসিতা প্রকৌশলীদের নেই। সহজ ভাষায়, প্রকৌশলীরা নিউটনের চেয়ে ম্যাকগাইভার বেশি। প্রকল্পের আগে তাই অনেক রকম হিসেব কষতে হয় প্রকৌশলীদের। বিজ্ঞানীর কাছে দাবিটি বিজ্ঞানের অগ্রগতির, নতুন দিগন্ত খুঁজে বের করার। বিজ্ঞানের অগ্রগতির জন্য তাই সাধারণ ভাবে অর্থের যোগান দেওয়া হয় অনেক লম্বা সময়ের জন্য।<br /><br />পক্ষান্তরে, প্রকৌশলীর কাছে দাবিটি সাধারণ মানুষের। প্রান্তিক ভোক্তার খুব সাধারণ চাহিদাগুলোর সমাধানই প্রকৌশলীর কাজ। প্রকৌশলের জন্য অর্থের যোগান সে-কারণেই সময়ের সীমায় সীমিত থাকে। যে-দেশে যেমন শিল্প গড়ে ওঠে, সে-দেশে তেমন প্রকৌশলই শক্তিমান অবস্থানে থাকে।<br /><br />প্রযুক্তির ক্ষেত্রে প্রায়শ উপেক্ষিত একটি দিক হলো মূলনীতি ও দিকনির্দেশনা। সরকারের কাজ গবেষণা করা নয়, গবেষণার দিকনির্দেশনা দেওয়া। সরকার মানুষের সব প্রয়োজন মেটাবে না, মানুষের প্রয়োজনগুলোর স্বীকৃতি দিয়ে তা যোগাতে সহায়তা করবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যাতায়াত ব্যবস্থার কথা। প্রতিটি মানুষকে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত পরিবহনের কাজ সরকার করবে না, বরং সরকার এই বিষয়টি দৃষ্টিগোচর করবে যে এই দুই মেট্রোপলিটান শহরের মধ্যে সুলভ যোগাযোগ নিশ্চিত করা উচিত। অতঃপর, সরকার এ-কাজে ন্যূনতম দিকনির্দেশনা দেবে শুধু। এরপর কালক্রমে প্রযুক্তি আসবে, আসবে বিস্তারিত নীতিমালা।<br /><br />বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কোন প্রকল্পে হাত দেওয়ার আগের প্রথম যে প্রশ্নগুলোর জবাব খুঁজতে হবে তার মধ্যে আছেঃ<br /><br /> ১. কার জন্য তৈরি করা হবে?<br /> ২. হাতে কী কী সম্পদ আছে?<br /> ৩. পূর্বপ্রস্তুত সমাধান আছে কিনা, থাকলে তা কীভাবে কাজে লাগানো যায়?<br /> ৪. কত কম খরচে কত বেশি লাভ করা যায়, এবং শেষ দিন পর্যন্ত নিংড়ে কতটুকু বাড়তি আয় বের করা যায়?<br /><br />সহজ, সাধারণ এই প্রশ্নগুলোর উপর মূলনীতি দাঁড় করানোর কারণ একটাই – প্রযুক্তির ব্যাপারে আপাত-অজ্ঞ মানুষও যেন ভাল-মন্দ বিচার করতে পারেন। শিক্ষা বা পেশা নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিককে কম-বেশি প্রযুক্তি-সচেতন না করলে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া অসম্ভব। স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, ও প্রগতি নিশ্চিত করানোর জন্য প্রান্তিক নাগরিকদের পদার্থবিজ্ঞানের জটিল সূত্র জানার প্রয়োজন নেই, শুধু প্রয়োজন একটি প্রযুক্তির উপযোগিতা বিচার-বিবেচনা করতে জানা।<br /><br />প্রথম প্রশ্নের উত্তর, দেশের এ-মাথা থেকে ও-মাথা পর্যন্ত প্রতিটি মানুষের জন্য। সুবিধাভোগীদের জন্য প্রযুক্তির প্রসার খুব সহজ। তুলনায় কঠিনতর হলো এমন কোন উন্নয়ন যা প্রান্তিক মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটাবে। টাকার অংকে বললে বুঝতে সহজতর হবে। একজন শিল্পপতির আয় এক কোটি টাকা বৃদ্ধির চেয়ে এক কোটি রিকশাওয়ালার আয় এক টাকা করে বৃদ্ধি করা অনেক বেশি কষ্টের। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে হলে দেশের প্রতিটি মানুষের জীবনেই কোন না কোন ভাবে প্রযুক্তির প্রসার ঘটাতে হবে।<br /><br />সম্পদের বিভিন্ন প্রকরণের মধ্যে শুধু মানবসম্পদই বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে আছে। অদক্ষ শ্রমিক ছড়িয়ে আছে দেশময়, আর প্রবাসে আছেন অনেক দক্ষ শ্রমিক। মাঝামাঝি স্তরের মোটামুটি শিক্ষিত তরুণও আছেন অনেক। তুলনায় প্রাকৃতিক সম্পদ নেই বললেই চলে। শুধু মানুষ দিয়ে প্রযুক্তি হয় না, কিছু না কিছু কাঁচামাল লাগে। প্রযুক্তির যুগে কাঁচামালগুলো আর স্রেফ লোহা বা তামা নয়। রূপান্তরিত যে-কাঁচামাল প্রযুক্তির জন্য ব্যবহার করা হয়, তা খুব কম মূল্যে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন দেশে। বাংলাদেশের আপেক্ষিকে সেই কাঁচামালের ব্যবহারই সর্বাধিক উপযুক্ত সমাধান।<br /><br />যে-কোন কিছুরই নির্দিষ্ট আয়ু আছে, তবে সবকিছুই ওয়ান-টাইম-ইউজ নয়। ইটের বাড়ি ভেঙে সেই ইট যেমন নতুন বাড়ি বানানোর কাজে লাগানো যায়, তেমনি বিদ্যমান প্রযুক্তি ও অবকাঠামোও পুনর্ব্যবহার করে খরচ সীমিত রাখা যায়। অতএব, খরচের কথা মাথায় রেখেই নতুন প্রযুক্তি গড়ে তুলতে হবে। এ-কারণে বিগত শতাব্দিতে গড়ে তোলা সব রকম শিল্প কারখানা সম্পর্কে পূর্ণ ও বাস্তবসম্মত জ্ঞান প্রয়োজন।<br /><br />সাধারণত ত্যানা প্যাঁচানো কিংবা অতিরিক্ত কচলে তিতারস বের করাকে নেতিবাচক ভাবে দেখা হলেও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এটাই মূল লক্ষ্য। প্রযুক্তি টেকসই হওয়ার পেছনে এটি অনেক বড় উপাদান। উদাহরণ হিসেবে জাপানে নির্মিত গাড়ি ও আমেরিকায় নির্মিত গাড়ির পার্থক্যের দিকে তাকানো যায়। দীর্ঘকাল ধরে ব্যবহারোপযোগী করে তোলার চেষ্টা থাকে বলে টয়োটা বা হোন্ডার তৈরি গাড়ি বিশ্বজয় করছে। পক্ষান্তরে, স্বল্পকালীন ব্যবসা মাথায় রেখে তৈরি হওয়ায় আমেরিকায় নির্মিত গাড়ি বাজার হারাচ্ছে। প্রখ্যাত সাংবাদিক রবার্ট ফিস্কের বইয়ে আছে, ওসামা বিন লাদেনের সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে তিনি দেখেছিলেন যে তালেবানরা পাহাড়-পর্বতে শুধু টয়োটার গাড়ির উপরেই ভরসা করে, অন্য কিছু নয়। বাংলাদেশের মতো সীমিত আয়ের দেশকে ডিজিটাইজ করতে হলে মূলনীতি হতে হবে এভাবে বিদ্যমান প্রযুক্তির মধ্য থেকে ‘এক্সট্রা মাইল’ বের করে আনা এবং নতুন প্রযুক্তিকে কালোত্তীর্ণ করা।<br /><br />এই সাধারণ প্রশ্নগুলোর ভিত্তিতেই সাধারণ কিছু চিন্তা, কল্পনা, ও দর্শন মিশিয়ে এবার ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন এগিয়ে নেওয়া যাক।<br /><br />ছবিঃ "স্টেপ-আউট", শোভন নাজমুসUnknownnoreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-14251112.post-77364250739045648352009-07-13T12:31:00.002-04:002009-07-13T12:40:36.200-04:00জালাল ভাইকে নিয়ে প্রথম আলোতে একটি লেখা<a onblur="try {parent.deselectBloggerImageGracefully();} catch(e) {}" href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjEjlVTZDaJK1mtzG9xJVETb3gNyj4Ov_GyaWUI1nJD0CxZlyVflzGO-ZqmIIHfimiE0n51pdQ06Y2cGynCZlOtfwMwmEhmaP9spxQ-GbhaLMCOK3fyTiREujOOPa43sus7ZIp-MQ/s1600-h/mmrjalal-P.Alo.jpg"><img style="float:right; margin:0 0 10px 10px;cursor:pointer; cursor:hand;width: 174px; height: 320px;" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjEjlVTZDaJK1mtzG9xJVETb3gNyj4Ov_GyaWUI1nJD0CxZlyVflzGO-ZqmIIHfimiE0n51pdQ06Y2cGynCZlOtfwMwmEhmaP9spxQ-GbhaLMCOK3fyTiREujOOPa43sus7ZIp-MQ/s320/mmrjalal-P.Alo.jpg" border="0" alt=""id="BLOGGER_PHOTO_ID_5357985467782678418" /></a><br />অনেকেই হয়তো দেখে থাকবেন, শ্রদ্ধ্বেয় জালাল ভাইকে নিয়ে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় একটি লেখা ছাপা হয়েছে। লেখাটি লিখেছেন সেলিম রেজা নূর।<br /><br />সচলায়তন কিংবা আন্তর্জালে ঘুরে বেড়ানো অনেকের কাছে জালাল ভাইয়ের কীর্তি অচেনা নয়। একটি ছন্নছাড়া দেশের ভুলে মুক্তিযুদ্ধের প্রামাণ্য ইতিহাস তিনি সংগ্রহ করেছেন পরম যত্নে। কোনো প্রকার পৃষ্ঠপোষকতা বা উৎসাহ ছাড়াই গড়ে তুলেছেন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে নিজস্ব এক যাদুঘর।<br /><br />ব্যাক্তিগত আলাপে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে জালাল ভাইয়ের কাজের ধরন ও পরিধি জানার সুযোগ হয়েছে আমার। নিভৃতে, কোনো রকম সাধুবাদের তোয়াক্কা না করে আমাদের জালাল ভাই মাল-মশলা জুগিয়ে যাচ্ছেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস প্রতিষ্ঠার জন্য।<br /><br />জালাল ভাইয়ের এই নিরলস সাধনা ও অন্তহীন দেশপ্রেমের কথা আন্তর্জালে অনেকেই জানি আমরা। দুঃখজনক সত্য হলো, অনেক সাংবাদিক ও মুক্তিযুদ্ধ-ব্যবসায়ী তাঁর তথ্য-ভাণ্ডার ব্যবহার করলেও তাঁর নামটি প্রচার করেন না। আন্তর্জালের বাইরের অনেকের কাছেই জালাল ভাইয়ের নামটি তাই অপরিচিত।<br /><br />আচমকা এই লেখাটি দেখে অনেক আনন্দ জেগে উঠলো মনে। সচলায়তন নামটির সাথে জড়িতরা অন্তত জানুক জালাল ভাইয়ের কথা। সে-উদ্দেশ্যেই তুলে দিলাম লেখাটি।<br /><br />মূল লেখার লিংকঃ http://www.prothom-alo.com/mcat.news.details.php?nid=MTY0MjIx&mid=NA http://www.eprothomalo.com/index.php?opt=view&page=11&date=2009-07-08<br /><br />উদ্ধৃতি<br /><br /><br /> <span style="font-weight: bold;">প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের তথ্যভাণ্ডার</span><br /> <span style="font-style: italic;">- সেলিম রেজা নূর</span><br /><br /> টেলিফোনের শব্দে কাঁচা ঘুমটা ভেঙে গেল। ‘কলার আইডি’ দেখে বুঝলাম আমার অগ্রজ ফাহীম ফোন করেছে। কোনো প্রয়োজন ছাড়া এত রাতে ওঁর ফোন করার কথা নয় ভেবেই ফোনটি কানে তুলে নিলাম। ও প্রান্ত থেকে জানতে চাইল, "তোর কাছে এমন কোনো তথ্য আছে, যা থেকে প্রমাণ হবে কবে আল-বদর বাহিনী গঠিত হয়, আর এর সাথে মতিউর রহমান নিজামীর সংশ্লিষ্টতা"? জবাবে বললাম, এ মুহুর্তে আমার হাতে সে রকম কিছু না থাকলেও জোগাড় করে দেওয়া যাবে। ব্যস্ত হয়েই অগ্রজ জানতে চাইল, "কোথায় পাবি"? জানালাম, ডালাসের জালাল ভাইয়ের কাছে নিশ্চয়ই কিছু আছে। ওখান থেকে জোগাড় করা যাবে।<br /><br /> আমাদের মুক্তিযুদ্ধের জীবন্ত বিশ্বকোষ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডালাস-প্রবাসী মোহাম্মদ মাহ্বুবুর রহমান জালাল খাঁটি দেশপ্রেমের তাগিদেই নিজের অর্থ ও সময় ব্যয় করে বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক তথ্য ও দলিলের এক অভুতপূর্ব সংগ্রহশালা গড়ে তুলেছেন ব্যক্তিগত উদ্যোগে। যে সংগ্রহশালা গড়ে তোলার কথা ছিল রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায়, সেটি বাংলাদেশে হয়নি। পঁচাত্তর-পরবর্তীকালে স্বদেশের ইতিহাস বিকৃতির যে ধারা শুরু হয়, তারই পথ ধরে বিভিন্ন পাঠাগার ও প্রচারমাধ্যমে সংরক্ষিত আমাদের গৌরবগাথা মুক্তিযুদ্ধের তথ্য ও দলিলগুলো নষ্ট করা শুরু হয়। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের সহজে শনাক্ত করা না যায়−গণহত্যার দোসর রাজাকার, আল-বদরদের আর চিহ্নিত করা না যায়, সেটাই ছিল লক্ষ্য। ফলে স্বদেশে মুক্তিযুদ্ধসংক্রান্ত দলিল ও প্রামাণ্য তথ্যগুলো আজ খুঁজে পাওয়া ভার! এসব তথ্যের জন্য আজ দেশের বাইরে খোঁজখবর করতে হয়।<br /><br /> মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডালাস-প্রবাসী এম এম আর জালাল প্রায় বিস্মৃতির অতলে ডুবে যাওয়া ইতিহাসের একেকটি অধ্যায় সিন্ধু সেচে মুক্তা আহরণের মতোই পরম যত্নে সংগ্রহ করছেন। করছেন প্রবাস-জীবনের চরম ব্যস্ততার মধ্যেও। আমার মতো শুধু প্রবাসীরাই নয়; বরং বাংলাদেশের বহু বরেণ্য ব্যক্তি, গবেষক ও প্রচারমাধ্যমের সংশ্লিষ্টরা প্রায়শই মুক্তিযুদ্ধসংক্রান্ত তথ্যের জন্য জনাব জালালের শরণাপন্ন হন। মাঝরাতে এম এম আর জালাল ঢাকার কোনো সাংবাদিকের ফোন পান, যাতে মুক্তিযুদ্ধসংক্রান্ত কোনো বিশেষ তথ্য ও দলিলপ্রাপ্তির অনুরোধ থাকে। সাত্ তাড়াতাড়ি নিজের সময় ও অর্থ ব্যয় করে পরম আনন্দে বসে পড়েন সেসব তথ্য-দলিল পিডিএফ ফাইলে পরিবর্তিত করে ই-মেইলে সেই সাংবাদিকের কাছে পাঠানোর জন্য। প্রচারবিমুখ জনাব জালাল এই আত্মপ্রচারণার যুগে কখনোই এ তথ্য সরবরাহের বিনিময়ে নিজের নামজারি তথা খ্যাতি অর্জনের কোনো চিন্তাই করতে পারেন না। তাঁর তথ্যভান্ডার নিয়ে অন্যে নাম কামাচ্ছে, এমনকি বিনিময়ে সামান্য কৃতজ্ঞতাটুকুও প্রকাশ করছে না। আর এটা যে অন্যায়, এ জাতীয় অনুযোগ নিকটজনদের কাছ থেকে বহুবার শুনলেও হূষ্টচিত্তে নির্বিকার জনাব জালাল "চাহিবামাত্রই পাওয়া যাইবে" নীতি অবলম্বন করে চলেছেন। কারণ, তাঁর বিশ্বাস "কোনো স্বত্বাধিকার নয়, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আমাদের জাতীয় গৌরব ও সম্পদ"।<br /><br /> নিজ ব্যয়ে ও উদ্যোগে আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় প্রামাণ্য তথ্যগুলো ইলেকট্রনিক সংস্করণে রূপান্তরিত করেছেন জনাব জালাল একে সহজলভ্য করার নিমিত্তে। নিউইয়র্ক-ভিত্তিক বাংলা অনলাইন পত্রিকা এনওয়াই বাংলা নিউজ-এ প্রতি সপ্তাহে বিষয়ভিত্তিক ও সময়ভিত্তিক মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন দলিল ও তথ্য উপস্থাপনার মাধ্যমে নতুন প্রজন্নকে অন্ধকার থেকে আলোর পথের যাত্রী হিসেবে গড়ে তুলছেন। পাশ্চাত্যের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামসংক্রান্ত সমুদয় সংবাদ জনাব জালালের সংগ্রহে আছে, যা থেকে বেরিয়ে আসবে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ সংগঠন ও এর গতিপ্রকৃতি এবং কখন কোথায় কে স্বাধীনতার ঘোষণা করেছিলেন সেসব তথ্য। এ ছাড়া একাত্তরে মার্কিন কংগ্রেসে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম নিয়ে যে শুনানি (হেয়ারিং) হয়, তার বিশদ বর্ণনা সংরক্ষিত আছে। মুক্তিযুদ্ধসংক্রান্ত পাঁচ শতাধিক বই আছে, যেগুলো ইংরেজি, বাংলা ও উর্দু ভাষায় রচিত, যা জনাব জালালের সংগ্রহশালায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এসব সংগ্রহে বন্ধুবান্ধব ও বিশেষভাবে শ্বশুরকুলের আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে সাহায্য-সহযোগিতা পেয়েছেন সে কথা হূষ্টচিত্তেই স্নরণ করেন।<br /><br /> মুক্তিযুদ্ধের প্রামাণ্য তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে দেশের প্রকৃত ইতিহাস অবিকৃতভাবে তুলে ধরাই তাঁর উদ্দেশ্য। তবে জনাব জালাল আরও বিশ্বাস করেন, এসবের মধ্য দিয়ে শুধু বীরত্বের কথা নয়; বরং যেটি বিশেষ করে জানার দরকার সেটি হলো, কারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল, একাত্তরে কাদের প্রচ্ছন্ন মদদে শান্তি কমিটি, আলবদর, রাজাকার আল শামস বাহিনীগুলো গঠিত হয় এবং মানবতার বিরুদ্ধে কী জঘন্য অপরাধ করে এবং হানাদারদের দোসর জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলামী ও মুসলিম লীগের নেতারা সেদিন দেশ ও জাতির বিরুদ্ধে কী ভুমিকা নিয়েছিল, সেসব তথ্য আজকের আলো-আঁধারিতে ঘেরা বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের বিশেষভাবে জানা দরকার। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণের জন্য কে শত্রু আর কে মিত্র, সে সম্পর্কে পরিষ্ককার ধারণা থাকাটা একান্ত জরুরি বলেই জনাব জালাল বিশ্বাস করেন। আর সেই তাগিদেই জাতীয় এই গুরুদায়িত্ব নিজের ক্ষুদ্র কাঁধে তুলে নিয়েছেন।<br /><br /> তিনি চান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সবার নাগালের মধ্যে এনে দিতে। এসবের ডিজিটাল কপি ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে। আর সেই লক্ষ্যে "সেন্টার ফর বাংলাদেশ জেনোসাইড রিসার্চ" নামে একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাসংক্রান্ত যেকোনো বই, সিনেমা, ছবি, গান, পোস্টার, দেশি-বিদেশি দলিল, সংবাদপত্রের কাটিং তার সংগ্রহে চা-ই চাই। কিন্তু বিনা পয়সায়, বিনা শ্রমে তো এগুলো হয় না। প্রবাসের ব্যস্ত ও সীমাবদ্ধতার জীবনে তাই পরিবার ও ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যতের সঞ্চয় ভাঙিয়েই এ কাজ তাঁকে করতে হয়। তবুও এতে তাঁর ক্লান্তি নেই, আছে সীমাহীন গর্ব।Unknownnoreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-14251112.post-83596626271894764502009-07-13T12:27:00.001-04:002009-07-13T12:27:56.605-04:00প্রবাসের কথোপকথন - ১৮– বোর্ডিং পাস আর আইডি দেখাও।<br />: লাঠিতে ভর দিয়ে হাঁটা পঙ্গু, অথর্ব মানুষ আমি। এত জায়গায় আইডি দেখালাম, এখন প্লেনের দুয়ারে এসেও ঝামেলা করতে হবে, তাই না? কত যে ঘাঁটাতে পারো তোমরা!<br /><br />– এই ছোকরা, ফেলে চলে যাবো কিন্তু তাহলে। আমি মানুষ খুব খারাপ।<br />: আচ্ছা দেখো, দেখো। হুঁ, আমি জানি সিট কোথায়। বেছে বেছে সামনের দিকের আইল সিট নিয়েছি। এখন এই নরাধমকে দেখতে দেখতে যেতে হবে তোমার।<br /><br />– দেখা যাবে কী হয়। এ কী, লাঠি হাতে রেখেছো কেনো? ওটা কোথাও সরিয়ে রাখতে হবে। কষ্ট করে উপরে তুলবার দরকার নেই। আমি আমার কোট ক্লজেটে রাখছি। প্লেন থামলে এনে দেবো।<br />: তথাস্তু। এই নাও। তোমাদের প্লেনে তো সামনের দিকেও অনেক আওয়াজ দেখছি।<br /><br />– ব্যাপার না। এই ব্রাউনিটা একটু চেখে দেখো তো। আজকের বিশেষ খাবার এটা। বয়ফ্রেন্ডের জন্য কিছু নিয়ে যাবো কিনা ভাবছি।<br />: ভুল মানুষকে দিলে। আমি চিনি বেশি খাই। এক কাপ চায়ে চার-পাঁচ চামচ পর্যন্ত নিয়ে ফেলি। অন্য কাউকে দাও।<br /><br />– কেউ তো নিচ্ছে না দেখি। তা তুমি এমন বেজার মুখ করে বসে আছো কেনো? ঝামেলা হয়েছে কোনো?<br />: নাহ, তেমন কিছু না। ট্রাভেল কিট-এ আমার সবকিছু থাকে, তবুও কী সব নিয়মের জন্য একটা একটা করে বের করে জিপলক ব্যাগে ঢুকাতে হল। এবারে দেখলাম নেল-কাটার, সেফটি-রেজার, ইত্যাদি নিতে দিচ্ছে। আমার একটা ৭ আউন্সের কৌটায় কয়েক ফোঁটা আফটার-শেভ ছিলো, সেটা নিতে দিলো না। বলে, কৌটার ভেতরে যতটুকুই থাকুক, কৌটার আকার ৩ আউন্সের বেশি হতে পারবে না। যন্ত্রণার শেষ নেই।<br /><br />– মন খারাপ কোর না। কী ড্রিংক নেবে তুমি? বাড়তি একটা কোক রেখো তাহলে। তোমার দুস্থ অবস্থার সম্মানে।<br />: চিয়ার্স টু অ্যাফারমেটিভ অ্যাকশন!<br /><br />– কেনো, এমনিতে কি বন্ধুত্বপূর্ণ হওয়া যায় না? যাক, কাজে নামি আমি এবার।<br />: তা তো অবশ্যই। তোমার গৎবাঁধা কথাগুলো বলে নাও। আমি পালাচ্ছি না।<br /><br />– উপস্থিত সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি মেমফিস থেকে গ্রিন্সবোরো পর্যন্ত এই ফ্লাইটে। আমাদের আনুমানিক যাত্রাকাল সাড়ে ছয় ঘন্টা…<br />: সে কী? টিকেট তো বলছে দেড় ঘন্টা!<br /><br />– গত ফ্লাইটের কথা ভুলে গেছো? মিসিসিপি’র উপর ঝড়-বাদলা হওয়ায় গত ফ্লাইটে আমাদের আকাশে চক্কর দিতে হয়েছে আড়াই ঘন্টা। এক ঘন্টার ফ্লাইটের জন্য আড়াই ঘন্টা বাড়তি দেরি হওয়ায় তোমরা সবাই বিরক্ত, তাই এবারে আমি একটু বেশি করে বলে দিলাম আর কি।<br />: গড ফরবিড। মনে হয় না এমনটা হবে এবার। এদিকের আকাশ পরিষ্কার দেখলাম রওনা দেওয়ার আগে।<br /><br />– সিট বেল্ট ও ইমার্জেন্সি বিষয়ক খুঁটিনাটিগুলো মেনে চলার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ। আমার পক্ষে যদি আপনাদের এই যাত্রা কোনভাবে আনন্দদায়ক করা সম্ভব হয়, তবে নিঃসংকোচে জানাবেন। আপনাদের মনোরঞ্জনের জন্য আমি যেকোন কিছু করতে প্রস্তুত। এনিথিং টু মেইক ইয়োর ফ্লাইট এনজয়েবল অ্যান্ড কমফোর্টেবল… উইদিন রিজন। আই ডোন্ট ডু ফুট মাসাজ; নট এনিমোর। সো, ডোন্ট অ্যাস্ক। একটু পর তোমাদের আমি কিছু খাবার দেবো। তারপর সময় করতে পারলে গল্প শোনাবো, আর সবশেষে থাকবে গান।<br />: বিমানবালা বেশ রসিক দেখছি। আপনি তো মনে হয় অনেক ঘুরে বেড়ান। সব সময়ই কি এমন?<br /><br />– সব সময় না। তবে এই জন তো অনেক বেশিই খোশ মেজাজে আছে মনে হয়। বাকি পথ আরামে কাটলেই হয়। তুমি ছাত্র?<br />: জ্বী, আমি ভার্জিনিয়া টেকে গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট। তড়িৎকৌশলের ছাত্র। আপনিও কি গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট?<br /><br />– নো, বাট আই হ্যাভ আ বিয়ার্ড! আমি কর্নেল থেকে পাশ করেছিলাম। আমিও একই বিষয় নিয়ে পড়েছি। প্রায় বিশ বছর আগের কথা। আমার এখন নিজের ব্যবসা আছে একটা। বিছানা বানাই। ঐ যে, পার্টনার ফোন করেছে।<br />: কর্নেলে আমার খুব কাছের এক বন্ধু পড়ে, প্রশংসা শুনেছি খুব। কান তো বন্ধ রাখা যায় না, তাই তোমার ফোনের কথাবার্তা কিছুটা শুনে ফেলেছি বলে দুঃখিত। তোমার ব্যবসা ভালই চলছে মনে হলো। এই মন্দার মধ্যেও তো বেশ লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছো।<br /><br />– আমি অসুস্থ আর প্রতিবন্ধীদের জন্য বিছানা, হুইল-চেয়ার, ইত্যাদি বানাই। ব্যবসার ধরনটাই এমন যে এটার উপর মন্দা তেমন প্রভাব ফেলতে পারে না। আমরা মূলত ডিজাইনের কাজটুকু করি। প্রতি ইউনিটে বেশ ভালই লাভ থাকে।<br />: ভালই তাহলে। এবারেও কি বিজনেস ট্রিপ ছিলো?<br /><br />– উহু, এটা ছিল এমনি বেড়াতে যাওয়া। এক সপ্তাহ ফ্লোরিডায় ছুটি কাটিয়ে এলাম।<br />: বেশ ভালোই তাহলে। প্লেন মনে হচ্ছে একটু পরেই ছাড়বে। আমাদের আগে যা লম্বা লাইন দেখতে পাচ্ছি! দেড় ঘন্টার ফ্লাইট হওয়ার কথা। এখন দেখি ছাড়তে ছাড়তেই দেড় ঘন্টার উপর হয়ে গেল ভিড়ের কারণে। বিমানবালা আসছে আবার, কিছু বলবে মনে হয়।<br /><br />– জরুরি কোনো কাজে ব্যস্ত না থাকলে একটা প্রশ্ন করতাম আপনাকে।<br />: না, ব্যস্ত নই। বলে ফেলো। আমার লাঠি ফেরত দেবেন?<br /><br />– না, তোমাকে না। তোমার পাশের ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করছিলাম।<br />: বলুন কী প্রয়োজন। কোনো সমস্যা হয়নি তো?<br /><br />– আপনি কি আপনার স্ত্রী সহ এসেছেন?<br />: জ্বী, আমার স্ত্রীও এই প্লেনেই আছেন।<br /><br />– আপনি চাইলে তাঁর সাথে বসতে পারেন। আমি সিট বদলে দিতে পারি আপনাদের সুবিধার্থে।<br />: সে-কষ্ট করতে হবে না। আমি বেশ আছি। ধন্যবাদ।<br /><br />– ঠিক আছে তাহলে। আপনার স্ত্রী বলছিলেন, তাই জিজ্ঞেস করছিলাম। আমি অন্য দিকে যাই তবে। প্রয়োজন পড়লে জানাবেন…<br />: আপনার স্ত্রী ডাকলেন, তবু গেলেন না?<br /><br />– আমার স্ত্রী আছে, তবে আমার ছেলে সহ। যে-ভদ্রমহিলার কথা বিমানবালা বলছিলো, তিনি আমার স্ত্রী নন। বিমানবালা ভুল করে আমাকে ডাকছিলো। ভদ্রমহিলা সুন্দরী বেশ। পাশে বসতে পারলে মন্দ হতো না, কী বলো?<br />: তাহলে তো মিস করে ফেললে। চলে যেতে। স্ত্রী জিজ্ঞেস করলে বলতে, বিমানবালার ভুল।<br /><br />– স্ত্রীর সামনে এই কাজ করা যায় নাকি? বাসায় গেলে তো আমাকে নাইনটি ডে’স, নো ইন্টারেস্ট প্রোগ্রামে ফেলে দেবে। ক’দিন পরেই ২৫ বছর পূর্তি।<br />: হাহ হাহ, মনে হয় না এই বয়সে এসে এমন ব্যাপারে সুযোগ নেবে তুমি।<br /><br />– তা আর বলতে। যাক, ভালো লাগলো তোমার সাথে কথা বলে। আমার কার্ড রাখো, কখনও দেখা হবে আবার।<br />: না হলেই ভালো। তোমার কাজের যা ধরন, তাতে দেখা না হওয়াই সুলক্ষণ।<br /><br />– আই’ল কাট ইউ আ ডিল, তবে আশা করি আসলেই দেখা হবে না আর।<br />: আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। আমাকে তো চিনবে না, তবু পারলে ওদিকটায় বেড়াতে যেয়ো, ভালো লাগবে। বিমানবালা এবারে কী বলে শুনে দেখি।<br /><br />– আমাদের সাথে এই ফ্লাইটে থাকবার জন্য অনেক ধন্যবাদ সবাইকে। আমার আতিথেয়তা যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে, তবে মন খুলে উপহার দিতে পারেন। আই ওনলি এক্সেপ্ট ডায়মন্ড নেকলেস, গোল্ড ব্রেইসলেট, অ্যান্ড রুবি রিংস। তোমাদের গল্প বলতে গিয়েছিলাম, কিন্তু দেখতে পেলাম তার আগেই অনেকে ঘুমিয়ে গেছো। তাই সে-চেষ্টা আর করলাম না। আই ডিড সিং ফর ইউ, দো। আই স্যাং সোলো। পারহ্যাপ্স সো লো দ্যাট ইউ ডিড নট হিয়ার মি। শুভ হোক তোমাদের বাকি দিন।Unknownnoreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-14251112.post-46409623054453977542009-07-13T12:24:00.000-04:002009-07-13T12:26:38.904-04:00মাইকেল জ্যাকসন আর নেইমাত্রই গত রাতে ঘুমানোর আগে দেখছিলাম মাইকেল জ্যাকসন ব্রিটেনে গাইবেন। জ্যাকসন-ফাইভের রিইউনিয়ন হবে, এরপর ৫০টি শো করবেন তিনি। খুব আফসোস হচ্ছিল ব্রিটেনে নেই দেখে। একই সাথে আনন্দিত হচ্ছিলাম অনেক, অনেক দিন পর এই মহাশিল্পীর গান-নাচ দেখার আশায়।<br /><br />মনে মনে ভাবছিলাম, এই ভঙ্গুর শরীরে মুনওয়াক সইবে তো? দেখা যাবে ঝাঁকি দিতে গিয়ে হাড়-গোড় খুলে রয়ে গেছে। এক টানা ৫০টি শো করা তো নবীন শিল্পীদের জন্যও অনেক ধকলের!<br /><br />বিবিসি-র ছবিতে তাকিয়ে ভাবছিলাম, এই জ্যাকসনের পেছনে সেই জ্যাকসনের ভিডিও ছাড়লে কেমন হবে। মনে মনে গালি দিচ্ছিলাম কালো থেকে সাদা হওয়ার জন্য। মানুষের সবকিছু বদলে গেলেও নাকি তার চোখগুলো একই রকম থেকে যায়। ছবি দেখে ভাবছিলাম, সেই দুরন্ত চোখগুলোও আর আগের মত নেই।<br /><br />সব ভাবনা আর কল্পনার সমাপ্তি হয়ে গেল। বিশ্বজুড়ে সব মিডিয়ায় প্রকাশ, মাইকেল জ্যাকসন আর নেই। আজ দুপুরের পর তিনি হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। খুব দ্রুত তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হলেও তাঁকে আর ডিপ-কোমা থেকে ফিরিয়ে আনা যায়নি।<br /><br />বহু গায়ক আসবেন, অনেক "এন্টারটেইনার" জন্ম নেবেন, কিন্তু দ্বিতীয় জ্যাকসন আসবে না। শত বিতর্ক আর হাস্যকর কার্যকলাপ সত্বেও মাইকেল জ্যাকসন চিরকাল "থ্রিলার" হয়েই রইবেন।<br /><br />গান গেয়ে বিখ্যাত হয়েছিলেন অনেকেই, কিন্তু মাইকেল জ্যাকসনের মত কেউই ছিলেন না। 'থ্রিলার' অ্যালবামের ৭টি গান টপচার্টের শীর্ষে ওঠার কথা সবাইই জানেন। মুনওয়াকের কথাও সবাই জানেন। একই কণ্ঠে নরম-কঠিন সব রকম গানের কথাও জানেন।<br /><br />এই সাফল্যটুকুও অনেকেই হয়তো পাবেন। যা পাবেন না, তা হল জ্যাকসনের বাধভাঙা জনপ্রিয়তা। জ্যাকসন সেই কৃষ্ণাঙ্গ শিল্পী যাঁর গান শ্বেতাঙ্গ দুনিয়াকেও কাঁপিয়েছিল। সেই শিল্পী যাঁর গান শোনার পাশাপাশি দেখে এবং অনুকরণ করে কেটেছে লক্ষ লক্ষ কিশোর-তরুণ-যুবকের দিন-রাত। সেই শিল্পী যাঁর গান শুনে আমার বাবা তার বিদেশি কনসালটেন্টের কাছ থেকে ক্যাসেট চেয়ে এনে ছেলেদের শুনিয়েছিলো। সেই শিল্পী, যাঁর নামে বের হওয়া গেম সেগা'য় খেলতে বেহায়ার মত পড়শির বাড়ি গিয়ে বসে থাকতাম।<br /><br />একটু পাগলাটে আর খামখেয়ালি না হলে বোধহয় প্রতিভাবানদের মানায় না। একটু তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে না গেলেও তাই। তাই বলে এতটাই দ্রুত? মাত্র ৫০ বছর বয়সে?Unknownnoreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-14251112.post-76519875865612145372009-07-13T12:19:00.000-04:002009-07-13T12:24:00.994-04:00প্রবাসের কথোপকথন - ১৭– হে, ইশ! আর কতক্ষণ উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘোরার পর আমাকে চিনবে?<br />: খুবই দুঃখিত, ডন। একটু বেখেয়াল ছিলাম। ভেবেছিলাম তুমি ঠিক সাড়ে এগারোটায়ই আসবে। সেজন্য বাইরের দিকেই নজর ছিল। খেয়াল করি নি যে এসে বসে আছো।<br /><br />– কোন ব্যাপার না। আমি মজা দেখছিলাম। আই ওয়াজ গোয়িং টু লেট ইউ ওয়ান্ডার অ্যাবাউট সাম মোর।<br />: দু’বছর পর আবার এলাম তো, এতদিনের চেনা লুই’স ক্যাফেও কেমন যেন অচেনা ঠেকছিল। শহরটা কত বদলে গেছে। এই সামনেই তো বিশাল একটা শপিং এরিয়া ছিল, এখন দেখি সব ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে।<br /><br />– হ্যাঁ, গত দু’বছরে অনেক দালান-কোঠা হয়েছে। শহরটা খাপছাড়া রকম আধুনিক হয়ে গেল চোখের পলকে। কারও পৌষ মাস, কারও সর্বনাশ। ক্যাটরিনার পর নিউ অর্লিয়েন্স তার সব জৌলুস হারালো, আর এদিকে ব্যাটন রুজে শুরু হল ঠিকাদারির ধুম।<br />: এটাই জগতের নিয়ম। তবে এবার দেখলাম গুস্তাভ অনেক গাছ-পালা ফেলে দিয়ে গেছে। আগে কত সবুজ ছিল ব্যাটন রুজ। কচু নামে একটা খাবার আছে আমাদের দেশে। লুইজিয়ানা বেড়াতে এলেই লোকে কচু তুলে নিয়ে যেতো। প্লেন থেকে তাকালে সবুজ সমুদ্র মনে হতো। এখন গাছ কমে গেছে অনেক। কিছু গেছে প্রকৃতির ঘূর্ণিঝড়ে, কিছু গেছে কংক্রিট মিক্সারের ঘূর্ণিতে।<br /><br />– এটাই স্বাভাবিক। কোথাও কমতি হলে কোথাও বাড়তি হবেই। তুমি তো কিছুটা বদলেছো। শুকিয়ে গেছো আগের চেয়ে, লুকস-ও একটু ভিন্ন।<br />: ভেতরের পরিবর্তনের তুলনায় বাইরেরটুকু কিছুই না। এই দু’বছরে অনেক কিছু শিখলাম। অনেক নাইভ ছিলাম আগে। বিশ্বাস করে ঠকতে ঠকতে টনক নড়েছে।<br /><br />– চিয়ার আপ। এটা কোন ব্যাপার না। ইউ আর নট ইভেন টুয়েন্টি ফাইভ।<br />: আই অ্যাম, অ্যাকচুয়ালি।<br /><br />– সো ইউ জাস্ট টার্ন্ড টুয়েন্টি ফাইভ…<br />: মেক দ্যাট টুয়েন্টি সিক্স অ্যান্ড আ হাফ। এনিওয়ে, ইউ ওয়্যার সেইং…<br /><br />– আমার এই শিক্ষাটা হয়েছিল ৪৭ বছর বয়সে। আমার অধীনস্থ লোকজন মিলে ভোট দিয়ে আমাকে বাদ দিয়ে দিলো। আমি তখন এলএসইউ-তে কাজ করি। কী এক কারণে টাকা কিছুটা কমে গেছে ডিপার্টমেন্টে। ওরা সবাই মিলে ঠিক করলো যে আমাকে বাদ দিয়ে আমার বেতনের টাকাটা সবাই মিলে ভাগ করে নেবে।<br />: এটা তো এমন ঘটনার জন্য খুবই বাজে সময়। ওই বয়সে মানুষ সংসার গুছিয়ে বসে, জীবনের শেষ অংশটার জন্য প্রস্তুতি নেয়।<br /><br />– আমার দুই মেয়ের তখন ভার্সিটি শুরু করার সময়। আচমকা এক সকালে শুনি আমার চাকরি নেই। আমি আর আমার স্ত্রী তখন একেবারেই হতভম্ব। গতকাল বিকেলে যারা আমার সাথে এক সাথে বাজার করলো, লাঞ্চ খেলো, আমার মেয়েদের সাথে আহ্লাদ করলো, তারা আমাকে সকালে বলে যে আমার চাকরি নেই। উই আর স্যরি, ডন, বাট দেয়ার ইজ সামথিং উই গটা ডু।<br />: দুঃখজনক, খুবই দুঃখজনক। কী বলবো বুঝতে পারছি না।<br /><br />– দুঃখের কিছু নেই। কিছু লোক খুব অমানবিক আচরণ করেছিল আমার সাথে। যা করেছে, শুধু তা নিয়েই রাগ ছিলো না। ওরা আমার চোখের দিকে তাকাচ্ছিলো না পর্যন্ত। আই ওয়াজ অ্যাংরি, আই ওয়াজ ভেরি অ্যাংরি।<br />: তোমার রাগ সম্পর্কে আমার ধারণা আছে। আড়াই বছর তোমার অধীনে কাজ করেছি, খুব একটা কম সময় তো না।<br /><br />– আরে নাহ, তোমার সাথে তো আমি রাগ করিনি কোনদিন। অন্যদের উপর করেছি অবশ্য। তবে ঐ লোককে আমি একেবারে ধরাশায়ী করে ফেলতে পারতাম। দেয়ার উড বি টু ব্লোজ। ওয়ান ইজ মে হিটিং হিম, দি আদার ইজ হিম হিটিং দ্য ফ্লোর।<br />: এই বয়সেও তোমার যা শরীর, তুমি অনায়াসেই পারতে, সে-নিয়ে আমার কোন সন্দেহ নেই।<br /><br />– আমি এখনও নিয়ম করে জিম-এ যাই। তাছাড়া জীবনভর পরিশ্রম তো আছেই। আমার শুরুটা কিন্তু খুব অনাড়ম্বর। ওকলাহোমার একটা পাড়াগাঁয়ে আমার জন্ম। বাবার সাথে কাজে হাত লাগাতে হতো। ছেলেবেলায় গরু চরিয়েছি, কাঠ কেটেছি। সেখান থেকে লেখাপড়া করে উঠে এসেছি এতদূর।<br />: আমার মত ফার্স্ট জেনারেশন ইমিগ্র্যান্টদের জন্য এই কাহিনীগুলো খুব প্রেরণাদায়ক। সবাই মনে করে এখানে ডলার গাছে ধরে, নয়তো যুদ্ধ করে এত উন্নতি হয়েছে। একটা দেশ গড়তে যে তোমার মত কত শত মানুষ প্রয়োজন, সেটা কেউ বোঝে না।<br /><br />– সেই লোকগুলো এখন আর লুইজিয়ানায় নেই। একজন ওকলাহোমায়ই আছে বলে জানি। আমি তখন বলেছিলাম যে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় খুব ভাল কিছু বন্ধু আছে। আমাকে বাদ দেবে দাও, আমি শুধু কিছু ফোন কল করবো এরপর। করেছিলামও। এই অন্যায়ের জন্য আমি এল-এস-ইউ’কে স্যু করতে পারতাম। আই কুড ওউন দ্য ম্যাসকট, কিন্তু আমারই এক কাছের বন্ধুকে পাঠালো আমার কাছে। অনুরোধ করলো যেন আমি আইনী পথে না যাই, ওরা ব্যাপারটা নিজের মত মীমাংসা করবে।<br />: তাহলে তো বেশ ভাল ভাবেই উৎরে গেলে শেষ পর্যন্ত। ঝামেলা আরও অনেক দূর গড়াতে পারতো।<br /><br />– তা তো পারতো অবশ্যই। তুমি বলেছিলে যে তুমি অ্যাকাডেমিয়ায় থাকার চিন্তা করছিলে, তাই বললাম। দু’টা কথা মনে রাখবে সব সময়। প্রথমত, এমন কিছু পড়বে যাতে সত্যিই আগ্রহ পাও। আদারওয়াইজ ইউ ও’ন্ট হ্যাভ আ রিজন টু ওয়েইক আপ এভরি মর্নিং। দ্বিতীয়ত, অ্যাকাডেমিয়ায় কাউকে বিশ্বাস করবে না। আমরা আগে অনেক দান-খয়রাত করতাম। অথচ ১০ বছর পরও দেখি, পিপল ইউ আর হ্যাভিং কফি উইথ ও ইউ মানি! মানুষ খুবই বিচিত্র।<br />: দুটোই আমি খুব মূল্য দিয়ে শিখেছি। এই যে রিসেশন, চাকরির বাজারে খরা, এরপরও টিকে আছি নিজের আগ্রহের কিছু নিয়ে পড়েছি বলে। হয়তো এই লাইনে টাকা-পয়সা পাইনি, তবুও মনে শান্তি আছে। দেখি, পিএইচডি’টা ঠিক মত সারতে পারি কিনা। আর অ্যাকাডেমিয়া কেন, কোন কিছুতেই কাউকে আর অন্ধভাবে বিশ্বাস করি না। আগে আগ বাড়িয়ে প্রতিটা মানুষের উপর কিছু বিশ্বাসের বিনিয়োগ করতাম, দেখতাম সেই বিশ্বাসের মর্যাদা কীভাবে দেয়। কেউ মর্যাদা না দিলে তাকে আর কাছের মানুষ মনে করতাম না। এখন কেউ বিশ্বাস অর্জন করে নিতে পারলে নিক, আমি সেধে বিশ্বাস করে ঠকতে নারাজ। কাছের মানুষের বিশ্বাসঘাতকতা খুব খারাপ।<br /><br />– এত হতাশাবাদী হয়ে গেলে কবে তুমি? নাহয় কিছুটা সময় নিজের ইচ্ছে মত যায়নি, তাই বলে এভাবে দেখতে হবে কেন?<br />: এই যে গত দু’বছর কেমন এলেবেলে কাটলো। গ্র্যাজুয়েট স্কুলে গিয়ে যেন এতিমখানায় পড়লাম। অ্যাডভাইজার জুটলো যা-গরু-চড়ে-খা জাতীয়।<br /><br />– এটা কোন ব্যাপার না। ইট ওয়াজ দেয়ার লস, নট ইওরস। সময় হলে দেখিয়ে দিও। শিক্ষা ব্যাপারটা এখন ব্যবসা হয়ে গেছে। নির্দিষ্ট করে বললে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে। তুমি যেমন গুরু-শিষ্য সম্পর্ক আশা করছিলে, সে-ধরনের অ্যাপ্রেন্টিসশিপ আর নেই। শুধুমাত্র টিয়ার-থ্রি’র কিছু স্কুলে গেলে এমনটা পাবে। সেখানে কামড়া-কামড়ি করে ফান্ড আনার চেয়ে নিজের ভাইকে শেখানোটা জরুরি বেশি। তবে সেটা নিয়ে তো এত বিরক্ত হলে চলবে না। নিজের কাজ করে যেতে হবে।<br />: নট দ্যাট আই অ্যাম প্রাউড অফ ইট, কিন্তু এই সিনিজম’টা এখন অস্তিত্বের অংশ হয়ে গেছে।<br /><br />– হোল্ড অন আ মিনিট। টাইম-আউট। মাসে কয় বেলা খাও তুমি?<br />: দিনে তিন বেলা করে ত্রিশ দিনে ৯০ বেলা বলতে পারো।<br /><br />– টুকটাক স্ন্যাক খাও না?<br />: অবশ্যই, তা তো থাকেই কিছু না কিছু।<br /><br />– তবুও কি তুমি কখনও না কখনও দিস ইজ দ্য ওয়ার্স্ট মিল অফ মাই লাইফ বলো নি?<br />: সে তো হরদমই বলি।<br /><br />– ওয়ান মিল আউট অফ অ্যাবাউট আ হান্ড্রেড ইজ ব্যাড, অ্যান্ড ইউ আর স্টিল কমপ্লেইনিং! এটা কি ঠিক হল? শ’এ একটা তো ভালো-মন্দ হতেই পারে। তুমি ৯০ বছর বাঁচবে জীবনে। নাহয় সেই লম্বা জীবনের দু’টা বছর একটু খারাপই গেল। এটা তো জীবনেরই অংশ। এটাকে এভাবে দেখার কিছু নেই। বাকি ৮৮ বছরের মধ্যে থেকে সেরাটা বের করে আনো।<br />: ইউ শিওর নো হাউ টু লিফট আ ম্যান’স স্পিরিট, ডন। কথাটা মনে থাকবে। এভাবে ভাবিনি কখনও। তোমার নাতি-নাতনিরা কেমন আছে? অনেক বড় হয়ে গেছে নিশ্চয়ই। মাত্রই দু’বছর পর এলাম, তবু কোনো পিচ্চিকে চিনতে পারি না আর। সবাই এক মাথা পরিমাণ বড় হয়ে গেছে।<br /><br />– আমার নাতনি ইসাবেলা’র কথা তোমার সবচেয়ে বেশি মনে থাকার কথা। ওর বয়স এখন পাঁচ বছর। প্রি-ম্যাচিউর ছিল, তাই কোমড়ের হাড় বাড়েনি, জানোই তো। ডাক্তাররা ওর উপর অনেক গুলো অপারেশন করবে সামনে। হাড়গুলো জায়গা মত বসাবে।<br />: এতটুকু বয়সে কী কষ্ট। ভাবলেই গা শিউরে উঠে।<br /><br />– ওর কিন্তু তেমন বিকার নেই। ও টাবের উপর আরাম করে বসে থাকে। দুই হাত মাথার পেছনে দিয়ে শুয়ে শুয়ে পা দুলায়। দেখে বোঝার উপায় নেই যে ওর এত বড় সমস্যা আছে শরীরে। ওর বাবা খুবই ধারালো বুদ্ধি রাখে। ডাক্তারদের জেরা করে করে বের করেছে কী করতে যায়। একটা পর্যায়ে দেখে যে ডাক্তারের নিজেরই স্পষ্ট ধারণা নেই কী করবে, জটিলতা হলে কীভাবে সামলাবে, ইত্যাদি নিয়ে। হি ইজ ওয়েইটিং ফর অ্যানাদার ওপিনিয়ন নাউ।<br />: বোঝো কীভাবে এটা? এই যে, লোকজন কিছু না জেনেও মুখে মুখে হাতি-ঘোড়া মেরে ফেলে, এদের ধরো কীভাবে তুমি?<br /><br />– যা বলছে, সেটার চেয়ে যা বলেনি সেটার উপর মনোযোগ দেবে বেশি। তোমার সাথে যখন কথা বলতে আসবে, তখন দে আর দ্য ওয়ানস ইন কন্ট্রোল অফ দ্য কনভার্সেশন। এই ব্যাপারটা থেকে বের হয়ে আসবে। খুব মনোযোগ দিয়ে শুনবে কী বলছে, এরপর কিছু একটা উছিলা দিয়ে সরে যাবে। এক বেলা সময় নেবে। ভেবে দেখবে কী কী বলেনি তোমাকে। পরের বেলায় যখন কথা হবে, তখন ইউ উইল বি দ্য ওয়ান ইন কন্ট্রোল অফ দ্য কনভার্সেশন।<br />: রিডিং বিটউইন দ্য লাইনস। শিখতে পারলাম না জীবনে।<br /><br />– অবশ্যই শিখবে। সময়ের সাথেই হবে। বয়স তো কম হলো না আমার। এখন এরকম কোন ফাঁক-ফোকর পেলেই আমি তার জন্য ফাঁদ পেতে বসে থাকি। একটা ‘উম’ দিয়ে বাক্য শুরু করলেই চেপে ধরি।<br />: এটা কেমন কথা আবার?<br /><br />– ইফ ইউ স্টার্ট আ সেন্টেন্স উইথ ‘উম’, দেন ইদার ইউ ডোন্ট নো হোয়াট ইউ আর টকিং অ্যাবাউট, অর ইউ আর জাস্ট লাইং।<br />: এটা খেয়াল রাখতে হবে। আমার তো বাক্যের শুরুতে উম-আম করার স্বভাব অনেক পুরনো।<br /><br />– বিলটা এদিকে দিও। মাই সান ইজ স্টিল আ স্টুডেন্ট, হি কান্ট পে।<br />: আমি জীবনের একেবারে শেষে গিয়ে একটা বই লিখবো, বলেছিলাম তোমাকে? সেখানে আমার দেখা কিছু অসামান্য মানুষের কথা লেখা থাকবে। তোমার জন্য একটা চ্যাপ্টার থাকবে সেখানে।<br /><br />– এভাবে ভাবার কোন দরকার নেই। আমি ১১৬ বছর বাঁচবো। তোমাকে যেন ঠিকঠাক দেখি ততদিন। আমি এখন লেখালেখি করছি কোস্টাল এরিয়াগুলো নিয়ে। আজ থেকে ৬০ বছর আগে এই সমুদ্রতীর কেমন ছিল তা নিয়ে সাক্ষাৎকার নিচ্ছি সবার। তাঁদের জীবদ্দশায় কী পরিবর্তনগুলো এসেছে, তা নথিবদ্ধ করছি। পাশাপাশি সবাইকে একটা বাড়তি প্রশ্ন করছি। হোয়াট ডিড ইওর গ্র্যান্ড ফাদার টেল ইউ হোয়েন ইউ ওয়্যার ইয়াং।<br />: অপেক্ষায় থাকলাম বই বের হওয়ার। ছবি তুলে রাখি তোমার সাথে একটা। স্মৃতিগুলো আকার পাবে।<br /><br />– অবশ্যই। ঐ মেয়েটাকে বলি ছবি তুলে দিতে। ক্যান ইউ টেক আ পিকচার অফ আস, প্লিজ। ইউ গেট এক্সট্রা পয়েন্টস ফর ফিগারিং আউট হু ইজ দ্য ওল্ডেস্ট!Unknownnoreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-14251112.post-86816886282840797232009-05-06T22:50:00.001-04:002009-05-06T22:50:54.148-04:00প্রবাসের কথোপকথন - ১৬– কালকে কোরবানির মাংস নিয়ে যেও।<br />: হু, আমাকে না দিলে কিন্তু গরীবের হক আদায় হবে না।<br /><br />– থাপ্পড় খাবি। আত্মীয়ের ভাগ হতে পারে না? ফালতু কথা শুধু।<br />: ঐ হল। এবার কোথায় দিলেন কোরবানি?<br /><br />– ঘন্টা দুয়েকের পথ হবে এখান থেকে। যাওয়া-আসা একটা ঝক্কি। একবার গরু বাছাই করতে যাও, একবার টাকা দিতে যাও, একবার মাংস আনতে যাও। কোরবানির মাংস, তাই প্রত্যেকেরই যেতে হল।<br />: কেষ্ট পেতে একটু তো কষ্ট করতেই হবে, কিন্তু তাই বলে সবার যেতে হবে কেন?<br /><br />– মাস্লা আছে কী যেন একটা। কোরবানির মাংস নাকি যারটা তার আনতে হবে। নাহলে তো একজন গিয়েই সব নিয়ে আসতে পারতো।<br />: ব্যাপার না। আমার কাছে সব সমান। খাওয়া পেলেই হল। কারো মাফ নেই, সবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে খেয়ে আসবো নে।<br /><br />– এবারে বলেছি কিছু মাংস আলাদা করে রাখতে। সবার ভাগ থেকে একটু একটু করে। সেই মাংস দিয়েই বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করা যাবে।<br />: বুদ্ধি খারাপ না। আপনাদের ভাগেই তো রান্না পড়বে। আফসোস অন্য জায়গায়। শুধু তরতাজা রান্না খাচ্ছি। দেশের মত শুকনো, ঝুরঝুরা মাংস খাওয়া হয় না আজকে ঠিক ছয় বছর হয়।<br /><br />– হ্যাঁ, এই ছোট ছোট ব্যাপারগুলোই প্রবাস জীবনকে কষ্টকর করে দেয়। পত্রিকায় দেখলাম, এই দুর্মূল্যের বাজারেও লোকে অনেকগুলো করে গরু কোরবানি দিচ্ছে। কারও কারও গরু তো উটের সমান বড়। অথচ গ্রামে গিয়ে দেখেছিলাম, গরু নেই দেখে মানুষে হাল টানছে।<br />: এটাই তো সমস্যা। ল’ আর স্পিরিট অফ ল’-এর মধ্যে পার্থক্যটুকু আমরা বুঝি না। আমরা ধর্মকে একেবারে আক্ষরিক ভাবে নেই, কেউ ধর্মের নির্যাসটুকু বুঝতে চাই না। ওহির মর্ম ঠিক মত বুঝলে কোরবানির গরু কিনে মানুষ গ্রামের গরীব কৃষকদের দিতো। বদলি হজ্জ হয়, বদলি কোরবানি কেন হতে পারবে না?<br /><br />– সবার মনে শুধু আক্ষরিক চিন্তা, বুঝলে? সীমিত কিছু অক্ষর লেখা আছে, সেগুলো মুখস্ত করে বসে আছে অর্ধশিক্ষিত কিছু মোল্লা। আমরা শিক্ষিত লোকেরাও তাদেরই কাছে যাই উপদেশ নিতে।<br />: এখানেই সমস্যা। ইসলাম ধর্ম নিয়ে আমরা গর্ব করে বলি যে এটা সবচেয়ে আধুনিক ধর্ম। সেই ৫ম শতাব্দিতে যেই ইসলাম নাজিল হয়েছিল, সেটা শিক্ষা আর অনুশাসনের দিক থেকে ১৫শ সালের জন্যও আধুনিক ছিল। দাসত্বের যুগে মেয়েদের সম্পত্তির অধিকার দেওয়া হয়েছিল, সব রকম ধর্মমতের স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছিল। সময়ের সাথে সাথে আমাদের উচিত ছিল এই আধুনিকতা, এই অধিকারবোধকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।<br /><br />– বলা হয় ইসলাম একটা পরিপূর্ণ জীবনবিধি। এখানেই ঝামেলাটা। এই সুবিধা নিয়ে নিজের মত করে সবাই ধর্মের ব্যাখ্যা করে, নিজের জীবনধারা চাপিয়ে দেয় অন্যের উপর। শুধু তাই না, খুব তীব্র এক ধরণের চরমপন্থা ঢুকে যায় মনের মধ্যে। আমিই ঠিক, আমার মত অনুসরণ করলেই স্বর্গে যাওয়া যাবে, অন্যথায় নরকবাস – এমন একটা চিন্তা মানুষের মনে স্থান করে নেয়।<br />: পরিপূর্ণ জীবনচরিত বলে প্রচার করাটাই সমস্যা। ধর্মে তো ধর্মের শিক্ষা অনুযায়ী কালের আলোকে নতুন বিধি তৈরির সুযোগও আছে। এই দিকটায় ফতোয়াবাজদের একচ্ছত্র আধিপত্য হয়ে গেছে। কেউ বলে না যে ধর্মের অনুসারী হিসেবে, সমাজের অংশ হিসেবে আমাদেরও অধিকার আছে ধর্মের আধুনিকায়নে।<br /><br />– আরেকটা ঝামেলা হল রাজনীতি ঢুকে যাওয়া। নিজের ধর্মকে ভালবাসা মানেই অন্য ধর্মকে ঘৃণা করা নয়। এটা ভুলে যাই আমরা। রাজনীতির স্বার্থে এটা অনেক ভাবে অপব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে হিন্দু ধর্মের বেলায় এই আবেগ কাজ করে বেশি। আমরা যতই ভুলে থাকার চেষ্টা করি না কেন, বাস্তব এটাই যে আমাদের সংস্কৃতিতে মিল আছে। ধর্মের অজুহাতে আমরা সংস্কৃতিকে আঘাত করি।<br />: কথাটা প্রায়ই বলি, বাঙালি স্বর্গে যাওয়ার জন্য আরবি ভাষায় নাম রাখে। অন্য দেশের মুসলমানেরাও ইসলামিক নাম রাখে, কিন্তু অন্তত নিজের ভাষা-সংস্কৃতির সাথে মিলিয়ে নেয় কোন ভাবে। আমাদের তো ওসবের বালাই নেই।<br /><br />– একেবারে ওভাবেও দেখার কিছু নেই। ধর্ম অনেকের কাছে একটা সংস্কৃতি, সেটাও মনে রাখতে হবে।<br />: ধর্ম হল ধর্ম। বিশ্বাস, পরকাল, পাপ-পুণ্য, এগুলোর ভেতর সংস্কৃতি ঢোকানো ঠিক না।<br /><br />– সংস্কৃতি কী তাহলে? আমরা যেভাবে খাই, ঘুমাই, চিন্তা করি, কথা বলি, সেগুলোই তো? সেখানে কি ধর্মের প্রভাব নেই? ধর্মকে কেউ সংস্কৃতি হিসেবে নিতেই তো পারে, কারণ ধর্মেও নির্দিষ্ট কিছু ধরন-ধারণ আছে এগুলো নিয়ে।<br />: চাইলেই করতে পারে, কিন্তু করতে হবে কেন? নিজের শেকড়ের সাথে সম্পর্ক নেই, এমন কিছু কখনও স্থিতিশীল, কার্যকর হতে পারে না।<br /><br />– সোশাল ডারউইনিজম হয়ে গেল না? একই রকম তো চিন্তা হিটলার করেছিল। তাকে দোষ দেওয়া যায় কীভাবে তাহলে? সব সংস্কৃতির সমান অধিকার দেওয়া হলে, এবং মানুষকে স্বাধীন ভাবে নির্বাচন ও অনুসরণের অধিকার দিলে কিন্তু ধর্মের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। কেউ স্বাধীন ভাবে ধর্মের পথে যেতে চাইলে, তাকে সংস্কৃতি হিসেবে নিতে চাইলে দিতে হবে।<br />: ডারউইনিজম আসে অস্তিত্বের সংকটের প্রশ্ন এলে। নিজের দেশ, নিজের ভাষাকে সবাই শ্রেষ্ঠ ভাবে। নিজের মতাদর্শ সবাই প্রচার করতে চায়। এতে দোষের কিছুই নেই। এতে হারাবার বা হারিয়ে যাবারও কিছু নেই। কিন্তু ধর্মকে এর ভেতর ঢুকিয়ে ফেললে এলিমেন্ট অফ ফিয়ার ঢুকে যায়। শাস্তির ভয় চলে আসে। সংস্কৃতি তো ভালবাসার অভ্যস্ততা, ভয়ে ত্রস্ততা না।<br /><br />– তুমি কি অস্তিত্ব হারানোর ভয়েই সংস্কৃতির কথা বলছো না? বাংলাকে ছড়িয়ে দেওয়ার আর্জির পেছনে কি হারানোর ভয় নেই?<br />: আছে, তবে সেটা অস্তিত্ব হারানোর ভয় না। আমিত্ব হারানোর ভয়ে আমি সংস্কৃতিকে আঁকড়ে ধরার কথা বলছি। স্বাধীন ভাবে নির্বাচন করার সুযোগ নিশ্চিত না করলে কোন সংস্কৃতি কালোত্তীর্ণ হয় না। সেজন্যই সীমানা রুদ্ধ করে ভিন্ভাষা দূরে রাখার চেয়ে নিজের ভাষাকে শক্তিশালী করা জরুরী। ধর্ম তো এই সুযোগ দেয় না। এখানে মানলে বেহেশত, না মানলে দোযখ।<br /><br />– তবে কি ধর্ম অচল?<br />: মোটেই না। আমার ভাবতে ভাল লাগে যে আমাকে তৈরি করা হয়েছে কোন একটি মহৎ উদ্দেশ্য সামনে রেখে। দুর্বল মুহূর্তে আমার ভাবতে ভাল লাগে যে আমার একটি আশ্রয় আছে। ভাবতে ভাল লাগে যে আমার অনুচ্চারিত আর্তিগুলো কেউ শুনছে অন্তরাল থেকে। ধর্ম না থাকলে এই শান্তিটুকু পেতাম না। তবে এটা আমার বিশ্বাস, আমার সংস্কৃতি না। আমার সংস্কৃতি ধর্ম দিয়ে প্রভাবিত হতে পারে, কিন্তু নিয়ন্ত্রিত হতে পারে না। এর পেছনে বড় কারণ হল, ধর্ম নিজেই তো আজকে আর স্রষ্টার নিয়ন্ত্রণে নেই!<br /><br />– একটা ব্যাপার জানো, আমরা মুসলমানেরাও কিন্তু পৌত্তলিক। এই দিক থেকে ভণ্ডামিটা খুব কষ্ট দেয় আমাকে।<br />: হাজারে আসওয়াদে চুমু খাওয়া কি পৌত্তলিকতার পর্যায়ে পড়ে? অবশ্য, চাইলে সেভাবে দেখা যেতেও পারে।<br /><br />– না, আমি সেই অর্থে বলছি না। আমরা বলি যে খোদা নিরাকার, সর্বময়। তাঁর কোন অঙ্গ নেই, চাহিদা নেই। আমরা বলি যে আমাদের খোদা কোন মূর্তির গণ্ডিতে আবদ্ধ না। অথচ তাঁকে আমরা ঠিকই আটকে ফেলি বিশেষণের গণ্ডিতে।<br />: বিশেষণ তো বর্ণনার জন্য, এর ভেতর বন্দিত্ব আসবে কেন?<br /><br />– ভেবে দেখো, আমরা বলি যে খোদা দয়ালু, ন্যায়বান, সর্বদ্রষ্টা, ইত্যাদি। এভাবে কিন্তু মানবসৃষ্ট বিশেষণের মধ্যেই তাঁকে বন্দী করে ফেলছি আমরা। গণেশের মত শুড় নেই হয়তো, কিন্তু তাই বলে আমাদের খোদাও খুব একটা মুক্ত না। একটি শিশু কি তার চেনা বিশেষণের বাইরে খোদাকে কল্পনা করতে পারবে? খোদার সর্বময়তা কি সে কোনদিন উপলব্ধি করতে পারবে?<br />: ভেবে দেখার মত। অবয়ব না দিয়েও উপাসনা হয়ে যাচ্ছে ঠিকই। হয়তো একারণেই ধর্মের বক্তব্যটুকু হারিয়ে যায় এত সহজে।<br /><br />– এই সীমিত সংজ্ঞায়নের পাকে পড়েই কিন্তু আমরা ভয় থেকে স্রষ্টার আরাধনা করি। অথচ উচিত ছিল হিতাহিত জ্ঞান থেকে আরাধনা করা। এটা মনকে অনেক মুক্ত করতো, সহনশীল করতো।<br />: ঝামেলাটা অন্য জায়গায়। আমরা খোদাকে অনেক কিছুই বলি। লিঙ্গ নেই বলেও তাঁকে পুরুষ হিসেবেই সম্বোধন করি, আবার ম্যারাডোনার গোলকে আলঙ্করিক ভাবে ঈশ্বরের হাত বললে এর মধ্যে বিধর্মিতা খুঁজি। মোনাফেকির ভয়ে বলি খোদার নামের সাথে জড়িয়ে কোন প্রকার ভৌত কথা বলতে না। সবকিছুই করি আমরা, শুধু খোদাকে বুদ্ধিমান বলি না। এত জটিল পৃথিবী যিনি বানালেন, তিনি যেখানেই থাকুন না কেন, হি মাস্ট বি ড্যাম স্মার্ট। আমরা শিক্ষিত লোকেরা ভুলে যাই যে স্রষ্টা আমাদের চেয়েও বুদ্ধিমান। তাঁকে তাই ডাকা উচিত বুদ্ধি ব্যবহার করেই। উলটো আমরা বিশ্বাসের গতি-জড়তায় ভেসে গিয়ে নির্বোধের মত কিছু মুখস্ত ইবাদত করি।<br /><br />– কাইনেটিক ইনারশিয়া অফ ফেইথ… নিউটন, ব্রুনো, ডারউইনরা কিন্তু স্রষ্টায় বিশ্বাসী ছিলেন। তাঁরা নিজের ক্ষুদ্রতা দিয়ে ঈশ্বরের মহত্ব প্রকাশ করতেন। দেয়ার ইজ আ রিজন হোয়াই দে আর গ্রেট, অ্যান্ড আই জাস্ট ড্রাইভ আ কার।Unknownnoreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-14251112.post-80759185756276174322009-04-22T13:09:00.001-04:002009-04-22T13:11:38.135-04:00গানবন্দী জীবনঃ আমি বাংলায় গান গাই<span style="font-weight: bold;">৯. আমি বাংলায় গান গাই</span><br /><br />হারানোর আগ পর্যন্ত নাকি মানুষ তার সবচেয়ে বড় সম্পদকে চেনে না। দেশপ্রেম তেমনই ব্যাপার। দেশ ছাড়ার আগ পর্যন্ত খুব কম মানুষই নিজের দেশ, আলো-হাওয়া, মাটি, আর মানুষকে প্রাপ্য সম্মান ও ভালবাসা দিতে পারে। ইংরেজিতে ‘টেকেন ফর গ্রান্টেড’ যাকে বলে, তেমনই এক অনুভূতি কাজ করে সবার মাঝে দেশ নিয়ে। বাইরে এলে সবকিছু মেলে, শুধু আপনজনকে অবহেলা করার এই সুযোগটুকু বাদে। সারা পৃথিবীর সাথে ভদ্রতার প্রতিমূর্তি হলেও আমরা যেমন মায়ের কাছে দুর্বিনিত, আমাদের কাছে দেশও তেমনটাই অবহেলিত।<br /><br />দেশ মানে স্রেফ একটি ভূখণ্ড না, দেশের অর্থ অনেক বড়। বাঙালিরা মুষ্টিমেয় সেই জাতিগুলোর একটি, যাদের স্বাধিকার আন্দোলন উৎসারিত হয়েছিল নিজস্ব সংস্কৃতিকে তুলে ধরবার মানস থেকে। বাঙালি সংস্কৃতি তাই আমাদের কাছে শুধু ভাবের আদান-প্রদানের মাধ্যম নয়, পরিচয়ের উৎসও। ঠিক-ভুল যেমনটাই হোক না কেন, স্বাধীনতা আন্দোলনের আগে ধর্মের ভিত্তিতে দেশবিভাগের আন্দোলনও ছিল পরিচয়ের সাথে জড়িত। ফলশ্রুতিতে এই দুই পরিচয়ই কম-বেশি রয়ে গেছে আমাদের মাঝে।<br /><br />দেশে থাকার সময়টুকুতে আমরা নিজের মন ও মতের মানুষের সাথে মিশে থাকি। নেতৃস্থানীয় কোন অবস্থায় আমরা থাকি না। হাওয়া যেদিকে বয়, সেদিকেই পাল তুলি। কোন বেলায় আশরাফুলের অল্প রানে আউট হওয়া নিয়ে কথা বলি, কোনদিন সংসদে হাসিনা-খালেদার ঝগড়া নিয়ে কথা বলি, কোনদিন হয়তো নতুন কোন নাটকে দেখানো কিম্ভূতকিমাকার ফ্যাশন নিয়ে। বাইরে এলে মূলধারার এই নির্বোধ স্বাভাবিকতা থাকে না। না চাইলেও নেতা গোছের কিছু হয়ে যেতে হয়।<br /><br />প্রবাসে এলে আমাদের কাজকর্ম দিয়েই যার যার সংস্কৃতির স্বরূপ নিরূপিত হয়। বিশাল পৃথিবীতে আমরা প্রতিটি প্রবাসী যেন ডেকচি থেকে বের করে টিপেটুপে দেখা ভাত। অন্যের ভুলের জন্যও আধাসেদ্ধ থাকার সুযোগ নেই, কারণ একটু এদিক-ওদিক হলেই দোষ পড়বে বাঙালির, ভারতবর্ষের, কিংবা মুসলমানদের। নেতাকে যেমন নিজের আচরণ দিয়ে সবাইকে পথ দেখাতে হয়, তেমনি প্রতিটি প্রবাসীকেও দেশ-ভাষা-ধর্মের স্বার্থে সমঝে চলতে হয়।<br /><br />এই বাস্তবতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার মত ঘটনা হয়েছিল দু’বার। প্রথমবার মাত্র আমেরিকা আসার পরপর, লুইজিয়ানায়। দুপুরে ক্লাস সেরে ঘরে বসে আছি। হঠাৎ ধপধপে সাদা শার্ট, কালো প্যান্ট, আর হাতে বাইসাইকেল। নাম বলার পর জানতে চাইলো কোন ভাষার শব্দ। বাংলা বলতেই ধরিয়ে দিল প্রভু যীশুর বাণি – বাংলায়। আমার জন্য, আমার ভাষার জন্য আলাদা করে লেখা আসে সবকিছু। বাঙালি পরিচয়ে পরিচিত হতেই আমি স্বচ্ছন্দ বেশি, তাই এই শ্লাঘা অস্বাভাবিক ছিল না। তুলনায় দ্বিতীয় ঘটনাটি তাৎপর্যপূর্ণ বেশি।<br /><br />রমজান এলেই বাঙালি সমাজ মসজিদ-ভিত্তিক হয়ে যায়। নেকির প্রশ্নে নির্মোহ হয়ে রোজা না রেখে থাকা যায়, কিন্তু বিনামূল্যে ইফতারের ব্যাপারে প্রশ্নে আপোষ নেই। বিকেল হলেই তাই ভিড় করি মসজিদে। মুসলমান ব্রাদারহুডের জয়জয়াকার চারিদিকে। সাধারণত স্টুডেন্ট ইউনিয়নে মুসলিম স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন থেকে ইফতার দেওয়া হয়। গত রোজায় সামনে পড়লো এমন এক ভ্রাতা। জানালেন, তিনি পাকিস্তানি। কথাপ্রসঙ্গে জানলেন, আমি বাংলাদেশের। চূড়ান্ত ধৃষ্টতা দেখিয়ে সেই লোক মিষ্টি হেসে বলে বললো, তুমিও তো তাহলে পাকিস্তানিই। উদ্দেশ্য, আমাকে ভারতীয়দের থেকে আলাদা করে তার সাচ্চা ব্রাদারের সম্মান দেওয়া। বিরক্ত হয়ে বললাম, যদি আমি পূর্বপরিচয়ের সূত্রেই পরিচিত হব, তবে ব্রিটিশ না হয়ে পাকিস্তানি কেন? তুমি মুড়ি দিয়ে ইফতার খাও, আমি গেলাম।<br /><br />প্রবাসে এসে আচমকা সংখ্যালঘু হয়ে যাওয়াটা একটি বিরাট ধাক্কা দেয় অনেককে। এই ধাক্কা সামলানোর জন্য মানুষ পরিচয় খোঁজে, নিজের একটি স্থান খোঁজে। আমিত্বের ধারণাটির পেছনে স্বকীয়তা যতটা, তার চেয়ে বেশি কাজ করে প্রশ্নাতীত অধিকার। পরিচয় খুঁজবার সময় এলে মানুষ তেমনই কিছু খোঁজে। ধর্ম ও সংস্কৃতি উভয়ই তেমন সুবিধা দেয় মানুষকে। আমি বাঙালি ও মুসলমান, আমার এই দু’টি পরিচয় নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারবে না, কোন ধরনের সামাজিক বাস্তবতা আমার এই পরিচয়গুলোকে হেয় কিংবা খাটো করতে পারবে না।<br /><br />এ-পর্যায়ে প্রশ্ন জাগে, সংস্কৃতি বা ভাষার পরিচয় বাদ দিয়ে মানুষ ধর্মের দিকে ঝোঁকে কেন। উত্তর খুব সহজ। প্রচার-প্রসারের তুলনামূলক সুবিধা। ভাষার ভিত্তিতে যে-পরিচয়, তা প্রদর্শন করতে হলে গান, আবৃত্তি, নাচ, কিংবা অন্য কোন ধরনের সুকুমারবৃত্তির অধিকারী হতে হবে। ধর্মের ক্ষেত্রে ব্যাপারটি সহজতর। দু’-দশ মাইল পর পর মসজিদ আছে, সেখানে নিয়মিত জড়ো হওয়া মুসল্লি আছে, আছে হালাল দোকান ও দোয়ার আসর। পরিচয়ের আভিজাত্যও থাকে, পরকালের নিশ্চয়তাও বাড়ে।<br /><br />প্রবাসের আলো-হাওয়ায় দিনাতিপাত করলেও কম-বেশি প্রত্যেকেই সে-দেশগুলোর সংস্কৃতিকে সমর্থন করেন না। সন্তানদের সবাই গড়ে তুলবার চেষ্টা করেন স্বদেশী রক্ষণশীলতা ও সংযমের সাথে। সে-ক্ষেত্রে সংস্কৃতির শিক্ষা দেওয়া অনেক দুষ্কর, তুলনায় ধর্ম অনেক সহজ। ধর্মের পথ বিস্তারিত ভাবে সংজ্ঞায়িত হওয়াও এর পেছনে ভূমিকা পালন করে।<br /><br />এভাবে ভাবার ভেতর ক্ষতির কিছু নেই। সাধারণ ভাবে বাইরে এলে সবাই একটি বেশি নামাযি হয়ে যাওয়াতেও ভ্রুকুটি করবার কিছু নেই। নিঃসহায় অবস্থায় মনকে স্থির ও শান্ত রাখতে ধর্মের উপযোগিতা অনস্বীকার্য। আমি আমার মুসলমান পরিচয় নিয়ে আর দশ জনের মতই গর্বিত। তবুও গোল বেধে যায় বাঙালি আর মুসলমান পরিচয় দু’টির মাঝে। আমার মায়ের মত ধর্মভীরু অনেকে খুব নির্বিষ ভাবেই মুসলমান পরিচয়কে বাঙালি পরিচয়ের আগে রাখেন। এভাবে ভাববার অসারতা আমার চোখে প্রকাশ পেয়েছিল উপরে উল্লেখকৃত দ্বিতীয় ঘটনার সময়। শুধু মুসলমান বলেই আমি কোন পাকিস্তানি বা রাজাকারের সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ করতে পারবো না। আমার বাঙালি ও বাংলাদেশি পরিচয়গুলো কোথায় যেন পীড়া দেয় আমাকে মনের ভেতর। সেই মর্মবেদনা থেকেই আমি জানতে পারি আমার প্রথম পরিচয় কী।<br /><br />পরিচয়ের এই দ্বন্দ্বগুলো সাধারণত মানুষের কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে নিজের মানুষ ও ভূমি থেকে বিচ্যুত হবার পর। এই ধারার বিপরীত একজন মানুষের সাথে আমার পরিচয়ের সৌভাগ্য হয়েছিল অনেক বছর আগে। আমার প্রবাসে আসবার পেছনে মূল চালিকাশক্তি ছিলেন অনেক শ্রদ্ধার নাভেদ ভাই। বিতর্কসংশ্লিষ্ট সবাই তাঁকে এক নামে চেনেন বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিতার্কিক হিসেবে। ২০০৩ সালের কথা। নাভেদ ভাইয়ের সাথে ফোনে কথা বলছি ভর্তির বিভিন্ন খুঁটিনাটি নিয়ে। এমন সময় ইটিভি’তে শুরু হল মাহমুদুজ্জামান বাবুর কণ্ঠে বাংলার গান। নাভেদ ভাই বলে উঠলেন, ইশতি একটু ধরো, গানটা শুনে আসি; এই গান শুরু হলে আমি সব ফেলে রেখে একবার গানটা শুনি।<br /><br />দেশটা ছেড়ে চলে যাবো কিছুদিন পর, এই বাস্তবতা মাথায় তখনই প্রথমবার আঘাত করে। সেই গানটির কারণেই পুরো একটি প্রজন্ম বাংলায় গান গায়, বাংলার গান গায়, বুঝে-শুনে গায়। শুধু আমি নই, কম-বেশি প্রতিটি মানুষেরই জীবন বন্দী হয়ে আছে এই গানের মধ্যে। প্রতুলের অসামান্য মূল গানটির চাইতে অনেকাংশে ভিন্ন হলেও বাবু’র গানটি যেন দাবানলের মত ঘিরে ফেলেছিল সবাইকে। এই গানটি না থাকলে পরিচয়ের যুদ্ধে বাংলা অনেকটাই পিছিয়ে যেত।<br /><br />বাংলার গানে তাই শুধু জীবন নয়, আমার সম্পূর্ণ অস্তিত্বই বন্দী।<br /><br />প্রতুলের কণ্ঠে বাংলার গানঃ<br /><table bgcolor="#000000" cellpadding="0" cellspacing="0"><tbody><tr><td><embed quality="high" pluginspage="http://www.macromedia.com/go/getflashplayer" type="application/x-shockwave-flash" bgcolor="#000" src="http://fb.esnips.com//escentral/images/widgets/flash/esnips_player.swf" flashvars="theTheme=blue&autoPlay=no&theFile=http://fb.esnips.com//nsdoc/2d5fb9f4-288a-4d05-8d81-3a6d70fceefa&theName=Ami Banglay Gan Gai&thePlayerURL=http://fb.esnips.com//escentral/images/widgets/flash/mp3WidgetPlayer.swf" width="328" height="94"></embed></td></tr><tr><td><table style="font-family: Verdana,Arial,Helvetica,sans-serif; padding-left: 2px; color: rgb(255, 255, 255); text-decoration: none; font-size: 10px; font-weight: bold;" cellpadding="2"><tbody><tr><td><a style="color: rgb(255, 255, 255); text-decoration: none;" href="http://fb.esnips.com/CreateWidgetAction.ns?type=0&objectid=2d5fb9f4-288a-4d05-8d81-3a6d70fceefa"> Get this widget </a></td><td style="font-size: 7px; font-weight: normal;">|</td><td align="center"><a align="center" style="color: rgb(255, 255, 255); text-decoration: none;" href="http://fb.esnips.com/doc/2d5fb9f4-288a-4d05-8d81-3a6d70fceefa/Ami-Banglay-Gan-Gai/?widget=flash_player_esnips_blue"> Track details </a></td><td style="font-size: 7px; font-weight: normal;">|</td><td><a align="center" style="color: rgb(255, 102, 0); text-decoration: none;" href="http://fb.esnips.com//adserver/?action=visit&cid=player_dna&url=/socialdna"> eSnips Social DNA </a></td></tr></tbody></table></td></tr></tbody></table><br /><br />মাহমুদুজ্জামান বাবু'র বাংলার গানঃ<br /><object width="425" height="344"><param name="movie" value="http://www.youtube.com/v/zmX1rnYh1vg&hl=en&fs=1"><param name="allowFullScreen" value="true"><param name="allowscriptaccess" value="always"><embed src="http://www.youtube.com/v/zmX1rnYh1vg&hl=en&fs=1" type="application/x-shockwave-flash" allowscriptaccess="always" allowfullscreen="true" width="425" height="344"></embed></object><br /><br />ফুয়াদের ঝালমুড়ির কৌটায় বাংলার গানঃ<br /><div style="width: 300px;"><object width="300" height="110"><param name="movie" value="http://media.imeem.com/m/a3S8u0mtZK/aus=false/"><param name="wmode" value="transparent"><embed src="http://media.imeem.com/m/a3S8u0mtZK/aus=false/" type="application/x-shockwave-flash" wmode="transparent" width="300" height="110"></embed></object><div style="padding: 1px; background-color: rgb(230, 230, 230);"><div style="padding: 4px 4px 0pt 0pt; float: left;"><a href="http://www.imeem.com/"><img src="http://www.imeem.com/embedsearch/E6E6E6/" border="0" /></a></div><form method="post" action="http://www.imeem.com/embedsearch/" style="margin: 0pt; padding: 0pt;"><input name="EmbedSearchBox" type="text"><input value="Search" style="font-size: 12px;" type="submit"><div style="padding-top: 3px;"><a href="http://www.imeem.com/ads/banneradclick.ashx?ep=0&ek=a3S8u0mtZK" rel="nofollow"><img src="http://www.imeem.com/ads/bannerad/152/10/" border="0" /></a><a href="http://www.imeem.com/ads/banneradclick.ashx?ep=1&ek=a3S8u0mtZK" rel="nofollow"><img src="http://www.imeem.com/ads/bannerad/153/10/" border="0" /></a><a href="http://www.imeem.com/ads/banneradclick.ashx?ep=2&ek=a3S8u0mtZK" rel="nofollow"><img src="http://www.imeem.com/ads/bannerad/154/10/" border="0" /></a><a href="http://www.imeem.com/ads/banneradclick.ashx?ep=3&ek=a3S8u0mtZK" rel="nofollow"><img src="http://www.imeem.com/ads/bannerad/155/10/a3S8u0mtZK/" border="0" /></a></div></form></div></div><br /><a href="http://www.imeem.com/sohel85l/music/gMnrUUdJ/fuad-featuring-ami-banglay-gaan-gai-laboni/">Ami Banglay Gaan Gai - Laboni - Fuad Featuring</a>Unknownnoreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-14251112.post-71608580690483934582009-04-10T01:08:00.000-04:002009-04-10T01:09:26.643-04:00"কেউ কথা রাখেনি"প্রবাসে বসবাসের সুবাদে অনেক রকম ভাষা ও বচনের সাথে পরিচয় হয়েছে এই ক'বছরে। দেখেছি ভিন্ভাষায় কথা বলার সময় মানুষের উৎস কীভাবে অজান্তে প্রকাশ পেয়ে যায়। এই দলে আছি আমরা কিছু ভেতো বাঙাল, যারা ইংরেজিতেও বাংলার সোঁদা টান দিয়ে ফেলি।<br /><br />আবার মুদ্রার অপর পিঠেই আছেন অনেক আধুনিক মানুষ, যাঁরা নিজভাষা বাংলাতেই কথা বলেন ইংরেজির মত করে। এই দুরাত্মাদের প্রকোপে বাংলা প্রায় হারালো বলে।<br /><br />এমনই সময় মেসেনজারে খোঁজ পেলাম এই অসামান্য ভিডিওটির। এর নেপথ্যের মানুষটিকে VT ও TAMU-র যেকেউ এক নামে চেনেন -- [url=http://www.youtube.com/user/ridwanq]রিদওয়ান কাইয়ুম[/url] (নামের বানান ভুল হলে দুঃখিত, ভ্রাতঃ)। জাতশিল্পী এই রিদওয়ানের বদৌলতে পেলাম এই ভিডিওটি, যেখানে ইংরেজির বদলে আরবি ঢঙে বাংলা বলে দেখা হচ্ছে কেমন শোনায়।<br /><br />সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার লোভ সামলাতে পারলাম না।<br /><br />সুনীলের "কেউ কথা রাখেনি"<br /><br /><object width="425" height="344"><param name="movie" value="http://www.youtube.com/v/T5ENF6a1H6o&hl=en&fs=1"></param><param name="allowFullScreen" value="true"></param><param name="allowscriptaccess" value="always"></param><embed src="http://www.youtube.com/v/T5ENF6a1H6o&hl=en&fs=1" type="application/x-shockwave-flash" allowscriptaccess="always" allowfullscreen="true" width="425" height="344"></embed></object>Unknownnoreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-14251112.post-1475255663592020002009-03-31T14:06:00.002-04:002009-03-31T14:07:52.265-04:00গানবন্দী জীবনঃ রক ইউ লাইক আ হারিকেন<p>পরীক্ষিত ও প্রমাণিত কিছু মেয়েলিপনা আছে আমার। মুরুব্বিদের দেখে জেনেছি, নারীমন ভাল করে দেওয়ার অব্যর্থ উপায় হল বাজার করা। এই রোগ আমারও আছে। এমনিতে প্রতিটা পয়সার হিসেব টুকে রাখলেও মন খারাপ হলে কেমন যেন হয়ে যায় সব। যেই আমি কেউ কিছু চাইলে খুঁটিনাটি জিজ্ঞেস করে জেনে নেই, কিছু কিনবার আগে তার যাবতীয় তত্ত্ব-তালাশ করি, সেই আমিই দুই হাতে খরচ করি, সবার ইচ্ছাপূরণ করে দেই বিনাপ্রশ্নে। এমনই এক দুর্বল মুহূর্তে জীবনের প্রথম সাউন্ড সিস্টেম কিনি। চিরকঞ্জুস আমার এই বিরাট খরচের পেছনের কারণ ছিল বিরাট এক অপমান।</p> <p>আমেরিকা এসে প্রথম কাজ পেয়েছিলাম একটি খাবারের দোকানে। নাম শুনে হাসা নিষেধ – উইনারশ্নিটজেল। মালিক এক পাকিস্তানি লোক আর তার দূরপ্রাচ্যীয় (পড়ুন চিংকু) স্ত্রী। বেতন খুবই কম, ঘন্টায় মাত্র সোয়া পাঁচ ডলার। নগদে কাজ, তাই খাটনির মাত্রা ছিল অমানুষিক। ডেলিভারি ট্রাক থেকে মালপত্র নামিয়ে ফ্রিজারে সাজাতে হত, সকাল-বিকালে দোকানের ভেতর-বাহির ঝাড়তে হত, পার্কিং লট থেকে গুদাম পর্যন্ত সাফ করতে হত, আর খাবার তৈরি ও বিক্রি তো আছেই। লোকলজ্জায় বেসবল ক্যাপ দিয়ে প্রায় নাক পর্যন্ত ঢেকে নিঃশব্দে কাজ করে যেতাম।</p> <p>জাত্যভিমান মানুষকে কতটা অন্ধ ও কট্টর করে তোলে, তা খুব চোখে পড়তো। একবার এক খদ্দের খাবার ফেরত দিয়ে গেলেন, আমার হাতে তৈরি দেখে। একই সাথে মুদ্রার অপর পিঠও সেখানেই দেখলাম। আমার সাথের কৃষ্ণাঙ্গ মেয়েটি চাকরির ঝুঁকি নিয়েও সেই খদ্দেরকে তাড়িয়ে দিল দোকান থেকে। আরেকবার এক খদ্দের “হেই” বলে সম্বোধনের পর সেই মেয়ে রুদ্রমূর্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে গেল। মুখ ঝামটা দিয়ে বললো, “হেই ইজ ফর হর্সেস, অ্যাড্রেস প্রপারলি।” কৃষ্ণাঙ্গদের উচ্চারণ ঠিকমত বুঝে উঠিনি তখনও। একদিন খদ্দেরকে টাকা ফেরত দেওয়ার সময় এক সহকর্মিনী বলে উঠলো, “ডু ইউ হ্যাভ এনি পিনিস?” আমি স্রেফ বেকুব বনে গেলাম। আমতা আমতা করতে করতেই সেই মেয়ে বলে উঠলো, “দ্যাটস ওকে, আই গট ওয়ান।” এবার আমার আরও তব্দা খাওয়ার পালা। শেষ পর্যন্ত মেয়েটি তার পকেট থেকে ছোট্ট-গোল এব্রাহাম লিংকন বের করার বুঝলাম পেনি চাইছিল।</p> <p>সেই দোকানে যারা কাজ করতাম, তারা সবাই ছিলাম জীবন সংগ্রামে বিভিন্ন ভাবে বিপর্যস্ত মানুষ। কমিউনিটি কলেজে পড়ুয়া কিছু মেয়ে ছিল, কিছু ছিল হাইস্কুল ড্রপ-আউট। ম্যানেজারকে লুকিয়ে কাজের অবসরে লুকিয়ে তারা হোমওয়ার্ক করতো, কোনদিন টুকটাক অংক দেখিয়ে নিত। সেই সময়টায় সবাইকে আগলে রাখতেন বয়স্ক এক মহিলা। আফ্রিকার কোন এক দেশ থেকে আমেরিকা এসেছিলেন। স্বামীর সাথে। কিছুদিনের মধ্যেই সেই স্বামী পরের ঘরে চলে গেছে, ফেলে গেছে স্ত্রী আর তিন ছেলে-মেয়ে। সে-ভদ্রমহিলা সন্তানের স্নেহেই আমাদের দেখে রাখতেন। দিনের শেষে গ্রিজ জমে থাকা পাতিল নিজেই সাফ করতেন, আমাদের সুবিধার জন্য বেশিক্ষণ কাজ করতেন, ম্যানেজারকে লুকিয়ে প্যাকেটে ভরে খাবার দিয়ে দিতেন রাতের জন্য। হয়তো আজও তিনি “ইশ”কে মনে রেখেছেন, অথচ আমি তাঁর নাম ভুলে গেছি ঠিকই। কনভিনিয়েন্ট অ্যামনিশিয়া।</p> <p>কাজ সেরে ফিরছিলাম এক রাতে। ২৫শে এপ্রিল, ২০০৪। রবিবার রাত সাড়ে এগারোটা। সপ্তাহান্তের ফুর্তি সেরে সবাই যার যার ঘরে ফিরে গেছে। ক্যাম্পাসের এক পাশ ধরে হেঁটে যাচ্ছিলাম। ডর্মিটরির সামনেই মাঠ, মাঠের পাশে রাস্তা, রাস্তার একপাশে ছোট্ট মসজিদ। সামনে পড়লো তিনটি ছেলে। সৌজন্যবোধক ভাবে মাথা নাড়িয়ে হেঁটে চললাম। হঠাৎ শুরু হল গালাগালি। দ্রুত পা চালিয়ে কেটে পড়ার চেষ্টা করলাম। সাথে পেছনের পায়ের আওয়াজও দ্রুততর হল। সাথে বেড়ে গেল গালির তোড়। বাধ্য হয়ে হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিলাম। এতে কাজ হল কিছুটা। একজন একটু পৃথুল হওয়ায় বাকি দু’জন ক্ষান্ত দিল, তবে তাই বলে উৎপাত বন্ধ হল না। রাস্তার পাড়ের কাঁকড় তুলে ছুঁড়ে মারতে লাগলো। মাথায় জ্যাকেটের হুড তুলে দিয়ে রক্ষা পেলাম। প্রবাসে এসে মসজিদেরই সামনে হেনস্তা হলাম। দুঃখ, হতাশা, আর রাগ মিলিয়ে কেমন যেন এক অনুভূতি কাজ করছিল। সেই দুঃখ থেকেই অধমের অ্যালটেক লান্সিংয়ের ফাইভ-পয়েন্ট-ওয়ান সারাউন্ড সাউন্ড সিস্টেম কেনা। সামনে পেয়ে মনে হয়েছিল, কী লাভ এত সঞ্চয়ী আর সুশৃঙ্খল থেকে? জীবন তো এমনিতেও কষ্টের, ওমনিতেও কষ্টের।</p> <p>তখন চলছিল স্করপিয়নসের ক্রেজ। দেশ ছাড়ার আগে সবেমাত্র ডিভিডি কিনেছি কনসার্টের। বাইরে আসার কিছুদিনের মধ্যেই অ্যাক্যুস্টিক ভার্সন যোগাড় করেছিলাম। ঠিক করলাম, রক ইউ লাইক আ হারিকেন দিয়েই উদ্বোধন করবো। তালে তালে ভুলে যাবো মাথায় তাল পড়ার কথা। সব ঠিকঠাক করে গান ছেড়ে দেখি তেমন কোন তফাৎ বুঝছি না। কিছুক্ষণ গুঁতাগুঁতি করে টের পেলাম, সাউন্ড কার্ডই কম্প্যাটিবল না। অতঃপর আবারও মন খারাপ, আবারও ধুম করে কিছু খরচ করে ফেলা। শেষতক সাউন্ড কার্ডও কেনা হল, এবং সেটার উদ্বোধন রক অই লাইক আ হারিকেন দিয়েই হল।</p> <p>বড় বড় ব্যান্ডের কনসার্টে যাওয়ার শখ মিটবে, বৈশ্বিক ঘটনাবলির ঠিক মাঝখানে থাকবো, বিখ্যাত পর্যটনকেন্দ্র ঘুরে বেড়াবো, অ্যামিউজমেন্ট পার্কে ফুর্তি করবো, প্রশস্ত রাস্তায় গাড়ি চালাবো, ফ্রেন্ডসের জোয়ি’র মত হাউ-ইউ-দুইং বলে বেড়াবো – এই ছিল দেশ ছাড়ার সময় বুকের ভেতর কুসুম কুসুম স্বপ্ন। হয়েও হল না।</p> <p>খুব প্রিয় এই গানটা এভাবেই জড়িয়ে আছে জীবনের খুব অপমানজনক একটি অধ্যায় আর ভেঙে যাওয়া অনেক খুচরো স্বপ্নের সাথে।</p>Unknownnoreply@blogger.com2tag:blogger.com,1999:blog-14251112.post-57519706106679374832009-03-31T14:06:00.001-04:002009-03-31T14:06:38.476-04:00বিছা<p>‘বললাম তো যাবো না, তবু এত গুঁতানোর কী হল?’ বয়সভারে ন্যুব্জ বিছরুখের গরম জবাব। বিছনাজ তাই বলে ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী না। এই লেজভোঁতা সঙ্গীটার আস্ফালন দেখছে বহু বছর ধরে। বছরে কিছুদিন থাকে এমন। এই দিনগুলোয় বুড়োকে একা ছেড়ে দেওয়া যায় না। আকাজ করে বসে কিছু না কিছু একটা।</p> <p>গেলবার এই দিনে রাগের মাথায় জামার বুকের কাছটা খেয়ে ফেলেছিল বিছরুখ। পাশের বাড়ির বিচ্ছুকে বিশেষ ভাবে খুশি করে সে-কেলেংকারি সামাল দিয়েছিল বিছনাজ। দুর্বল মুহূর্তে কামড়ে ওর জামার কিছু অংশ ছিড়ে নিয়েছিল। বলেছিল, ‘আমার জান্টু একটু অন্যরকম না হলে হয়? আজ থেকে এটাই নতুন ধারা।’ শুনে বিচ্ছুও খুশি। ষণ্ডাটার দেখাদেখি আশপাশের দু’কলোনিতে সেই রীতি চালু হয়ে গেল। লোকেও আর বিছরুখের ছেঁড়া জামা আর আলুথালু চোখ-মুখ নিয়ে কোন কথা বললো না।</p> <p>তার আগের বছর চলছিল বিছরুখের আধ্যাত্মিক সময়। তখনও বিচ্ছুটা আসেনি পাশের বাড়িতে, বিছনাজের মনেও বসন্তের পৌনঃপুনিকতা শুরু হয়নি। উত্তরপাড়ার খটখটঞ্জ থেকে বিছা ভাই বেড়াতে এসেছিলেন ওদের বাড়ি। যেমন তাঁর সফেদ আলখাল্লা, তেমন তাঁর নুরানি লেজের আগা। একহারা গড়নের পুষ্ট, নধর দেহটা দেখেই বিছনাজ বিশ্বাসী হয়ে গিয়েছিল। অতিলৌকিক কোন সত্বা না থাকলে এক দেহে এত আশীর্বাদ জমা হতে পারে না বলে তার বদ্ধমূল ধারনা হল। ধরে-বেঁধে বিছরুখকেও সে বিছা ভাইয়ের আন্তরিক মুরিদ করে দিল। বিছনাজের মত অতটা না, তবে বেশ অনেকটাই আন্তরিক।</p> <p>বিছা ভাইয়ের একাগ্র ছাত্র-ছাত্রী হয়ে গেল ওরা দু’জন। দুপুর হলে বিছা ভাই বিছরুখকে স্নেহের সাথে কাছে ডেকে নিতেন। বিভিন্ন রকম তালিম দিতেন। </p> <p>‘বিছার বিষ থাকে লেজের আগায়, বুঝলা? এই লেজ সুরসুর করে বলেই আমরা বিছা। তা লেজের যথাযথ ব্যবহার নিয়ে আমার ছোট্ট একটা ম্যানুয়েল আছে। তোর বাড়ি আসার আসমানি নির্দেশ পাওয়ার আগে আমি খটখটগঞ্জের মেম্বারের বাড়িতে ছিলাম কিছুদিন। তখন কিছু তরিকা শিখেছিলাম; সেগুলোর লেখ্য রূপ। হাদিয়া মাত্র ১০ টাকা।’ </p> <p>হাদিয়ার কথা শুনেই বিছরুখ হাউ-মাউ করে উঠলো। জীবনের পদে পদে বঞ্চনার শিকার হয়ে কত কষ্টে সাজানো সংসার তার। এক বিছনাজ ছাড়া তার ফুটো কড়িটুকুও নেই। কেঁদে-কেটে সে-কষ্টের কথা বলা শুরু করতেই বিছা ভাই কাঁধে হাত রেখে বললেন, ‘তোকে কিছু দিতে হবে না, তোর জন্য বিনামূল্যে সব। তোকে আজ নতুন কিছু শেখাবো, তুই শুধু রাত-ভোর এই তরিকা কাজে লাগাবি।’</p> <p>খুশির বদলে আরো বিপর্যস্ত হয়ে ওঠে বিছরুখ। আবারও কেঁদে বলে, ‘পুরনো তরিকা শেখার টাকাই নেই, বেশি দামী নতুন তরিকা কীভাবে নেবো?’</p> <p>বিছরুখের কান্না উপেক্ষা করে বিছা ভাই বলে চলে, ‘এই তরিকার জন্য শহর থেকেও লোক এসেছে। কত বড় বড় লোক আমার পায়ের কাছে সব ক্ষমতা সঁপে দিয়েছে। বলে কিনা আমাকে নশ্বর দেহে দেখবার সাহসও নেই। আমি নাকি দেবতা, শুধু বিনয় করে দেহে ঠাঁই নিয়েছি।’</p> <p>বলা বাহুল্য, বিছরুখের কান্না বেড়েই চলে। এ-সময়ই স্মিত হেসে তাকে উদ্ধার করে বিছা ভাই।</p> <p>‘যাক সে-কথা, এদের এই বিষ ছাড়ানো খুব জরুরী। আমি কালরাতে স্বপ্নে নতুন এক সমাধান পেয়েছি। উলটা করে ঝুলিয়ে রাখলে অবিশ্বাস ও অতিপ্রশ্নের রোগ ভাল হয়ে যায়। এক রাত ঝুলিয়ে রাখলেই সব বিষ মুখ দিয়ে বের হয়ে আসবে। তুই যা, এই তরিকা কাজে লাগা। তোকে কিছু দিতে হবে না।’</p> <p>আনন্দে ডগমগ করতে করতে বিছরুখ চলে গেল নিজের কাজে। সাঁঝের আঁধারে ঘরে থাকা উত্তম বিধায় বিছা ভাই ধীরে ধীরে হাঁটা দিলেন অন্দরমহলের দিকে। হঠাৎ চমকে দিয়ে গলায় কে যেন ফাঁস পরিয়ে দিল। বিছনাজ খ্যানখ্যান করে হেসে বলে, ‘আজ আর গামছা না, দড়ি দিয়ে বাঁধবো। আপনাকে উলটা করে বেঁধে তাংফাং করার মজাই অন্যরকম। আজকে দুগনা মজা হবে!’ বিছাভাই অবোধ্য কী সব যেন বিড়বিড় করতে লাগলেন।</p> <p>ভালই চলছিল এভাবে। অপারেশন দড়িবান্ধা শেষ হয়ে গেল অল্পদিনের মধ্যেই। নতুন তরিকার খোঁজে অস্থির বিছরুখকে কিছু একটা বলে শান্ত করা দরকার। কোন কুক্ষণে বিছা ভাই মুখে এনেছিলেন সহজে মাকড়সা মারার তরিকা। মাকড়সার নাম শুনেই ক্ষেপে উঠলো বিছরুখ। অবাক বিছা ভাই কিছু বোঝার আগেই বিছরুখ তাঁর দাঁড়ির একাংশ খাবলে ছিড়ে ফেললো। আরেক দফা আক্রমণ করতে উদ্যত হতেই বিছনাজ এসে তাকে নিবৃত্ত করলো।</p> <p>‘আপনাকে না কাল রাতেই বললাম, বিছরুখের সামনে মাকড়সার নাম নেবেন না? এই নাম শুনলেই ও আর স্থির থাকতে পারে না।’</p> <p>মাকড়সা শব্দটি আরেকবার উচ্চারিত হতে শুনেই বিছরুখ ক্ষেপে উঠলো। সেই সংহারমূর্তি দেখেই বিছা ভাই দৌঁড়ে ভাগলেন। ক’দিন পর দেখা গেল আশে-পাশের চার গ্রাম ধরে সবাই ছিলা দাঁড়ি নিয়ে ঘুরছে। সবারটা দেখেই মনে হচ্ছে যেন কেউ সামনে থেকে খাবলে নিয়েছে। বিছনাজের বুঝতে দেরি হল না, এটা বিছা ভাইয়ের মুখরক্ষার ফিকির।</p> <p>পরপর দুই ঝক্কির পর বিছরুখকে নিয়ে আর ভরসা পায় না বিছনাজ। তাই এখন এই দিনটা এলেই ওকে ঘরে বাইরে নিয়ে যায়। এ-বছর ওদের শাহী হওয়ার একটা সুযোগ আছে। ক’দিন আগেই বিছাগঞ্জ থেকে শাহী এক ভদ্রলোক এসেছেন। বিছনাজ প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে দুই শাহী রক্তের মিলন ঘটিয়ে জাতে উঠতে। বিছরুখকে নিত্য তালিম দেওয়া হচ্ছে শাহী কায়দায় কথাবার্তা বলার। মেলবন্ধনের বাকি দায়িত্ব বিছনাজ নিজের উপর নিয়েছে। ভয় একটাই, এই শাহী বংশের আবার মাকড়সাদের সাথে উঠা-বসা। কিছু হলেই বিশাল একটা আঁঠালো জাল বানিয়ে কাচ্চা-বাচ্চা সহ সেখানে আড্ডা জমিয়ে দেয়।</p> <p>যত রাগারাগিই করুক না কেন, আজকে ওকে ঘর থেকে বের করতেই হবে; প্রয়োজনে বিছিলার নাচের টোপ দিয়ে হলেও। বেকুবটা যে আজও কেন ভুলতে পারে না সেই মাকড়ানির কথা। খান্দানি মাকড়ানির সাথে ফস্টি-নস্টির এক ফাঁকে কামড়টা বিছরুখই দিয়েছিল, কিন্তু বেকুব পিটার পার্কারটা ঘুরে তাকিয়ে দেখলো মাকড়ানিকে। সেই থেকে বিছম্যান না হয়ে স্পাইডারম্যান হয়ে গেল ব্যাটা।</p> <p>বিছনাজ কত কষ্ট করে উপরে ওঠার সিড়িটা নিজের দখলে আনে প্রতিবার। প্রতিবারই বিছরুখটার এই খেয়ালের জন্য সব ভেস্তে যায়। আর কতকাল এভাবে চলে? </p>Unknownnoreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-14251112.post-5546785083278561562009-03-31T14:05:00.001-04:002009-03-31T14:05:33.483-04:00আহা, বিদেশ!<p>দু'দিনের তুষারপাতে ব্ল্যাক্সবার্গ ঢেকে গেছে পুরো। স্কুলের ক্লাস বাতিল করে দেওয়া হয়েছে কিছু।</p> <p>আহা, বিদেশ!</p> <p>ফ্রিজের বাইরে বরফ দেখার শখ আমার অনেক দিনের। আমেরিকা এসেও ৪ বছর লুইজিয়ানায় থাকার বদৌলতে শীত কেটেছে ৮০ ডিগ্রি ফারেনহাইটে! গত শীতে ভার্জিনিয়া এসে দেখলাম বরফ। স্লেজিং নামক কাজটা সেবারই জীবনে প্রথম করলাম। এই শীতে বরফ পড়েছে বেশি, কিন্তু জমলো এবারই প্রথম। মাঝে -২৫ ডিগ্রি ফারেনহাইটেও খটখটে শুকনো ছিল।</p> <p>আমার কাছে বিদেশ মানেই বরফ। শিশুতোষ এক ধরণের রোমান্টিকতা কাজ করে আমার তুষারপাত দেখলে। এই যে একটু আগে ব্ল্যাক আইসে পিছলে পা মচকে আসলাম, শক্ত মাটি মনে করে পানির উপর জমে থাকা বরফে পা দিয়ে জুতা ভিজিয়ে ফেললাম, তবুও ভালই লাগছে। ঝকঝকে রোদ উঠলেও শীত কমেনি। বালু-ঝড়ের মত উড়ছে মিহি তুষারকণা। বাতাস কাঁপিয়ে যাচ্ছে, মুখে সুঁইয়ের মত বিঁধছে, তবু ভালই তো লাগছিলো।</p> <p>আমার কম্পিউটারটা জানালার পাশে। এখানে বসে দিনরাত প্রকৃতির খেলা দেখি। দু'দিন যাবৎ একটানা তুষারপাত দেখছিলাম। পরশু বের হবার আগে আবহাওয়ার পূর্বাভাষ দেখিনি। ক'দিন ধরে বৃষ্টি পড়ছিল, ভাবছিলাম তেমনটাই চলবে। ফতুয়া আর একটা জ্যাকেট পরে বেরিয়েছিলাম। চোখের সামনে বৃষ্টির পানি জমে ফ্লারি হয়ে গেল, তার দু'সেকেন্ড পরই পেঁজা তুলার মত তুষারপাত।</p> <p>আহা, বিদেশ!</p> <p>এক ফাঁকে পয়েন্ট-অ্যান্ড-ধ্যুৎ ক্যামেরাটা নিয়েই বের হলাম পার্কিং লটে। কিছু ছবি তুলে ফেললাম ঝটপট।</p> <table> <tbody><tr> <td>সিড়ি দিয়ে নেমেই...</td> </tr> <tr> <td><a href="http://farm4.static.flickr.com/3614/3324226004_5ba3d9859a.jpg" rel="lightbox[post-22204]"><img src="http://farm4.static.flickr.com/3614/3324226004_5ba3d9859a.jpg" alt="" style="margin-right: 16px;" class="bb-image" width="320" align="left" /></a></td> </tr> </tbody></table> <p><br /></p> <table> <tbody><tr> <td>বায়ে তাকিয়ে দেখলাম রাস্তা মাত্রই সাফ করা হয়েছে...</td></tr> <tr> <td><a href="http://farm4.static.flickr.com/3547/3321810018_5c4e01d5c8.jpg" rel="lightbox[post-22204]"><img src="http://farm4.static.flickr.com/3547/3321810018_5c4e01d5c8.jpg" alt="" style="margin-right: 16px;" class="bb-image" width="320" align="left" /></a></td></tr> </tbody></table> <p><br /></p> <table> <tbody><tr> <td>ডান দিকে তাকিয়ে দেখি এই দৃশ্য...</td></tr> <tr> <td><a href="http://farm4.static.flickr.com/3549/3321808450_d799ed03f9.jpg" rel="lightbox[post-22204]"><img src="http://farm4.static.flickr.com/3549/3321808450_d799ed03f9.jpg" alt="" style="margin-right: 16px;" class="bb-image" width="320" align="left" /></a></td></tr> </tbody></table> <p><br /></p> <table> <tbody><tr> <td>ভাবলাম এদিকেই দু'কদম এগোই...</td></tr> <tr> <td><a href="http://farm4.static.flickr.com/3560/3321807344_c499faed1d.jpg" rel="lightbox[post-22204]"><img src="http://farm4.static.flickr.com/3560/3321807344_c499faed1d.jpg" alt="" style="margin-right: 16px;" class="bb-image" width="320" align="left" /></a></td></tr> </tbody></table> <p><br /></p> <table> <tbody><tr> <td>আমার বাড়ি স্টেট হাইওয়ের একেবারেই পাশে। বেড়ার পাশ দিয়ে সেটার দিকে তাকিয়ে...</td></tr> <tr> <td><a href="http://farm4.static.flickr.com/3549/3321806804_021e2baf87.jpg" rel="lightbox[post-22204]"><img src="http://farm4.static.flickr.com/3549/3321806804_021e2baf87.jpg" alt="" style="margin-right: 16px;" class="bb-image" width="320" align="left" /></a></td></tr> </tbody></table> <p><br /></p> <table> <tbody><tr> <td>দুই বিল্ডিং-এর মাঝের এই ধাপগুলো আমার খুব প্রিয় একটা জায়গায় নিয়ে যায়...</td></tr> <tr> <td><a href="http://farm4.static.flickr.com/3579/3320978665_a2a1cb2ac7.jpg" rel="lightbox[post-22204]"><img src="http://farm4.static.flickr.com/3579/3320978665_a2a1cb2ac7.jpg" alt="" style="margin-right: 16px;" class="bb-image" width="320" align="left" /></a></td></tr> </tbody></table> <p><br /></p> <table> <tbody><tr> <td>পেছনের দিকে আমার খুব প্রিয় সেই বেঞ্চটা, যেখানে মন খারাপ হলেই একা বসে থাকি...</td></tr> <tr> <td><a href="http://farm4.static.flickr.com/3586/3321805996_eca3fbb741.jpg" rel="lightbox[post-22204]"><img src="http://farm4.static.flickr.com/3586/3321805996_eca3fbb741.jpg" alt="" style="margin-right: 16px;" class="bb-image" width="320" align="left" /></a></td></tr> </tbody></table> <p><br /></p> <table> <tbody><tr> <td>এত বরফ ডিঙিয়ে নিজেকে ততক্ষণে হিলারি-হিলারি মনে হচ্ছে। ক্লিনটনের শয্যাসঙ্গিনী না, হিমালয়-বিজয়ী হিলারি। মনে হল নিজের দাবিটুকু রেখে যাই...</td></tr> <tr> <td><a href="http://farm4.static.flickr.com/3641/3324215868_14af1baeed.jpg" rel="lightbox[post-22204]"><img src="http://farm4.static.flickr.com/3641/3324215868_14af1baeed.jpg" alt="" style="margin-right: 16px;" class="bb-image" width="320" align="left" /></a> </td></tr></tbody></table> <p><br /></p> <table> <tbody><tr> <td>যাবতীয় রোমাঞ্চ কেটে গেল এই গাছটা দেখে...</td></tr> <tr> <td><a href="http://farm4.static.flickr.com/3610/3320977995_7bab9651fe.jpg" rel="lightbox[post-22204]"><img src="http://farm4.static.flickr.com/3610/3320977995_7bab9651fe.jpg" alt="" style="margin-right: 16px;" class="bb-image" width="320" align="left" /></a></td></tr> </tbody></table> <p><br /></p> <p>অজান্তে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল। এই গাছগুলোর মতই আলো-হাওয়ার প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে পরে আছি পরের দেশে। নিজের বলতে যেই পাতাগুলো, সেগুলো হারিয়ে গেছে। নুয়ে পড়া শরীরে শুধু ভার বইছি ভিন্দেশি বরফকণার।</p> <p>ডাক পড়লো স্লেজিং-এ যাবার। কী মনে করে যেন মানা করে দিলাম। গরুর মাংস আর খিচুড়ি রাঁধবো। তুষারকে বর্ষা করে দেবো।</p> <p>আহা, বিদেশ!</p>Unknownnoreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-14251112.post-4388670645643163912009-03-31T14:02:00.000-04:002009-03-31T14:03:44.778-04:00একুশের নাটিকাঃ সূচনা<p>মহান ভাষা দিবস উপলক্ষে ভার্জিনিয়া টেকের বাঙালি ছাত্রদের ক্ষুদ্র প্রয়াস একটি নাটিকা -- সূচনা। পরীক্ষা আর ক্লাসের দৌঁড়াদৌঁড়ির মাঝে তৈরি করা এই নাটিকার ইউটিউব ভিডিও জুড়ে দিলাম। রচনা ও পরিচালনায় ছিল মাহমুদ হারুন।</p> <p>আনাড়ি কাজ, ভুল-চুক হলে ক্ষমা করবেন। যেকোন প্রকার আদেশ-নির্দেশ-সমালোচনা-উপদেশ স্বাগতম। আমরা প্রত্যেকেই বেহায়া হিসেবে সুবিদিত। <img style="border-width: 0px;" src="http://www.sachalayatan.com/modules/smileys/icons/1.gif" title="হাসি" alt="হাসি" /></p><p><object width="480" height="295"><param name="movie" value="http://www.youtube.com/v/QClmuxY2UrY&hl=en&fs=1"></param><param name="allowFullScreen" value="true"></param><param name="allowscriptaccess" value="always"></param><embed src="http://www.youtube.com/v/QClmuxY2UrY&hl=en&fs=1" type="application/x-shockwave-flash" allowscriptaccess="always" allowfullscreen="true" width="480" height="295"></embed></object><br /></p>Unknownnoreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-14251112.post-72596235136857283442009-03-31T13:59:00.000-04:002009-03-31T14:02:11.923-04:00সীমানা পেরিয়ে<p>গতকাল (২৫শে ফেব্রুয়ারি) বিডিআর-এর বিদ্রোহ নিয়ে নানান জনের অনেক রকম মত ঘুরপাক খাচ্ছে। আমার নিজের মত অনেকের সাথেই মিলছে না। সেগুলো নিচে দেওয়ার চেষ্টা করছি সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা সহ। আমার দৃষ্টিভঙ্গি অমানবিক মনে হয়ে থাকলে দুঃখিত। আমার বিবেচনায়, ব্যাপারটা নিয়ে খুব দ্রুত আবেগপ্রবণ না হয়ে প্রশাসনিক ও রাষ্ট্রীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এর সম্ভাব্য ফলাফল দেখা উচিত। কখনও সময়ের অভাবে, কখনও পলিটিক্যালি কারেক্ট থাকতে গিয়ে অনেক কিছু বলা যায় না। তবু চেষ্টা করছি খোলামেলা ভাবেই বলতে।</p> <p><span style="font-weight: bold;">স্পেশাল কেস</span><br />জীবন-কলমের কালি অমোচনীয়। এতে একবার যা-লেখা হয়, তা মুছবার অবকাশ নেই। ভবিষ্যতে হয়তো টীকা জুড়ে দেওয়া যায়, চাই কি কেটে আবার লেখা যায়, কিন্তু মুছে নতুন করে লিখবার কোন অবকাশ নেই। সেই সাথে আরও সত্য, জীবন-খাতার পাতা উলটে বারবার পেছনে যাওয়া যত কমানো যায়, ততই ভাল। জীবন চলার অংশ হিসেবেই এই শিক্ষাটুকু আমরা ধারণ করি। কথাগুলো রাষ্ট্রের বেলায়ও সত্য। এই বিবেচনায় আমি “স্পেশাল কেস”-এর বিপরীতে।</p> <p>এখানে “স্পেশাল কেস” হল আইনের স্বাভাবিক গতিকে রহিত বা প্রভাবিত করা। কোন অপরাধের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষনা করা এমনই একটি স্পেশাল কেস। প্রতিটি স্পেশাল কেস একটা রাষ্ট্রকে ঐ সময়টায় আটকে রাখে। আমরা পঁচাত্তরের স্পেশাল কেসে ফিরে যাই আজও বারবার। দেরিতে হলেও আমরা উপলব্ধি করেছি যে অপরাধমাত্রেই তা শাস্তিযোগ্য, উদ্দেশ্য যেমনটাই হোক না কেন।</p> <p><span style="font-weight: bold;">সাধারণ ক্ষমা ঘোষনার দ্রুততা</span><br />বিডিআর-এর সদস্যরা অস্ত্র জমা দিতে শুরু করেছেন বলে খবরে প্রকাশ। এর বাইরে তাদের হাতে কোন উপায় ছিল না। ঘেরাও অবস্থায় বেশিক্ষণ থাকতে পারতেন না তারা। অনেকে দ্বিমত পোষন করলেও আমি এত দ্রুত সাধারণ ক্ষমা ঘোষনার বিপক্ষে ছিলাম, আছি এখনও। সেই বিচারই শ্রেষ্ঠ, যার পর বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে। বিডিআর-এর দাবিগুলো ন্যায্য, কিন্তু সেই যৌক্তিকতা তাদের মানুষ হত্যার অধিকার দেয় না, দেশ ও সরকারকে জিম্মি করার অধিকার দেয় না। দাবি মেনে নেওয়া উচিত, তবে সেই সাথে বিচারেরও সম্মুখীন করা উচিত। তাহলেই সকল পক্ষের প্রতি সমান থাকা হবে। তাছাড়া, অপরাধের মাত্রা ও কারণ না জেনেই ব্ল্যাঙ্কেট ইমিউনিটি দেওয়া খুব বড় একটি কৌশলগত ভুল। এখন বিভিন্ন মাধ্যমে জানা যাচ্ছে অনেক রকম অপকর্মের কথা। এগুলো না জেনেই সাধারণ ক্ষমা ঘোষনা ঠিক ছিল বলে মনে করি না আমি।</p> <p><span style="font-weight: bold;">আনুপাতিক প্রতিবাদ</span><br />এরপরের প্রসঙ্গ ছিল অনুপাতের। সেন্স-অফ-প্রোপোরশন অতিক্রম করে যাওয়া যেকোন কিছুই অপরাধ এবং শাস্তিযোগ্য। চুরি, দুর্নীতি বন্ধ করা সবার দাবি, ন্যায্য দাবি। তাই বলে এই দাবি আদায়ের জন্য সহিংস হওয়া ন্যায্য না। যেই দাবিগুলো করা হয়েছে, সেই একই দাবি সরকারের বিভিন্ন স্তরের কর্মচারীরা করে থাকেন। আলোচনা, কর্মবিরতি, বা অবরোধের মাধ্যমে আদায়ও করেন। তারা বিডিআর-এর জওয়ানদের চেয়ে শিক্ষা বা সামাজিক অবস্থানে খুব উন্নত নন। একবার এমন কোন জিম্মি অবস্থায় মাথা নত করে ফেললে তা চিরকালের জন্য সরকারকে দুর্বল করে দেবে।</p> <p><span style="font-weight: bold;">প্রাণহানি হ্রাস বনাম প্রাণের মর্যাদা</span><br />যেকোন সশস্ত্র বিদ্রোহ চলাকালে প্রথম বিবেচ্য অবশ্যই প্রাণহানি হ্রাস। তবে এসময় অনেক রকম হিসাব ও সমীকরণ মাথায় রাখতে হয়। অনেক রকম আলোচ্য ও বিবেচ্য বিষয় থাকে। এর কিছু থাকে অবস্থা-নির্ভর, আবার কিছু থাকে সার্বজনীন। প্রাণহানি সর্বোচ্চ অপরাধ। এর বিনিময়ে যদি কারও দু’দিনের জেলও না হয়, তাহলে আইনের দরকার কী? প্রাণহানি হ্রাস যেমন প্রয়োজন, তেমনি হারিয়ে যাওয়া প্রাণের মর্যাদা দানের প্রশ্নও থেকে যায়।</p> <p><span style="font-weight: bold;">নেগোসিয়েশন</span><br />কোন প্রকার সমঝোতা ততক্ষণই এগিয়ে যায়, যতক্ষণ উভয় পক্ষের কিছু চাইবার থাকে। প্রতিপক্ষের সব চাওয়া একবারেই পূরণ করে ফেললে তাদের মর্জির মুখাপেক্ষী হয়ে যেতে হয়। অতিদ্রুত সাধারণ ক্ষমা ঘোষনা করায় তা-ই হয়েছে। সাধারণ ক্ষমা হল সরকারের হাতের তুরুপের তাস। এটি শুরুতেই খেলে ফেলা মানে প্রতিপক্ষকে হাই-গ্রাউন্ড দিয়ে দেওয়া। এটি চূড়ান্ত মার্জনা, এবং তা পাবার জন্য অপরাধীকে চূড়ান্ত ভাবেই কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুগত হতে হবে। একজন প্রধানমন্ত্রী সাধারণ ক্ষমা ঘোষনা করতেই পারেন। এটি রাজনৈতিক ও মানবিক সিদ্ধান্ত, তবে এটি আসবে একেবারে শেষে। অতি দ্রুত সাধারণ ক্ষমা ঘোষনা করায় বিডিআর-এর সদস্যরা আরও দাবি করেছেন, অস্ত্র জমা দিতে গরিমসি করেছেন। এ-ধরণের ঘটনায় একজন প্রধানমন্ত্রীর অবস্থান এবং কর্তৃত্ব প্রচণ্ডভাবে দুর্বল হয়।</p> <p>প্রধানমন্ত্রীর উচিত ছিল নিম্নবিধ পালটা প্রস্তাব দেওয়াঃ<br />- প্রথমে অস্ত্র নামিয়ে রাখতে হবে<br />- নারী, শিশু, ও বেসামরিক ব্যক্তিদের ছেড়ে দিতে হবে<br />- সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করতে হবে<br />- আত্মসমর্পণের পর অভিযুক্তদের যথাযথ নিরাপত্তার বিধান করা হবে<br />- সকল অপরাধের বিচার হবে<br />- বিচারের পর আদালত উপযুক্ত শাস্তির বিধান করবেন<br />- এই আইনী প্রক্রিয়া যথাযথ ভাবে সম্পন্ন হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী আন্তরিকতার সাথে সাধারণ ক্ষমা করে দেওয়া বিবেচনা করবেন</p> <p>এই পন্থা বিডিআর-এর কেউ স্বেচ্ছায় মেনে নিতে না চাওয়াই স্বাভাবিক, কিন্তু এর বিপরীতে তাদের মনে করিয়ে দেওয়া ছিল দু’টি বিষয়। প্রথমত, একটি সশস্ত্র বাহিনী হিসেবে তারা প্রধানমন্ত্রীর আদেশ মানতে দায়বদ্ধ। ক্ষমা করবার পূর্বে তাদের দিক থেকেও প্রমাণ রাখা প্রয়োজন যে তারা ব্যারাকে ফিরে একটি অনুগত ও সুশৃঙ্খল বাহিনী হিসেবে কাজে যোগ দেবে। দ্বিতীয়ত, সাধারণ ক্ষমা একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত এবং তা গ্রহণ করতে প্রধানমন্ত্রী প্রস্তুত হলেও দেশের দীর্ঘমেয়াদী ভাল চিন্তা করলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা জরুরী। দেশের কথা ভেবেই প্রচলিত আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রতি বিশ্বস্ত হতে হবে তাদের। খুনের অপরাধ মাফ হয়ে যাওয়া অনেক বড় ব্যাপার, এবং এই সুবিধাটি তাদের অর্জন করে নিতে হবে।</p> <p><span style="font-weight: bold;">আইনের শাসন</span><br />পরের প্রসঙ্গ আইনের শাসনের। আইন প্রণয়নের সময় তা একদিনের জন্য তৈরি করা হয় না। আইনের কোন বিবেক নেই, আইনের কোন বুদ্ধি নেই। দুইয়ে দুইয়ে যেমন প্রতিবার চার হয়, তেমনি আইনের বিবেচনায় কোন অপরাধের শাস্তি প্রতিবার একই হয়। এই নৈর্ব্যক্তিকতার কারণেই আইন সার্বজনীন। আইনের লক্ষ্য থাকে রাষ্ট্রের দুর্বলতম নাগরিকের সকল নাগরিক অধিকার সর্বোচ্চ প্রতিকূলতার মুখেও রক্ষা করা। এ-কারণেই আইনে স্পেশাল কেস থাকতে নেই। এই সাধারণ ক্ষমা এটাই প্রতিষ্ঠিত করে গেল যে সাধারণ, নিয়মানুবর্তী নাগরিকের চেয়ে বিশৃঙ্খল বন্দুকধারীর ক্ষমতা বেশি। সব অপরাধের আইন আগে থেকেই তৈরি থাকে না। সেক্ষেত্রে বিবেচনার ভিত্তিতে অপরাধের প্রতিবিধান নির্ণীত হয়। এই ঘটনায় খুব খারাপ একটি প্রিসিডেন্স তৈরি করে গেল। এরপর যে-কেউ নিজের মত আইন হাতে তুলে নেবেন।</p> <p><span style="font-weight: bold;">ক্ষমা বনাম সাধারণ ক্ষমা</span><br />সাধারণ ক্ষমা ঘোষনার আগে পরিস্থিতি নিয়ে আরেকটু সবিস্তারে জেনে নেওয়া উচিত ছিল। সব ব্যাপারে সম্পূর্ণ তথ্য না জেনেই এই ক্ষমা ঘোষনা করা হয়েছে। একটু একটু করে অনেক খবর বেরিয়ে আসছে এখন। বিডিআর-এর জওয়ানদের হাতে সার্বক্ষণিক অস্ত্র থাকার কথা না। তারা কীভাবে সুসজ্জিত হয়েই তৈরি ছিলেন? ঊর্ধ্বতন অফিসারদের বিভিন্ন ভাবে অপদস্ত করা হয়েছে বলে পত্রিকায় প্রকাশ। তাদের দিয়ে শারীরিক কসরত করানো হয়েছে। এটি কি দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন, না “হেইট ক্রাইম”? সেনাবাহিনীর কর্নেলদের খুন করে ড্রেনে লাশ ফেলে দেওয়া হয়েছে। যত অপরাধীই হোন না কেন, পদস্থ অফিসারদের এভাবে অপমান করা কি ঠিক? ড্রেন থেকে তুলে আনা লাশে শুধু গুলি নয়, মুখে বেয়নেটের খোঁচার দাগও দেখা গেছে বলে পত্রিকায় প্রকাশ। এই অভব্যতা কি ক্ষমার্হ? </p> <p>সাধারণ ক্ষমা অনেক ক্ষেত্রেই কার্যকর, কিন্তু ক্ষমা করবার আগে জেনে নেওয়া উচিত কী কী অপরাধ ক্ষমা করা হচ্ছে। সে-ব্যাপারে স্পষ্টভাবে আলোচনা হওয়া উচিত। এই অপরাধ সংঘটনের পর বিডিআর-এর সদস্যরা কি আবারও পুনর্বহাল হবেন পূর্বপদে? একটি রাষ্ট্রের জন্য কি খুব সুখকর পরিস্থিতি এটি? সে-কারণেই অপরাধ, প্রতিবাদ, বিশৃঙ্খলা, এবং বাড়াবাড়ির মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য নির্দিষ্ট করে দেওয়া উচিত ছিল।</p> <p><span style="font-weight: bold;">কর্তৃত্বের প্রতি আনুগত্য</span><br />একটা সময় মানুষ বর্বর ছিল। সে-আমলে আলফা-মেল বলে একটা ব্যাপার ছিল। এ-কালেও গরিলাদের মধ্যে এমনটা দেখা যায়। সোজা বাংলায় একে “জোর যার, মুল্লুক তার” বলা হয়। সে-আমলে দ্বৈরথে জয়ীরাই হতেন নেতা, তাদের কথায়ই চলতো সবকিছু। আমরা সে-যুগ পেরিয়ে এসেছি। এখন বুদ্ধির শাসনের যুগ। পেশি চালিত হয় বুদ্ধি দিয়ে। সে-কারণেই পেশি বা নিশানা নয়, বুদ্ধিবৃত্তিক যোগ্যতার ভিত্তিতে কর্মকর্তা নিযুক্ত হন। এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন না করলে কোন ব্যবস্থা টিকে থাকতে পারে না। নিয়ম মানতে কারোই ভাল লাগে না, কিন্তু তবুও নিয়মানুবর্তীতার চর্চা করতে হয় বৃহত্তর স্বার্থেই। খেলার মাঠে আন্ডারডগদের সমর্থন করা এক জিনিস, কোন অর্গানগ্রামের নিম্নপদস্থ কাউকে সমর্থন করা আরেক। </p> <p>উত্থান-পতনের মধ্য দিয়েই একটি ব্যবস্থা তৈরি করতে হয় যেখানে অধঃস্তনদের দাবি-দাওয়া শুনা ও মানা হয়। সেক্ষেত্রে মনে রাখা প্রয়োজন যে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত এবং তারা কোন দাবি না মানলে সেটি যুক্তিযুক্ত হতে পারে। সময় সময় অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি হয়, এবং তা অস্বাভাবিক সমাধানের দাবি রাখে। আমি মনে করি না যে বিডিআর-এর অবস্থা অতটা নাজুক ছিল। যদি হয়েও থাকে, তবুও তা নিয়মতান্ত্রিক প্রতিবাদের ধাপগুলো অতিক্রম করে এই পর্যায়ে আসা উচিত ছিল। আবেগের বশবর্তী হয়ে কিংবা “সাধারণ কৃষকের ছেলে” বলে কেউ নিয়মের বাইরে বলে দাবি করাটা তাকে প্রকারান্তে অযোগ্য বলে অপমান করা বলে আমি মনে করি।</p> <p>বিডিআর সদস্যরা সাধারণ মানুষের আবেগের কাছে আহ্বান করেছেন। সেই আবেগ আমাকেও ছুঁয়েছে, তাদের দুর্দশায় আমারও মন কেঁদেছে, কিন্তু তাই বলে আমি তাদের অপরাধটুকু ভুলে যেতে পারছি না। শুধুই আবেগের বশবর্তী না হয়ে তাই একটু দূরপ্রসারী প্রভাবগুলো ভেবে দেখা প্রয়োজন।</p> <p><span style="font-weight: bold;">সেনাবাহিনী বনাম বাংলাদেশ</span><br />এভাবে সাধারণীকরণ করতে আমি নিজে খুব অপছন্দ করি, তবু মন থেকে প্রশ্নটা দূরে সরিয়ে রাখতে পারছি না। এই সংঘাতে সেনাবাহিনীর বিপরীতে মানুষের অবস্থান কি পূর্বের রাগের ফল নয়? মনে রাখা প্রয়োজন যে “বিগত দু’বছরের সেনাবাহিনী” আর “বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের সেনাবাহিনী” এক নয়। সীমান্ত প্রতিরক্ষা বাহিনী একটি আধা-সামরিক বাহিনী হিসেবে সেনাবাহিনীর অধীনস্ত। এই বিদ্রোহ ও বিশৃঙ্খলা অন্য কারও বিরুদ্ধে হলে আমাদের প্রতিক্রিয়া ভিন্ন হত। রাষ্ট্রের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে এ-ধরণের প্রতিক্রিয়া দূষণীয় ও পরিত্যাজ্য।</p> <p>নির্মোহ, নৈর্ব্যক্তিক দিক থেকে দেখলে এটা স্বীকার করতেই হবে যে এই বিদ্রোহ ছিল সেনাবাহিনীর গালে একটি চড় কষে দেওয়া। একই ভাবে, বিনা বিচারে বিডিআর-কে ক্ষমা করে দেওয়া সেই অপমানকেই আরও ঘনীভূত করবে। বাংলাদেশের জাতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর জন্য এটি অনেক বড় আঘাত। তাদের কর্তৃত্ব অনেক বেশি কমিয়ে দেওয়ার মত ঘটনা এটি। সাম্প্রতিক কালে সেনাবাহিনীর দৌরাত্ম্যে বিরক্ত হয়ে এই ঘটনায় খুশিতে বাজনা বাজানো খুব সহজ। ভুলে যাওয়া সহজ যে এই বাহিনীর ঐতিহ্য এবং অহংকারের সাথে আমাদের দেশের নিরাপত্তা ও সম্মান জড়িত। সেনাবাহিনীর অন্যায়গুলো শুধু বিডিআর-এ হয়নি বা শুধু এই ক’মাসে হয়নি। অনেক আগে থেকেই ঘটা আসা এই অনাচার আমরা চলতে দিয়েছি। সেই দায়বদ্ধতা মাথায় রেখি সমালোচনা করা উচিত, সেনাবাহিনী কোন ভাবে অপদস্থ হলে তাতে খুশি হওয়া উচিত নয়।</p> <p><span style="font-weight: bold;">নিরাপত্তাজনিত ব্যবস্থা</span><br />স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিডিআর হেড কোয়ার্টারে যাওয়া ছিল অনেক বড় ঝুঁকি। এই সিদ্ধান্ত সহ পুরো ব্যাপারে কৌশলের চেয়ে আবেগ কাজ করেছে বেশি। সরকার থেকে নাগরিক পর্যন্ত সকল পর্যায়ে আবেগের এই আতিশয্য খুব খারাপ লক্ষণ। এই সরকারকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে হবে, সেনাবাহিনীর গ্রাস থেকে রাজনীতিকে বের করতে হবে, নিজের দলের দস্যুবৃত্তি ঠেকাতে হবে। এতটা আবেগপ্রবণ হলে এর প্রতিটিই অর্জন করা দুষ্কর।</p> <p>ঘটনা যেভাবে গেল (বা যেতে দেওয়া হল), তাতে সেনাবাহিনীতে অসন্তোষের সম্ভাবনা থেকে যায়। এই বিবেচনায় বিডিআর-এর ভালর জন্যই হয়তো তাদের জেল-হাজতে যাওয়া উচিত ছিল। ডিজিএফআই ঘটনার আগে ঘাস খেলেও ঘটনার পর শোধ তুলতে ছাড়বে না। কত নালা-নর্দমায় বিডিআর জওয়ানদের লাশ পড়ে থাকবে, তা কে বলতে পারে? পাশাপাশি আইনের শাসনের প্রসঙ্গটি তো আছেই। সেনাবাহিনীর একটি অংশ লোভ এবং দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। তারা তাদের এই অবস্থান এমনি এমনি ছেড়ে দেবে না। এ-ধরণের লোক অনেক বেশি বেপরোয়া হয়। সরকার শুধু বিডিআর নয়, সেনাবাহিনীরও অভিভাবক। তাদের এভাবে অপদস্থ হতে দেওয়ায় নিয়মনিষ্ঠদের দলে ভেড়ানোর সুযোগ তৈরি হয়ে গেল।</p> <p><span style="font-weight: bold;">শুদ্ধস্বর</span><br />সেনাবাহিনীর ভ্রষ্ট সংস্কৃতি শুদ্ধ করতে এবং রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর এক রকম দখলদারিত্ব রোধ করতে সরকারকে খুব দৃঢ় অবস্থান নিতে হবে। যে-সরকার এক দিকে সামান্য বিডিআর-কে (কিংবা ছাত্রলীগকে!) সামলাতে পারে না, এবং অন্য দিকে সেনা কর্মকর্তা ও তাঁদের পরিবারকে নিরাপত্তা দিতে পারে না, তারা কীভাবে আস্থা পাবে সেনাবাহিনীর? এই শুদ্ধির জন্য যেই দৃঢ় স্বর প্রয়োজন, তা এখনও সরকারের মধ্যে দেখা যাচ্ছে না।</p> <p>এই ঘটনার মধ্য দিয়ে অনেক কথা বেরিয়ে এসেছে। এমনকি কিছু ব্যাপারে সেনাপ্রধানের নামও শোনা গেছে। এমতাবস্থায় সরকারের উচিত ছিল এমন পথে আগানো যাতে উভয় তরফ থেকেই কিছু মধ্যপন্থী মানুষ তাদের সমর্থন করে। বিডিআর-এর হত্যাযজ্ঞ সকাল নাগাদই হয়ে গিয়েছিল। তাদের ঘিরে ফেলা হয়েছিল, কোণঠাসা করা হয়েছিল। আর কিছুক্ষণ সময় দিলে, এবং সুনির্দিষ্ট কিছু কাজের জন্য ক্ষমা ঘোষনা করলে একটু পরে তারা নিজেরাই বিভক্ত হয়ে পড়তো। শুভবুদ্ধির মানুষেরা সামনে এগিয়ে আসতে পারতো। একই সাথে, সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও তাঁদের পরিবারের উপর আক্রমণ করে কেউ সাধারণ ক্ষমা পেয়ে যাওয়াটাও ভাল ভাবে নেওয়ার কোন কারণ নেই।</p> <p>খুনের অপরাধেরও ক্ষমা হয়, তবে তা বিচারকার্যের নিষ্পত্তি এবং অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চাওয়ার পর। এক্ষেত্রেও সেটি করা যেত বলে আমার মত। সেই সাথে এটি আবারও প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেল যে এই দেশে ভাংচুর করলে সব দাবি মেনে নেওয়া হয়। শাস্তি প্রদান কিংবা নিদেনপক্ষে বিচারকার্য হলে এটি প্রতিষ্ঠিত হত যে ন্যায্য দাবি মেনে নেওয়া হবে, তবে অন্যায্য পন্থা সহ্য করা হবে না।</p>Unknownnoreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-14251112.post-55255789788707360362009-02-20T02:35:00.003-05:002009-02-20T02:40:02.187-05:00গল্পঃ ৭৫ নম্বর বাড়ি<span style="font-weight:bold;">এক</span><br />“এবার থামবি, না কষে দু’ঘা লাগাবো?”<br /><br />হুমকিতেও নিলয়ের হাসি থামে না। রাগ হয়ে অর্ণব হাঁটা দেয়। নিলয় তাতে কোন বিকার দেখায় না। রাস্তার ধারেই পেট চেপে বসে হাসতে থাকে। খুব ভাল মতই জানে, তাকে ফেলে রেখে বন্ধুটি যাবে না। হলও তাই।<br /><br />“খবরদার এই বিটকেল হাসি দিবি না। ওঠ এবার। জায়গাটা ভাল না, নয়তো ঠিকই রেখে চলে যেতাম। শালা বদমায়েশ একটা।”<br /><br />“আমার বোনকে বিয়ে করবি তুই? পুরুত ডাকবো? তুই করলে আমি দুই বালতি গহনা যৌতুক দেবো।” বলেই আবার দমকা হাসিতে লুটিয়ে পড়ে নিলয়।<br /><br />“ওঠ না রে বাপ। সন্ধ্যা হয়ে আসছে। জায়গাটা ভাল না। কোন মানুষ থাকে না এখানে।” রাগ, লজ্জা, আর অদ্ভুত এক অস্বস্তি ঘিরে ধরছিল যেন অর্ণবকে। <br /><br />সুযোগ মত পালটা খোঁচা দিতে ছাড়লো না নিলয়। “আমি তো আসার আগেই বলেছিলাম। তখন তো খুব বাজনা বাজাচ্ছিলি।”<br /><br />অর্ণব বন্ধুর পাশে বসে পড়ে এবার। প্রাইমারি পেরিয়ে সেকেন্ডারিতে উঠেই নিলয়ের সাথে পরিচয়। সেই থেকে এক সাথে থাকা, খাওয়া, খেলা, ঝগড়া। রাতটা শুধু যে যার বাসায় ঘুমাতো। দু’জনেরই একটা করে বোন আছে। ভাই বলতে সাথের এই বন্ধুটি। এতগুলো বছরে মারামারি বাদে এই প্রথম বন্ধুর কাঁছে হাত রাখলো অর্ণব।<br /><br />“মাফ করে দে রে। সবাই তো এক রকম না। তবু আমরা এত নির্জীব বলেই হয়তো ওরা এত দুঃসাহসী।”<br /><br /> চিরকালের নির্বিকার, নিশ্চিন্ত নিলয় চেনা সুরে ফোড়ন কেটে বললো, “চল সুন্দরী, তোমার মেকআপ তুলতে হবে।”<br /><br />আজ আর পালটা জবাব না দিয়ে সাথে সাথে হাঁটা দিল অর্ণব। মাথায় ঘুরছিল রমিজের চায়ের দোকানের ঘটনাটা।<br /><br /><span style="font-weight:bold;">দুই</span><br />দুই বন্ধু আড্ডা দিতে বসেছিল এখানে।রাস্তার ধারের ছোট্ট দোকানটায় চায়ের কাপ মাত্র দু’টো। ওদের আড্ডার মাঝেই প্রৌঢ় এক ভদ্রলোক এলেন। আচারে নম্র, ব্যবহারে ভদ্র। ওরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জেনে খুশি হয়ে দু’চার কথা চলছিল।<br /><br />ভদ্রলোক চা খাবেন শুনে অর্ণব তার কাপটি দ্রুত শেষ করে এগিয়ে দেয়। কথা-প্রসঙ্গে ওর নাম শুনেই যেন ঘোর কাটলো তাঁর। দোকানদার রমিজ আলিকে বললেন চায়ের বদলে কলা দিতে, এ-বেলা নাকি চায়ের তিয়াশ কম।<br /><br />কিছুক্ষণ পর নিলয়ের কাপটি খালি হতেই ভদ্রলোক চা নিলেন। অর্ণবের রক্তচক্ষু দেখে সেই যে নিলয়ের হাসি শুরু হল, তা এখনও পর্যন্ত চলছে। পাশাপাশি চলছে অর্ণবের গজরানো, “আনকালচারড যত্তসব। এখনও সতের শ সালে পড়ে আছে। থাবড়া মেরে সোজা করে দেওয়া উচিত এদের।”<br /><br />এবার নিলয় গম্ভীর হয়ে প্রশ্ন করে, “তাতে লাভ?”<br /><br />অর্ণব ক্ষিপ্ত স্বরে বলে, “লাভ-ক্ষতি বুঝি না, এদের লাঠি-পেটা করা উচিত।”<br /><br />“দেহটাকে নাহয় শাস্তি দিলি, কিন্তু তাতে করে কি মনের বিষ আরও ঘন হবে না? দু’ঘা জুতার বাড়ি খেয়ে কি ও হিন্দুর মুখের পানি খেত? এই ক্রোধ কি কোন মুসলমানকে হিন্দু বাড়ির মিষ্টি খাওয়াতে পারবে? আমি আজ এক হাটে পাঁচ লাখ টাকা খরচ করলেও কি কেউ আমি স্রেফ হিন্দু বলে আমাকে কঞ্জুস ডাকা বন্ধ করবে?”<br /><br />রাগে ছটফট করতে লাগলো তবু অর্ণব। মনের একটা অংশ বাবা-মায়ের উপর রাগ হচ্ছিল, হিন্দুয়ানি নাম রাখার জন্য। যেন নামটা অর্ণব না হয়ে আব্দুল করিম সওদাগর হলেই এভাবে অপদস্থ হতে হত না। বাস্তবতা থেকে আরও কিছুটা সময় আড়ালে থাকা যেত।<br /><br />মনের অন্য অংশ সাথে সাথেই শুধরে দিল। পলায়নপর এই মানসিকতাই তো সমস্যা। মনে পড়ে, স্কুলে থাকতে পাঠ্যে পড়েছিল, বাংলাদেশের জনসংখ্যার শতকরা ১৫ ভাগ হিন্দু ধর্মাবলম্বি। অর্ণব তো চেনে শুধু এক নিলয়কেই। ওর চেনা প্রতি ১০০ জনে বাকি ১৪ জন কোথায়? তারা নেই, নাকি অর্ণবের মত অবস্থানে কেউ নেই? নাকি দু’টাই?<br /><br /><span style="font-weight:bold;">তিন</span><br />“চলে যা রে,” ঠান্ডা গলায় বলে অর্ণব, “এখানে থাকার কোন অর্থ নেই।” <br /><br />মৃদু হেসে নিলয় বলে, “তুইও বললি?”<br /><br />এবার অর্ণবের অবাক হওয়ার পালা। ফিরতি পথের নীরবতাটা খুব বেশি অস্বস্তিকর হয়ে উঠেছিল। এ-অবস্থায় বলবার মত কোন কথা নেই, এটুকু জেনেও সজ্ঞানে মুখ খুলেছিল। হয়তো অপরাধবোধ থেকে। যেন নিলয় চলে গেলে সেই বিচ্ছেদই হবে অর্ণবের প্রাপ্য শাস্তি।<br /><br />নিলয় বলতে শুরু করে নন্দিনীদি’র গল্প। “সেই ঈদের কথা মনে পড়ে? যেবার একটা ছাত্র কোরবানি দিলাম?”<br /><br />“ফাজলামো করতে হয় কেন সব কিছুতেই? ছাত্র কোরবানি দেব কেন? কোরবানির টাকা জমা করে একজন ছাত্রের পড়ার খরচ যোগানো একটা ভাল কাজ। কত মানুষ এল, কত প্রশংসা করলো সবাই। মনে থাকবে না কেন সেই ঈদের কথা? নন্দিনীদি আর অপর্ণা যেবার সাথে গেল। স্কুলের বার্ষিকীতে অপর্ণা একটা লেখা দিয়েছিল এ-নিয়ে। পরে সেটা পত্রিকায়ও ছাপা হল। ঐ ঈদ ভুলবো কীভাবে?”<br /><br />“দিদি কাজে ফেরার পর প্রথম প্রশ্ন – ইন্ডিয়া কেমন ঘুরলেন?”<br /><br />“স্রেফ ঠাট্টা এসব। এগুলো গায়ে মাখলে চলে? কেউ না কেউ তো বলবেই এগুলো।”<br /><br />“গায়ে না মাখলেও মনে লেগে থাকে কথাগুলো। বারবার বললে কার না খারাপ লাগে? দিদি যখন সেই ঈদের কথা বললো, তখন জবাব এল – জানি, জানি। যান ঠিকই, বলবে না আর কি। সব টাকা-পয়সা তো ঐ পাড়েই পাঠান। ক’বছর পর দেখবো সব বিক্রি করে ওখানেই চলে গেছেন।”<br /><br />দায়িত্ববোধ খুব বিলম্বিত অনুভূতি। কিছু না হারালে কিংবা কোন ভয় মনে না ঠুকলে দায়িত্বের পরিচয় দেওয়া খুব দুষ্কর। অর্ণবের মনে যেন সেই বন্ধ দরজাই খুলে গেল অবশেষে। পরিপার্শ্ব বিচারে অনেক দিন আগেই করা উচিত ছিল, এমন একটি প্রশ্ন অবশেষে বেরিয়ে এল। “আর কী কী বলিস নি তুই আমাকে?”<br /><br />বন্ধুর এই অনভ্যস্ততা টের পেতে নিলয়ের সময় লাগলো না। বিব্রত বন্ধুকে স্বাভাবিক করার জন্য কথা ঘোরানোর চেষ্টা করলো, কাজ হল না।<br /><br />“গেল বছর বাসায় একটা নতুন সেলাই মেশিন এসেছে, দেখেছিস?”<br /><br />“হ্যাঁ, কাকীমা যেটা দিয়ে আমার জন্য জামা বানিয়ে দিলেন একটা।”<br /><br />“ওটা ঋণের টাকায় কেনা ছিল। সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্প থেকে দেওয়া ঋণ। প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল ওরা একটা। দ্রুততম সময়ে শ্রেষ্ঠ সদ্ব্যাবহারের জন্য পুরস্কার দেওয়ার কথা ছিল।”<br /><br />“কথা ছিল মানে?”<br /><br />“মা টাকা ফেরত দিয়েছিল সবার আগে। লাভও হয়েছিল বেশ ভালই। প্রথম পুরস্কার জিতেছিল। পুরস্কার ঘোষনার ক’দিন আগে জানলাম যে অনুষ্ঠানে আমাদের যেতে হবে না।”<br /><br />“এটা কেমন কথা? যাবি না কেন? পুরস্কার কে নেবে তাহলে?”<br /><br />“পুরস্কারের খাতা থেকে মা’র নাম কেটে দেওয়া হয়েছিল, তাই।”<br /><br />“নাম কাটলো কেন? এমপি’র কোন আত্মীয়কে দেওয়ার জন্য?”<br /><br />“হিন্দু, তাই। জিজ্ঞেস করেছিলাম। বললো এত বড় আয়োজনের প্রথম পুরস্কারে একটা হিন্দু নাম কেমন দেখায়, তাই বাদ। আগামী বার কষ্ট করে আবেদনপত্র জমা দিতেও মানা করলো।”<br /><br />“অভিযোগ করিস নি কেন?”<br /><br />বাঁকা হাসি হেসে নিলয় পালটা প্রশ্ন করলো, “যে-অন্যায় চোখের সামনে ঘটবার সময় কেউ থামায় না, সে-অন্যায়ের প্রকাশ্য প্রতিবাদ করে সেই কষ্ট দ্বিতীয়বার অনুভব করার অর্থ কী? মুখের পানি খেলে ধর্ম যায়, কিন্তু ইলেকশনের পর ঠাপানোর সময় ধর্ম যায় না।”<br /><br />আবারও অস্বস্তিকর সেই নীরবতা নেমে এল দুই বন্ধুর মাঝে। এবার আর অর্ণব জোর করে কোন কথোপকথন শুরুর চেষ্টা করলো না।<br /><br /><span style="font-weight:bold;">চার</span><br />দুই বন্ধু বাসার মোড়ে আসতেই দেখলো নন্দিনী দি রিক্সা থেকে নামছে। বন্ধুর বড় বোন হলেও দিদি অর্ণব-অপর্ণার কাছে সহোদরের চেয়েও আপন। অর্ণবের মা স্কুলের পর দেরি করে বাড়ি ফেরা পছন্দ করতেন না। কোন খেলা বা অনুষ্ঠান থাকলে দিদি সাথে করে বাসায় দিয়ে আসতো, যাতে অর্ণবকে বকা খেতে না হয়। দিদি না থাকলে অপর্ণার স্কুল থেকে বনভোজনে যাওয়া হত না কোনদিন। সংকোচের বয়সে কথা বলার জন্য দিদি না থাকলে জীবনের নোংরা নতুনত্বের ধাক্কাটা হয়তো অনেক জোরে লাগতো ওদের দু’ভাইবোনের গায়ে।<br /><br />যে-মানুষটার গন্ধ দু’মাইল দূর থেকেও চিনতে পারতো, আজ সেই মানুষটাকেই যেন অনেক অচেনা লাগছিল। হয়তো সে-কুণ্ঠা অজান্তেই অভিব্যক্তি পেয়ে গিয়েছিল। দুই ভাইকে দু’হাতে কাছে টেনে নন্দিনী প্রশ্ন করলো, “কী রে, আজ এত গোমরা কেন? আবার ঝগড়া করেছিস?”<br /><br />“নাহ, ঝগড়া হয়নি। হাঁটতে বেরিয়েছিলাম। আজকে ধকলটা একটু বেশি গেছে।”<br /><br />অর্ণবের মাথায় স্নেহের পরশ বুলিয়ে নন্দিনী বললো, “ঘরে আয়, সরবত বানিয়ে দেই।”<br /><br />“আজ থাক, আরেকদিন খাবো। আজ বিকেলটা মাকে সময় দেওয়ার কথা। ঘরের কিছু কাজ আছে।” <br /><br />অস্বস্তি এড়াতে দিদিকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হাঁটা শুরু করলো অর্ণব। নেবার ভাগী হওয়ার সময় পুরোটাই নিয়েছে, দেবার বেলায় পারলো না। ঘটনাগুলো আগে জানলে কিছু করতে পারতো কিনা সে-প্রশ্ন অবান্তর। অজ্ঞানতার জন্য আদৌ নিজেকে ক্ষমা করতে পারছিল না অর্ণব। <br /><br />দৃশ্যত বিব্রত বন্ধুকে সঙ্গ দিতে নিলয় গেট পর্যন্ত এগিয়ে এল। “এসব মাথায় নিস না। সমাজ কখনও এক ধাক্কায় বদলায় না। সংশয় আর সংকীর্ণতাগুলো রাতারাতি আসেনি, রাতারাতি যাবেও না। নিজের জায়গায় ভাল থাক, সময়েই সব ঠিক হয়ে যাবে।”<br /><br />“হবে না রে। সময় তো কম গেল না। এতগুলো বছরেও অবিশ্বাসগুলো ঝেড়ে ফেলতে পারিনি আমরা। এটা তো স্পষ্ট যে এই নিষ্ক্রিয়তা কাজে আসছে না। সরব হতে হবে, এদের মুখোমুখি হতে হবে। নইলে…”<br /><br />মাঝপথে থামিয়ে দিল নিলয়। “কাগুজে বিপ্লব বাদ দিয়ে বাড়ি যা। সন্ধ্যা হয়ে আসছে। এ-নিয়ে পরে কথা বলা যাবে। আমি যাই দিদির সাথে আড্ডা মারি গিয়ে।”<br /><br />“তোরা দিদির ব্যাংকের কাছাকাছি কোথাও বাসা ভাড়া নিস না কেন? দিন দু’বার দিদিকে এতটা পথ আসা-যাওয়া দিতে হয় না তাহলে। ওদিকে একটা বাসার কথা বলেছিলাম তোকে। ঐ যে, ৭৫ নম্বর বাড়িটা। যাব-যাচ্ছি আর খোঁজ নিলি না তো তুই আলসেমি করে।”<br /><br />“খোঁজ অনেক আগেই নিয়েছি। ভাড়া দেবে না।”<br /><br />“ভাড়া দেবে না কে বললো? আমি তো গতকালও টু-লেট লেখা সাইন ঝুলতে দেখলাম।”<br /><br />জবাবে নিলয় শুধু মুচকি হাসে।<br /></span>Unknownnoreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-14251112.post-56487514033888289772009-02-20T02:33:00.001-05:002009-02-20T02:35:37.257-05:00গানবন্দী জীবনঃ ওবলাডি ওবলাডাপ্রিয় মানুষের প্রতি বিশ্বাস সব সময়ই মাত্রাছাড়া হয়। চিন্তা ও বুদ্ধির স্বাধীনতার শিখরে পৌঁছেও মানুষ প্রিয়ত্বের কাছে ন্যুব্জ হয়ে থাকে আজীবন। মানুষ কীভাবে যেন অন্যের ছায়া হয়ে যায়। অন্য কারও হাসিতে মন খুশি হয়ে ওঠে, অন্য কারও দুঃখে মন খিটখিটে হয়ে ওঠে। অন্যের প্রিয় গান নিজের প্রিয় হয়ে ওঠে।<br /><br />বড় হওয়ার সুবাদে প্রায় সব নিকটাত্মীয়ের কাছেই এই যত্নটুকু পেয়েছি। আমার ভাল লাগে, তাই আমার ছোট মামা মুহম্মদ জাফর ইকবালের সব বই পড়ে শেষ করে ফেলেছিল। চলন্ত গাড়ির পাশে পাশে কাউকে দৌঁড়াতে দেখলে আমি খুশি হতাম, তাই আমার মামা ট্রেনের পাশে পাশে ছুটতো। সেই সময়গুলোর কথা।<br /><br />আমার নানার ছিল এলপি’র এক বিশাল সংগ্রহ। রেকর্ড প্লেয়ারে সেগুলো চলতো খুব। পুরনো দিনের গান কিংবা পল্লীগীতি সেই বয়সে পোষাতো না তেমন একটা। সৌভাগ্যক্রমে, বিটলসের গান ছিল নানার খুব প্রিয়। পুরনো আমলের সেই গানগুলোর অর্থ না বুঝলেও তালে তাল মেলাতাম খুব। হয়তো তালের জন্যই ‘ওবলাডি ওবলাডা’ ছিল খুব প্রিয় গান। আমার পছন্দ, তাই নানা বারবার বাজাতো এই গান। গানের কথা কিছুই বুঝতাম না সেই বয়সে, শুধু ‘ও জ্যেডি, ও জ্যাডা’ বলে লাফালাফি করতাম। আর ছিল এলপি উলটে দেওয়া কিংবা পিন নাড়াচাড়ার আনন্দ। অগণিত এলপি আর পিন ভাঙলেও কোন শাসন পোহাতে হয়নি।<br /><br />সে-সময় নানারা থাকতো সেন্ট্রাল রোডের এক বাসার নিচতলায়। সেখানেই আমার বড় হয়ে ওঠা। সকাল হলে দুই খালা তারস্বরে রেওয়াজ করতো, দুপুর হলে ছোট মামা চোখে গেঞ্জি পেঁচানো অবস্থায়ই কাছে ডেকে ‘অভি রে, অর্ণব রে’ করতো, বিকেল হলে বড় মামা বারান্দায় খেলতো। সেই সাথে ছিল গ্যারেজের সামনের জায়গাটুকুতে ক্রিকেট খেলা। নিঃসন্তান বাড়িওয়ালা শত রাগী হলেও আমার বেলায় প্রশ্রয়ী ছিল অনেক। টুকিটাকি দুষ্টামির কথা তো বাদই দিলাম।<br /><br />একবার ‘কারেন্ট কী জিনিস’ জানবার ভূত ঢুকলো মাথায়। টেবিল ঠেলে বারান্দার এক সকেটের পাশে নিলাম। সেই টেবিলে উঠে একটি তারের দুই মাথা সকেটে ঢুকিয়ে দিলাম সুইচ টিপে। বিদ্যুতের ধাক্কায় টেবিল থেকে ছিটকে পড়লাম। সারা বাড়ির ফিউজ জ্বলে গেল। আরেকবার দাওয়াতে যাওয়ার তাড়ায় বারান্দার ‘আড়াল’ কাজে লাগিয়ে কাপড় বদলাচ্ছিলাম। যেই না প্যান্ট খুললাম, অমনি কাছের এক উঁচু দালান থেকে অট্টহাসি। সেই বেইজ্জতি ভুলতে পারিনি এখনও।<br /><br />দিনের বেলা নানা-নানির আদরে সময় কাটতো। নানা বালিশে হেলান দিয়ে তাস খেলতো, আর নানি পাশের মোড়ায় বসে পান-সুপারি বানাতো। খেলতে খেলতে নানা আমাদের উপর পা তুলে দিত। ছোট ভাই তখন নানির কাছে অনুযোগ করে বলতো, নানি দেতো নানা তী তলে, নানা পা দেয়, নানার পা তা তেতে দাও তো!<br /><br />সেই বাসাতেই ১৯৯১-এর নির্বাচন দেখেছিলাম। রাত জেগে বিটিভির বোর্ডে ফলাফল দেখানো হচ্ছে, মাঝে চলছে আনন্দমেলা, চলচ্চিত্র, গানের অনুষ্ঠান। একটু পর পর খাওয়া-দাওয়া, রাতভর আড্ডা আর গালগপ্পো। শবে-বরাত এলে ছাদে উঠে লুকিয়ে আতশবাজি পোড়াতাম। রাস্তার ঠিক উলটো দিকেই ছিল মানিক মামার মুদির দোকান। আমাকে আসতে দেখলেই এক বোতল কোক খুলে রাখতো। প্রতিদিন নানি কোক খাওয়াতো, নানা ঢাকা ক্লাব থেকে খাবার এনে খাওয়াতো।<br /><br />নানাদের সেই ভাড়া বাসাতেই প্রথম দেওয়াল টপকানো শিখেছিলাম। একেক দিনে একেক রকম বোলিং অ্যাকশন নকল করে বোলিং শিখেছিলাম। ব্রিটিশ কাউন্সিল থেকে এনে ইন্ডিয়ানা জোনস, কিং সলোমন্স মাইন, স্টার ওয়ারস, সব দেখেছিলাম সেই বাসায়।<br /><br />চুরির উৎপাতের কারণে প্রতি রাতে দরজা-জানালায় খিল দিয়ে শুতে হত। বড়দের মত এই কাজটা করায় আমার ছিল ব্যাপক উৎসাহ। যেমন ইচ্ছা, তেমন কাজ। এক রাতে আমি ভুলে গেলাম বাথরুম আর বেডরুমের মাঝের ড্রেসিং রুমের দরজায় খিল দিতে। সকালে উঠে দেখি ঘর ফাঁকা।<br /><br />আমার নানা স্মিত হেসে বলেছিল, ব্যাপার না।<br /><br />ওবলাডি ওবলাডা, লাইফ গোজ অন।Unknownnoreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-14251112.post-37434555109620305872009-02-20T02:31:00.001-05:002009-02-20T02:32:50.813-05:00গানবন্দী জীবনঃ মিস লংকাদুই ছেলেকে নিয়ে আমাদের মায়ের পরিকল্পণাগুলো অনেক দূরপ্রসারী ছিল। ছোট ভাইটি আমার চেয়ে প্রায় সাড়ে চার বছরের ছোট। তখনও তার কেঁদে-কেটে স্কুলে যাওয়ার বয়স। আমি পড়ি চতুর্থ কি পঞ্চম শ্রেণিতে। ভাইকে নিয়ে তখনও তেমন নির্দিষ্ট পরিকল্পণা না থাকলেও আমার বেলায় ছিল। মায়ের ইচ্ছা ছিল আমাকে নানা-দাদার মত ডাক্তার বানাবে। শুধু ভাবলেই হল না। ডাক্তারি শেখা অনেক কঠিন ব্যাপার। আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে।<br /><br />যেমন চিন্তা, তেমন কাজ। ব্যাঙ-কেঁচো-তেলাপোকার ছবি আঁকার পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে আমাদের দুই ভাইকে ভর্তি করা হল ছবি আঁকার স্কুলে। বড় বোর্ড, হরেক রকম পেনসিল, আর গোল করে পাকানো আর্ট পেপার নিয়ে আমরা দুই ভাই প্রতি সপ্তাহে আর্ট স্কুলে যেতাম। গান বা ছবির প্রতি অনুরাগ নয়, বরং বিকেলে ঘর থেকে বের হতে পারাই ছিল মূল আকর্ষণ।<br /><br />কাঁচা বয়সে কারও উপর কিছু চাপিয়ে দিতে নেই। বিশেষ করে নান্দনিক ব্যাপারে। আমাদের শিক্ষক এ-ব্যাপারে সচেতন ছিলেন। তিনি প্রথম দিন ক্লাসে এসেই বললেন “ফ্রি হ্যান্ড ড্রয়িং” করতে। লোকজনের দেখাদেখি নৌকা আঁকলাম, নদীর পাড়ের কুড়েঘর আঁকলাম, বাড়ির পেছনে কলা গাছের পাতা আঁকলাম, আর আঁকলাম মেঘ এবং পাখি। এই একই ছবি এঁকে চললাম প্রায় দু’তিন মাস। শিক্ষক মহাশয়ও “ফ্রি হ্যান্ড ড্রয়িং”এর বাইরে কিছু করান না, আমিও নতুন কিছু আঁকতে পারি না।<br /><br />ছবি আঁকা এবং গান গাওয়া, এই দু’টি গুণ একেবারেই নেই দেখে এই দিকের শিল্পীদের অনেক শ্রদ্ধার চোখে দেখি আমি। হাজারো ফাঁকিবাজি সত্বেও সেই শিক্ষক তাই আমার পরম আরাধ্য ছিলেন। এমনিতেও গল্প বেশি, পড়া কম ধরণের শিক্ষকরা ছাত্র-ছাত্রীদের প্রিয় হন। ভূতের গলি মসজিদের সামনের ময়লার ডিপো কিংবা ঝড়-বাদলায় ড্রয়িং বোর্ডকে ছাতা হিসেবে ব্যবহার করতে হওয়া তাই গায়ে মাখতাম না। কিছু না পড়ালেও অভিভাবকদের তুষ্ট রাখতে আমাদের ঠিক দেড় ঘন্টা আটকে রাখা হত সেই স্কুলে। দেড় ঘন্টার আড্ডা আর ঘর-বাড়ি আঁকা মন্দ লাগতো না।<br /><br />এক বিকেলে গিয়ে দেখি ক্লাস ফাঁকা। স্যারের মুখেও কেমন যেন অন্য রকম রোশনাই। আয়োজন করে বসতে না বসতেই বললেন, আজ ছুটি। ছাত্র-অভিভাবক নির্বিশেষে সবাই আনন্দে বাড়ি ফিরে যাওয়া শুরু করলো। বুঝে গেলাম, সবাই এমন কিছু জানে যা আমার অজানা। লজ্জা-শরমের মাথা খেয়ে স্যারকে জিজ্ঞেস করলাম ছুটির কারণ। অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে স্যার বললেন, আজকে মিস লংকা!<br /><br />ঘরে ফেরার পথে খেয়াল করলাম, পথ-ঘাটে মানুষ অস্বাভাবিক রকম কম। বাসায় এসে দেখি সবাই টিভির সামনে বসে আছে অসীম আগ্রহে। সেখানেই মিস লংকার সাথে পরিচয় আমার। ‘এসব মানুষে দেখে?’ জাতীয় একটা মুখ করে ঠিকই সোফার এক কোণে বসে পড়লাম। বাকিটা ইতিহাস। চা-বাগানে ববিতা দৌঁড়াচ্ছে, পেছন পেছন ছুটছে নায়ক। মূক-বধির নায়িকাকে ফুসলাতে গাইছে – চুরি করেছ আমার মনটা, হায়রে হায় মিস লংকা! নায়িকার অসম্মতি ও আনুষাঙ্গিক নানাবিধ নাটকীয় বালা-মুসিবত অতিক্রম করে নায়ক বাধ্য হয়েই পিতার পছন্দে বিয়ে করলো। দুঃখ-ভারাক্রান্ত মনে বাসর ঘরে ঢুকতেই কোমর দুলিয়ে কিন্নরকণ্ঠী লাল-টুকটুক বৌ গেয়ে উঠলো সেই গান। মনের খবর হায় ছিল না জানা, তোমার বাড়িটাই ছিল না চেনা, লগ্ন এলো এত দিন পরে, হাসি মেলে চেয়ে দেখো না! অন্তরে আজ বাজে ডংকা, হায় রে হায় মিস লংকা। আহা, শেষে এসে মনে কী শান্তি!<br /><br />ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাওয়া এই গানটি পথ-ঘাটে শুনলেই সেই দিনটায় ফিরে যায় মন। ডাস্টবিনের গন্ধ, পঁচা-গলা পানি, আর ঝিরঝির বৃষ্টি উপেক্ষা করে মিস লংকার কাছে যাওয়ার তাড়না। স্থির হয়ে বসে থেকেও মনে মনে নেচে ওঠা। সেই সময়গুলোয়, যখন অধমের চিত্রাঙ্কনের গুণেই কিনা জানি না, দুই দুইটি আর্ট স্কুল ব্যবসা গুটিয়েছিল ভূতের গলি এলাকায়।Unknownnoreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-14251112.post-34194370901164089302008-12-30T13:46:00.002-05:002008-12-30T13:49:20.840-05:00ময়ূরপংখী রাজনীতি<span style="font-weight:bold;">১. কালের স্থিরচিত্র</span><br />আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪-দলীয় মহাজোট বিপুল বিজয় অর্জন করেছে ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে। ফলাফল বলছে, দেশে এখন কার্যত কোন বিরোধী দল রইলো না। ইতিহাসের পরিহাস সবসময় নির্মম হয় না। এক কালে অনেক দুর্নাম কামিয়ে আওয়ামী লীগ 'বাকশাল' তৈরি করেছিল। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ, নাশকতা, দুর্ভিক্ষ সহ অনেক রকম কারণ হয়তো ছিল, কিন্তু তবু এই পদক্ষেপ চিরকালের জন্য প্রশ্নবিদ্ধ করে দিয়েছে আওয়ামী লীগকে। ২০০৮ সালে কার্যত আরেকটি 'বাকশাল' স্থাপিত হল। পার্থক্য হল, এবারে এটি জনগণের মত ও সমর্থনেই ঘটছে। গোড়া সমর্থকেরা সেই চোখেই দেখবেন বলে ভয় হচ্ছে। স্রেফ মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য বলা, এটি কালের স্থিরচিত্র ছাড়া আর কিছু নয়। ভোটের হিসাব অনেক আনন্দের হলেও বাস্তবতা কিছু সচেতনতা দাবি করে।<br /><br /><span style="font-weight:bold;">২. অস্বাভাবিক ঐক্যঃ</span><br />সময়ের প্রয়োজনে অনেক রকম অস্বাভাবিক ঐক্য হয়। এ-ধরণের কৌশলগত বা শর্তসাপেক্ষ ঐক্য দীর্ঘমেয়াদে ফাটলেই পরিণত হয়। দৃশ্য শত্রুর গতিবিধি জানা যায়, তার ব্যাপারে পরিকল্পণা করা যায়। অজানা, অদৃশ্য শত্রুর বেলায় এই সুবিধা নেই। আওয়ামী লীগ এই মুহূর্তে এমনই একটি ঐক্যের সুফল ভোগ করছে। জয় মহাজোটের হলেও শাসন করবে কার্যত আওয়ামী লীগ। যে-দলগুলো নিয়ে মহাজোট গঠিত, তারা কেউই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সমর্থক নয়। বিশ্বস্ত ভোটার বাদে যাঁরা মহাজোটকে ভোট দিয়েছেন, তাঁদের বৈশিষ্ট্য দেখা যাক।<br /><br /> 1. তরুণ ভোটঃ এবারে প্রায় দেড় কোটি নতুন ভোটার অংশগ্রহণ করেছেন নির্বাচনে। এরা নতুন যুগের মানুষ, এরা নিত্য-নতুন সুযোগের মধ্যে বড় হয়েছে, এরা বাইরের দেশের অনুকরনে অভ্যস্ত, এরা বাইরের রাজনীতির সাথে দেশের তুলনা করে। এরা সাফল্যের পরিমাপ করবে বহির্বিশ্বের সাথে। তরুণ ভোটের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল, এরা খুব বেশি অস্থির। যুদ্ধাপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে আগামী নির্বাচনে এরা আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে না, এই ভোট আওয়ামী লীগের পক্ষে ধরে রাখা সম্ভব না। এই কাজটি করার অন্য দিক হল, আওয়ামী লীগ আর কখনও মুক্তিযুদ্ধের ক্ষত বেঁচে রাজনীতি করতে পারবে না।<br /><br /> 2. জাতীয় পার্টিঃ লেজে অব হোমো এরশাদ বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে পল্টিবাজ ও সুবিধাবাদী রাজনীতিক। বিএনপি-জামায়াত গোষ্ঠী এত বড় গর্ত খুড়েছিল নিজের জন্য, যে যে-কেউ এই নির্বাচনে জয়লাভ করতো। হুমকি-ধামকি দিলেও এরশাদ মহাজোট ছেড়ে যাননি এই বাস্তবতা বুঝতে পেরেই। বিএনপি ও জাতীয় পার্টি একই কাতারের দল হওয়ার পূর্ণ সুবিধা নেবার ক্ষেত্র প্রস্তুত এখন তার জন্য। এই ভোটগুলোও আওয়ামী লীগ আর কখনও পাবে না।<br /><br /> সিলেট বা ঢাকায় সকল আসন জেতার মত জনপ্রিয় দল আওয়ামী লীগ না। বগুড়ায় একাধিক আসন জেতার মত দল আওয়ামী লীগ না। এই ভোটগুলো আওয়ামী লীগ আর পাবে না। এগুলো স্রেফ দৈব দুর্বিপাক। তারেক জিয়া বাড়াবাড়ি রকম চুরিদারি না করলে, খালেদা জিয়া তাঁর ছেলেদের ব্যাপারে অন্ধ না হলে, পিন্টুর মত গুন্ডাদের মনোনয়ন না দিলে, কাউকে মনোনয়ন দিলে পুরো পরিবারশুদ্ধ মনোনয়ন না দিলে এই সৌভাগ্য আওয়ামী লীগের হত না। এই ঐক্য চরম অস্বাভাবিক। ব্যবসা-মনস্ক জাতীয়তাবাদীরা আওয়ামী লীগের সমর্থক নন। সেনাবাহিনী বা ইসলামী শাসনের প্রবক্তারা আওয়ামী লীগের সমর্থক নন। এঁদের নব্যপ্রাপ্ত সমর্থক ভেবে এঁদের আদর্শ অবলম্বন করেও আওয়ামী লীগ এই ভোটগুলো পাবে না।<br /><br /> 3. বামপন্থী ভোটঃ অনেকটা বাধ্য হয়েই বাম ঘরানার মুক্তমনা মানুষেরা ভোট দিয়েছেন আওয়ামী লীগকে। ধর্মব্যবসায়ী দলগুলোর সাথে আঁতাত করার চেষ্টা করে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের রাজনীতিকে নতুন করে মুসলমানী দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। আওয়ামী লীগ ড্যামেজ-কন্ট্রোল করার জন্য যতই "আমরা আসলে ওদের প্রগতিশীল করতে চেয়েছিলাম" বলুক না কেন, অসাম্প্রদায়িক কেউ এ-কথায় ভুলেননি। এই ভোটও আর পাওয়া যাবে না।<br /><br /> 4. বীতশ্রদ্ধ মধ্য ও নিম্নবিত্তঃ বাংলাদেশের মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মৌলিক পার্থক্য খুব কম। যুদ্ধাপরাধী তোষণের দায়ে বিএনপি দুষ্ট হওয়ার ব্যাপারটি বাদ দিলে তেমন কোন তফাৎ নেই। বিএনপি'র বদলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেও দ্রব্যমূল্য ও দুর্নীতি বেড়েই চলতো (হয়তো এতটা নয়)। আওয়ামী লীগের এই বিজয় যতটা অর্জন, তার চেয়ে উপহার বেশি। অতএব, এই আশংকা অবাস্তব নয় যে আওয়ামী লীগ একে যথাযথ মূল্যায়ন করবে না। বিজয়ের মাত্রার সাথে সমানুপাতিক উন্নয়ন না করলে দলহীন এই সাধারণ মানুষ আগামী নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের সাথে থাকবে না।<br /><br /><span style="font-weight:bold;">৩. জামায়াত ও যুদ্ধাপরাধী সমীকরণঃ</span><br />এই নির্বাচনের মূল ম্যান্ডেট আওয়ামী লীগের পক্ষে না, যুদ্ধাপরাধীদের বিপক্ষে। সাম্প্রতিক সময়ে মূলত বিভিন্ন অরাজনৈতিক সংগঠনের চেষ্টায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টি সামনে এসেছে। নির্বাচন পিছিয়ে জানুয়ারি মাসে নেওয়ার জন্য বিএনপি-জামায়াত জোটের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, গণহত্যা, অত্যাচার, যুদ্ধাপরাধী বিচার, ইত্যাদি ব্যাপারে যেই গণসচেতনতা গড়ে উঠেছে, তার পেছনে আওয়ামী লীগের তিল পরিমাণ অবদান না থাকলেও এর পূর্ণ সুফল ভোগ করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলীয় মহাজোট।<br /><br />অতীতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দু'টি সুযোগ পাওয়া গিয়েছিল। স্বাধীনতার পর একবার, ’৯৬ এর নির্বাচনের পর আরেকবার। সেই গণজাগরণ আওয়ামী লীগের তৈরি ছিল না, আওয়ামী লীগ সেই গণদাবির প্রতি কোন শ্রদ্ধাও দেখায়নি। জামায়াতের সাথে বরং আওয়ামী লীগ কৌশলগত আঁতাত করবার চেষ্টাও করেছিল এক কালে। মাত্র ক’দিন আগে তারা প্রায় রাজনৈতিক মুসলমানি করে বসেছিল মোল্লাদের সাথে চুক্তি করে। জামায়াত ও যুদ্ধাপরাধী যে একই কাতারের, সেই সত্য আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করেনি। এর সব কিছুই সামাজিক, অরাজনৈতিক অর্জন। এই নির্বাচনের আগে বিজয় দিবস নিয়ে বাঙালি গর্বে সরব হওয়ার পেছনে আওয়ামী লীগের অবদান একেবারেই নগণ্য, অথচ এই আন্দোলনগুলোই আওয়ামী লীগকে ২৬২টি আসন এনে দিয়েছে।<br /><br />ক্রমে শক্ত হয়ে ওঠা জামায়াতকে একমাত্র এই সমীকরণটিই ডুবাতে পারতো যে ‘জামায়াত ও যুদ্ধাপরাধী সমার্থক’। এই কথা মানুষের মনে ঢুকিয়ে দেওয়ার মত নৈতিক অবস্থান আওয়ামী লীগের ছিল না। জামায়াত দেরিতে হলেও এটি বুঝতে পেরেছে। মুক্তিযুদ্ধের কথা তাদের ইশতেহারে ঢুকিয়েছে, বিজয় দিবস বা বাংলাদেশের স্বাধীনতার মত ঘটনাগুলোকে মেনে নিয়েছে (যা এগুলোকে পর্যায়ক্রমে গুরুত্বহীন ও কথার কথা করবার প্রক্রিয়ায় আছে)। আগামী নির্বাচনের আগে জামায়াত নিজের শরীর থেকে যুদ্ধাপরাধের সব দৃশ্যমান চিহ্ন মুছে ফেলে স্রেফ একটি “ইসলামিক” দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। এই বিজয়ের পেছনে তাই জামায়াতের বিলম্বিত উপলব্ধির ভূমিকা ব্যাপক।<br /><br />সংবিধানের যাবতীয় কলঙ্কজনক ধারা এবং যুদ্ধাপরাধীদের চূড়ান্তভাবে শেষ করে দেওয়ার সুযোগকে আওয়ামী লীগ দলীয় জয় হিসেবে নিয়ে কতটা সুনিপুণ ভাবে হারায়, সেটাই দেখার বিষয়।<br /><br /><span style="font-weight:bold;">৪. বিজয়ী কুপ্রার্থী</span><br />অতি-খুশিতে বগল বাজানো শুরু করবার আগে বিবেচনার নেওয়া উচিত যে এই দুর্যোগের কালেও জামায়াত প্রায় প্রতিটি আসনেই ভোট পেয়েছে বেশি। কমান্ডার নিজামি হেরে গেলেও আড়াই লাখ ভোটের মধ্যে মাত্র ২২ হাজার ভোটে হেরেছেন। সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরীর মত পাপীও জিতে গেছেন। এই বিষয়গুলো আমলে নেওয়া উচিত আওয়ামী লীগের, সাথে তাকিয়ে দেখা উচিত নিজ দলের এমন অনেক প্রার্থীর দিকে যাঁরা সাধারণ অবস্থায় জিততেন না। এই তালিকায় এরশাদ থেকে শুরু করে কামাল আহমেদ মজুমদার পর্যন্ত অনেকেই আছেন। নৌকার এই সুদিনেও ঢাকা শহরে কি এর চেয়ে ভাল প্রার্থী মিলতো না?<br /><br />সাম্প্রতিক কালে বিএনপি’র মত আওয়ামী লীগের ভেতরেও রাজনৈতিক সার্জারির মাধ্যমে নেতা আমদানির প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। সজীব ওয়াজেদ জয় দেশে গেলে শিশুদের মেলা কিংবা অধুনা পত্রিকায় তাঁকে বিদগ্ধ রাজনীতিক হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা তারই নিদর্শন। আগামী কিছুদিনে এই প্রক্রিয়া অব্যহত থাকার সম্ভাবনা অনেক বেশি।<br /><br />স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগের জন্য সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ ছিল সমাজতন্ত্রের পতন। বিএনপি ও জাতীয় পার্টি নিজ নিজ শাসনামলে অনেক কর্মী রিক্রুট করলেও আওয়ামী লীগ তেমন কিছুই করতে পারেনি। সোভিয়েত রাশিয়ার পতন একঝাঁক নিবেদিতপ্রাণ রাজনীতিক দিয়েছে। আওয়ামী লীগ তাঁদের যথাযথ মূল্যায়ন করেনি কখনই। সামনেও করবার সম্ভাবনা ক্ষীণ। প্রমাণ হল, দেশ থেকে খবরে জানলাম ছাত্রলীগ এরই মধ্যে হল দখলে নেমেছে।<br /><br /><span style="font-weight:bold;">৫. স্বপ্নের সিড়ি বেয়ে স্বর্গে নামি</span><br />সাময়িক এই বিজয় আওয়ামী লীগ কতটা কাজে লাগায়, সেই ব্যাপারে আমি ব্যক্তিগত ভাবে সন্দিহান। দেশটা কিছু লম্পটের হাত থেকে বেঁচে যাওয়ায় অনেক খুশি হলেও তাই পাশাপাশি রয়ে গেছে হতাশ হওয়ার ভয়। দিনভর অনেক রকম কথা শুনেছি। ‘যাকে মাথায় তোলা হয়, তার দেওয়া ছোট আঘাতও লাগে বেশি’। ‘দ্য হাইয়ার ইউ রাইজ, দ্য হার্ডার ইউ ফল’। ‘আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে কী লাভ, আগেও তো যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কথা বলেছিল’। এগুলো সত্যকথন, এগুলো আওয়ামী লীগ কানে তুলবে না।<br /><br />তেমন কোন প্রচার ছাড়াই ‘না’ ভোটের প্রতি স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন দেখা গেছে এবার। আমেরিকার রিপাবলিকান পার্টির খুব ঘৃণ্য একটি অভ্যাস হল তাদের সমর্থন না করলে ভোটারদের দেশাত্মবোধ নিয়ে প্রশ্ন তোলা। এবারেও নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের সমর্থকেরা ‘না’ ভোট দেওয়াকে নির্বুদ্ধিতা কিংবা রাজাকারকে ক্ষমতায় আনার সাথে তুলনা করেছেন। কেউ ভেবে দেখেননি যে নিজামির সাথে মিটিং করা কিংবা দেশময় অতিরিক্ত আত্মপ্রচারের মত ‘বুদ্ধিমান’ কাজ আওয়ামী লীগই করেছে, সাধারণ ভোটারেরা না।<br /><br />হয়তো উদ্দেশ্য বা আদর্শের বদলে ব্যক্তিপূজা থেকে গঠিত বলেই বিএনপি তুলনামূলকভাবে গতিশীল একটি দল। তারা নতুন ভোটারদের কাছে যাবে, অনেক ভাল ফল বয়ে আনবে। পরবর্তী নির্বাচনের সময় হয়তো দেশপ্রেম নামক চিজটি এমন “হিপ” থাকবে না। তখন হয়তো মুম্বাইয়ের নায়ক-নায়িকার মত “আমার বাংলাদেশ”ও “কুল” থাকবে না। হয়তো সেবার কোন ঠিকা বুয়া দু’দিন আগে তেহকেই ঠিক মত ব্যালট পেপার ভাজ করার পদ্ধতি রপ্ত করতে লাগবেন না। হয়তো সেদিনও অলস দুপুরে গুগুলে “বাংলাদেশ” লিখে সার্চ করলে আদৌ আমার দেশ নিয়ে একটি মানসম্মত বাংলাদেশি ওয়েবসাইট পাওয়া যাবে না। হয়তো সেদিন আর ইন্টারনেট জুড়ে ‘মুক্তিযুদ্ধে মৃতের সংখ্যা অতিরঞ্জন’ দাবি করলে আর কোন তরুণ ছাত্র বা সাংবাদিক উদ্যোগী হয়ে প্রতিবাদ করবেন না। হয়তো সেদিন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে রাজনীতিকদের উন্নাসিকতা উপেক্ষা করে কোন এমএমআর জালাল নিজ খরচে প্রবাসের পথে পথে ঘুরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সব রকম নথি সংগ্রহ করে যাবেন না।<br /><br />সেদিনের বাংলাদেশের জন্য কাজ করতে যে স্থিতধী, মোহমুক্তি, ও প্রশ্নোর্ধ্ব দেশপ্রেম প্রয়োজন, তা আওয়ামী লীগকে দেখাতে হবে। মুক্তচিন্তার প্রসার, মানবাধিকার রক্ষা, আইনের সংস্কার, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা, ও নারী অধিকারায়ন না করলে এ-দিনের অনেক ভোটার নীরব হয়ে যাবেন। অন্যদিকে হায়েনা ফিরে আসবে নতুন কোন রূপে, আরো শান দেওয়া নখরদন্ত নিয়ে।<br /><br />২০০১ এর নির্বাচনের পর গৎ বাঁধা কিছু প্রতিশ্রুতির ময়ূরপুচ্ছ গায়ে লাগিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল কিছু হায়েনা। এবারে আওয়ামী লীগও একই ধারার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। সে-কারণেই আশা করতে সংকোচ হয়। ২৬২ টি আসনে জয়ের জন্য যেই নৈতিক উচ্চতা ও সার্বিক গ্রহণযোগ্যতা লাগে, তা আওয়ামী লীগের নেই। ভোটের আগে আওয়ামী লীগের প্রচারণাতেই বলা ছিল, তারা বিএনপি-জামায়াত জোটের তুলনায় উন্নততর দেখে তাদের ভোট দেওয়া উচিত। সেই মতেই, বিএনপি-জামায়াত জোট অনেক বেশি খারাপ দেখেই আওয়ামী লীগের অনেক বড় জয়।<br /><br />আওয়ামী লীগের তাই সবচেয়ে বড় ধন্যবাদ দেওয়া উচিত তারেক জিয়াকে তার অবিমৃশ্যতার জন্য, ডিসেম্বর মাসকে বিজয়ের মাস হওয়ার জন্য, আর অগণিত দেশপ্রেমিককে মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে ব্যাপকভিত্তিক জনমত গড়ে তুলবার জন্য।Unknownnoreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-14251112.post-79070712384281489652008-12-30T13:44:00.001-05:002008-12-30T13:46:33.740-05:00গানবন্দী জীবনঃ আশিক-প্রিয়া৫. আমি আশিক, তুমি প্রিয়া<br />বাংলা চলচ্চিত্রের গানের মত ‘গিলটি প্লেজার’ খুব কম আছে। আড়াল পেলে সবাইই কম-বেশি গুনগুন করলেও প্রকাশ্যে কেউ স্বীকার করতে চান না যে তাঁরা বাংলা চলচ্চিত্রের গান শোনেন। আমি নিজেও ব্যতিক্রম নই। মনে পড়ে, এন্ড্রু কিশোর একবার ইত্যাদি’তে আফসোস করে বলেছিলেন মধ্যবিত্তের বৈঠকখানায় তাঁর গান ঢুকতে না পারার কথা। এর পেছনে যেই ছ্যুৎমার্গ কাজ করে, আমিও তার ঊর্ধ্বে নই।<br /><br />শক্তি ও পূর্ণতার কার্যকর কিছু নিরূপকের একটি হল দুর্বলের প্রতি উদারতা। একটি দেশ যত শক্তিমান, তার আইন সংখ্যালঘুদের প্রতি তত বন্ধুত্বপূর্ণ। একজন মানুষ যত বলিয়ান, তিনি ভিন্ন মত ও পথের মানুষের প্রতি তত সহনশীল। বাংলা সিনেমার গানের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটি তেমনই।<br /><br />আমি গাইতে জানি না, নাচের মুদ্রা বুঝি না, অভিব্যক্তি দিয়ে মন হরণ করতে পারি না, দুই অনুচ্ছেদের একটি অণুগল্পও লিখতে পারি না। তবু সমালোচনার খড়্গ হাতে উঠতে সেকেন্ড খানেক সময়ও লাগে না। বাংলা চলচ্চিত্র খুব দুস্থ ও দুর্বল, কিন্তু তার প্রতি আমার এক ধরণের অন্ধ আক্রোশের কিছুটা হয়তো আমারই ক্ষুদ্রতা থেকে উৎসারিত।<br /><br />বয়সের সাথে সাথে খুব কম মানুষকেই দেখেছি এই সংকীর্ণতা থেকে বের হয়ে আসতে। ভেঙেছে পিঞ্জর, পড়ে না চোখের পলক, দুই দিনেরই এক জেল, একদিন স্বপ্নের দিন, মন চায়, কিংবা আমার মাঝে নেই আমি এখন এ-যুগেরই বাংলা চলচ্চিত্রের গান। এগুলো গুনগুন করে গেয়েছি সবাই। হাল আমলে ক্লোজআপ-ওয়ান আসার আগ পর্যন্ত গানগুলো সেভাবে সামনে আসেনি। চিরকাল ধরে ঢালাও গালি দিয়ে যাওয়া এই আমিও এখন মানতে বাধ্য হই যে আমাদেরই অবহেলার কারণে পরিস্থিতি আজ এত বেশি খারাপ।<br /><br />এই উপলব্ধিগুলো অনেক বড় বয়সের। মানুষ যতই শিক্ষিত ও পরিমার্জিত হোক না কেন, কিছু মৌলিক প্রণোদনা তার মাঝে কাজ করেই। ভাড়ের ডিগবাজি, ভূতের হাসি, নায়িকার ইঙ্গিতপূর্ণ চাহনি, ইত্যাদি সব বয়স ও মতের মানুষকেই টানে। আর টানে গান। কেউ স্বীকার করি, আর কেউ করি না। এখানেই যেটুকু তফাৎ।<br /><br />বহুকাল আগের কথা। ছোট ভাইকে ওয়াই-ডব্লিউ-সি-এ স্কুলে দিয়ে আসার সময় বছর ছয়েকের একটি ছেলেকে গান গাইতে দেখেছিলাম এক সকালে। বিদ্যাবিভীষিকায় কাতর হয়ে সবাই কাঁদছে স্কুলে ঢোকার আগে। এরই মাঝে ছেলেটি সবাইকে ঠেলে এগিয়ে আসছিল উদ্দাম গতিতে। পেছন পেছন ছুটছে বাবা-মা। তাঁদের চোখে-মুখে লজ্জা। ব্যাগের স্ট্র্যাপ দু’হাতে ধরে লাফিয়ে লাফিয়ে ছেলেটি গান গাইছে – আমি আশিক, তুমি প্রিয়া। সাথে আরেক গানের লাইন মিলিয়ে দু’জন দু’জনার কত যে আপন, কেউ জানে না! আর একটু পরপর তারস্বরে তুমি প্রিয়া, তুমি প্রিয়া, তুমি প্রিয়া।<br /><br />গানটি শিশুমনকে ছুঁয়েছিল। সকালে স্কুল যাবার আনন্দে ছেলেটি গান গাইছিল। আশিক-প্রিয়ার জটিলতার ধার দিয়েও না গিয়ে স্রেফ মনের আনন্দে গান গাইছিল। কত সহজ, কত সাধারণ। আমাদের যে কেন বড় হলেই সব কিছু পেঁচিয়ে ফেলতে হয়।<br /><br />ছেলেটির সাথে গলা মেলানোর ইচ্ছে ছিল খুব। গান পছন্দ করে নয়, শুধু মুহূর্তটি উপভোগ করার জন্য। পারিনি। মনে হয় না চোখের সামনে এমন দৃশ্য দ্বিতীয়বার দেখার সুযোগ পেলেও পারবো। সংকোচের শৃঙ্খলেই আটকে থাকলো সব।Unknownnoreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-14251112.post-74298661143594796862008-12-30T13:42:00.002-05:002008-12-30T13:44:32.060-05:00বিজয় দিবসের নাটিকাঃ "সেমিকোলন"শুরুটা খুব সাদা-মাটা। পরীক্ষার মাঝে মাথা হালকা করতে "মুক্তির গান" ছাড়লো আজমীর। পাশের ঘরে মাহমুদের তখন মাথা ঝাঁ-ঝাঁ করছে টেক-হোম টেস্টের সমাধান করতে গিয়ে। পড়ার বিরতিতে পাশের ঘর থেকে ভেসে আসলো মুক্তির গান। সেই গান শুনেই মাথায় খেলে গেল একটি চিন্তা। আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম কীভাবে যেন দূরে সরে যাচ্ছে। ভাবতে বসে গেল ইতিহাসের কথা।<br /><br />ব্যাকরণে 'সেমিকোলন' ব্যবহৃত হয় দুটি সম্পূর্ণ বা প্রায়-সম্পূর্ণ বাক্যকে যুক্ত করতে। সেমিকোলনটি প্রথম বাক্যকে পূর্ণতা দেয়, দ্বিতীয় বাক্যটিকে দেয় ভিন্ন মাত্রা। একক ভাবে যতি চিহ্ন, কিংবা তার আগে-পরের বাক্যগুলো গুরুত্ব হারায়।<br /><br />আমাদের ইতিহাসও তো তেমনই। বাংলাদেশের ইতিহাসে মুক্তিযুদ্ধ যেন একটি বিশাল সেমিকোলন। এর আগের সময়টুকুর সব চেতনার পূর্ণতা দেখা যায় মুক্তিযুদ্ধে। সেই সাথে মেলে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য দিক-নির্দেশনা।<br /><br />আমাদের অসারতা, আর উত্তরপ্রজন্মের নিরুৎসাহের কারণে হারিয়ে যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ ও তার চেতনা। সেই চিন্তা থেকেই বিজয় দিবসের রাতে পরীক্ষার মাঝেই এই নাটিকাটি লিখে ফেলে মাহমুদ। আজ রাতে বিজয় দিবসের অনুষ্টানে দেখানো হল নাটিকাটি।<br /><br />নগণ্য কিছু প্রবাসী ছাত্রের এই ক্ষুদ্র প্রয়াসটুকু তুলে দিলাম আপনাদের জন্য। ত্রুটি-বিচ্যুতি ধরে দিলে বাধিত থাকবো।<br /><br />জয় বাংলা!<br /><br /><object width="425" height="344"><param name="movie" value="http://www.youtube.com/v/OPbZL8PG3rU&color1=0xb1b1b1&color2=0xcfcfcf&hl=en&feature=player_embedded&fs=1"></param><param name="allowFullScreen" value="true"></param><embed src="http://www.youtube.com/v/OPbZL8PG3rU&color1=0xb1b1b1&color2=0xcfcfcf&hl=en&feature=player_embedded&fs=1" type="application/x-shockwave-flash" allowfullscreen="true" width="425" height="344"></embed></object>Unknownnoreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-14251112.post-88805449209621334622008-12-30T13:42:00.001-05:002008-12-30T13:42:39.993-05:00গানবন্দী জীবনঃ নায়ে বাদাম তুইলা দে ভাই৪. নায়ে বাদাম তুইলা দে ভাই<br />আমাদের বংশে মেয়ে নেই বলতে গেলে। সবার দু’টা করে ছেলে। স্বাভাবিক ভাবেই খুব রুক্ষ আর অসহনশীল হয়ে গড়ে উঠেছি আমরা সবাই। বোন না থাকার আফসোসটা সবাইকেই ভোগায় কম-বেশি। ভাই-বোনের সম্পর্ক কী অসামান্য, তা শুধু দেখেই গেলাম জীবনভর।<br /><br />একবার পার্কে গিয়ে দেখেছিলাম ছোট বোন একটু পর পর বড় ভাইয়ের একদম মাথায় উঠে বসছে। এইতো সেদিন চ্যানেল আইয়ের ক্ষুদে গানরাজে দেখলাম বাদ পড়ে যাওয়া ছোট্ট হৃদ্য নিজের দুঃখ ভুলে বড় ভাই সদ্যের জন্য এসএমএস চাইছে, আহ্লাদ করে ভাইকে জড়িয়ে ধরছে। তার কিছুদিন আগে রিপাবলিকান ন্যাশনাল কনভেনশনে দেখেছিলাম স্যারাহ পেলিনের মেয়ের ভ্রাতৃস্নেহ। মাত্র ৭ বছর বয়সী পাইপার কয়েক মাস বয়সের প্রতিবন্ধী ছোট ভাই ট্রিগের চুল আঁচড়ে দিচ্ছিল মা বক্তৃতা দেওয়ার সময়টায়। ডান হাতের তালু জিভ দিয়ে চেটে ভেজায়, ভাইয়ের চুল ঘসে সমান করে দেয়, আবার চাটে, আবার চুল ঘসে সমান করে। আগ্রহীরা চোখ বুলাতে পারেন ইউটিউবেঃ ‘http://www.youtube.com/watch?v=GliQjmuf8_s’। এতটা স্বর্গীয় একটা দৃশ্য আর দেখেছি বলে মনে পড়ছে না।<br /><br />গায়ে-গতরে বেশ বড় হয়ে যাবার পর মামা-খালাদের সূত্রে বোন পাওয়া শুরু হল। এদের মধ্যে সবার বড় জায়ান। অনেকটা কাল ধরে এই একটাই বোন ছিল। ছায়ানটে গান শেখে। নজরুল, রবীন্দ্র, পল্লীগীতি, আরও কত কত রকম গান। আমার এই বোনটা গান-পাগল। ছোটবেলা থেকেই অভিনয় আর আবৃত্তিতে পটু, এখন সাথে যোগ হয়েছে গান। গাইতে বললেই সবার ওজন দেখানো শুরু হয়ে যায়, অথচ আমার এই বোনটা বেহায়া রকম ব্যতিক্রম। ফোনে কথা হলেই মিষ্টি হেসে বলে, অভি ভাইয়া, তোমাকে একটা গান শোনাই, তোমার মন ভাল হয়ে যাবে। ভাল না ছাই। পল্লীগীতিতে গলা ছেড়ে টান দিতে শুধুই চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ে। আমার এই বোনের কণ্ঠে আমার সবচেয়ে প্রিয় গান ‘নায়ে বাদাম তুইলা দে ভাই আল্লা-রাসূল বইলা, আমি পদ্মা নদী পাড়ি দেবো মাওলারও নাম লইয়া’। কথা হলেই এই গানটা শুনতে চাই, এখন পর্যন্ত প্রতিবারই চোখ বেয়ে পানি পড়েছে গানটা শুনে।<br /><br />জায়ানের সাথেই পিঠাপিঠি বোন রাফাত। ঠিক নিচের তলায় থাকতো। সকাল হলেই দৌঁড়ে আমার কাছে চলে আসতো, রাত হলে থেকে যাওয়ার জন্য কান্নাকাটি করতো। আমি ঘুম থেকে ওঠার আগেই এসে গুটিসুটি মেরে বিছানায় উঠে পড়তো। এরপর হঠাৎ পেটের উপর লাফ দিয়ে পড়ে ঘুম ভাঙিয়ে ভুবন ভুলানো একটা হাসি দিতো। বাইরে চলে আসার পর হাতে লিখে চিঠি পাঠায় ক’দিন পরপর। জন্মদিন এলে তক্কেতক্কে থাকে। শুভেচ্ছা জানাতে ভুলে গেলেই বুক এফোড়-ওফোড় করে দেওয়া একটা খোঁচা, হু, আমাকে তো মনে থাকে না তোমার আর।<br /><br />এরপর দুই মামাতো বোন। যুক্তরাজ্যে বড় হচ্ছে, প্রথমবার দেখার আগেই তাই বড় জন প্রায় ৮ বছরের হয়ে গেছে। অবিকল আমার নানীর মুখ যেন। একটু পরপর পাশে এসে খুব লজ্জা পেয়ে, শান্ত স্বরে বলতো, ভাইয়া, তোমার পাশে বসতে খুব ইচ্ছা করছে, আমাকে কোলে নিয়ে বসবে? রক্তের টান বোধহয় একেই বলে।<br /><br />ছোট জন অনেক জেদী। ভোর ছয়টায় বাজলেই আমাকে ঠেলে তুলবে। বাচ্চাদের একটা বই এগিয়ে দিয়ে বলবে, রিড দ্যাট। ঘুম জড়ানো চোখে পড়ে শোনাই। শেষ হলেই হেসে বলে, রিড এগেইন। আবার পড়ি। আবারও মড়ার রিড এগেইন। এই চলে সকালের প্রথম আধা ঘন্টা। এক সকালে আব্বুর দিকে দেখিয়ে বলেছিলাম, ঐ যে ফুফা ডাকছে পড়ে শোনাবে বলে। মাত্র আড়াই বছরের সেই বিচ্ছুটা আমার সাথে সাতদিন কথা বলেনি আর।<br /><br />সবার ছোট নুসাবা। আমার ছোট খালার মেয়ে। সম্ভবত আমার পরে আমাদের বংশে সবচেয়ে প্রতীক্ষিত সদস্য। বোন কী, বোনের অধিকার কী, বোনের দাবি কী, তা শিখেছি নুসাবার কাছ থেকেই। বাকিদের বেলায় আরামে আরামে কাটিয়েছি। সারাদিন পর হয়তো একটু আহ্লাদ করেছি, তাতেই হয়ে গেছে। নুসাবার বেলায় উলটো। বর্ষা-বাদল-ব্যস্ততা-অসুস্থতা নির্বিশেষে তার সাথে প্রতিদিন কথা বলতে হয়। প্রতিদিন ওয়েবক্যামে তাকে তার ভাগের সময়টুকু দিতে হয়। সামান্য ব্যত্যয় হলেই অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে বলবে, ও জানে নাই, ও শুনে নাই।<br /><br />এই বোনটাও গানের পাগল। হরবোলার মত যেকোন গান শুনে শুনে শিখে ফেলে। বয়স দুই বছর হওয়ার আগেই গোটা ত্রিশেক গান তার মুখস্ত। নিথুয়া পাথারে, যাও পাখি বল তারে, ও আমার দেশের মাটি, বার্নির গান, এরকম আরও কত যে গান সকাল হলেই একাধারে শুনতে হয়।<br /><br />ভালই চলছিলাম মাচো হবার পথে, কিন্তু বড় বয়সে এসে এই কলিজার টুকরাগুলো মনকে অনেক নরম করে দিল। একেকটার সাথে কথা বললেই মনে হয় সব ছেড়ে ওদের কাছে যাই গিয়ে। এত্ত আহ্লাদ, এত্ত ভালবাসা, আর এত্ত অধিকারের সাথে পরিচয় ছিল না। সেই অনুভূতিগুলো আটকে আছে অন্তর নিংরানো পল্লীগীতিটায়। কিছু অনুভবের জন্য আসলেই পদ্মা নদী পাড়ি দেওয়া যায়।<br /><br />(গানটা নিজের কাছে নেই, কারো সংগ্রহে থাকলে জানানোর অনুরোধ রইলো)Unknownnoreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-14251112.post-70150709750593655512008-12-30T13:39:00.002-05:002008-12-30T13:42:00.330-05:00গানবন্দী জীবনঃ আজ আমার শূন্য ঘরে আসিল সুন্দর৩. আজ আমার শূন্য ঘরে আসিলো সুন্দর<br />আমার নানা প্রচন্ড শিল্প-রসিক। শিক্ষায় ডাক্তার, পেশায় প্রফেসর, নেশায় কবিতা আর গানের অনুরাগী। এতটাই বেশি যে রেডিওতে একবার নানার সাক্ষাৎকার পর্যন্ত নেওয়া হয়েছিল। নানা নিজের সংগ্রহের এলপি থেকে কী কী যেন শুনিয়েছিল। রেকর্ডিংটা হারিয়ে গেছে অনেক দিন হয়।<br /><br />পরিবারে নতুন কোন অতিথি এলেই নামের জন্য নানার কাছে যাওয়া হয়। আমার মা-খালাদের ডাকনাম নানার দেওয়া – সীমা, নিশি, শীলা। আমার খুব পছন্দের নাম তিনটাই। আমার ডাকনামও নানারই দেওয়া – অভি। গালভরা ভাল নামটার চেয়ে এই নামটা অনেক বেশি আপন। নানার সাথে আমার চুক্তি আছে। আমার ছেলে-মেয়ের নাম ঠিক করে না দিয়ে তার ছুটি নেই।<br /><br />বড় নাতি হিসেবে অনেক আদর পেয়েছি নানার কাছে। আমার জন্মদিন পালনের জন্য নানা ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম এসে ঘুরে যেত রাতের ট্রেনে। আমার পছন্দ বলে বাক্স বাক্স গলদা চিংড়ি পাঠাতো। নানার বিশাল বইয়ের ভান্ডার থেকে আমাকে নিজের ইচ্ছামত চুরি করতে দিতো। বইমেলা এলে প্রথম বার যাওয়ার আগে আমি অবসর পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতো। আমাদের দুই ভাইয়ের চালানো সব সাইকেল নানার কিনে দেওয়া ছিল। একবার আমি ঝোঁকের মাথায় স্কুল থেকে একটা কুকুর ছানা কিনে এনেছিলাম। থাকি ভূতের গলির এক ভাড়া বাড়িতে। জল্লাদ বাড়িওয়ালা, তার উপর এমনিতেই বাসা-ভর্তি মানুষ। আমার নানা সেই কুকুরটা পেলেছিল আট বছর ধরে। ট্রাকচাপা পড়ে আমার ‘শাইনি’ মারা যাবার পর অনেক কেঁদেছিল।<br /><br />নাতিপাগল আমার অসামান্য নানা আমাকে কোলে করে প্রথম বার বাসায় ঢোকার সময় গেয়েছিল, ‘আজ আমার শূন্য ঘরে আসিলো সুন্দর, ওগো অনেক দিনের পর’। স্মৃতিশক্তি আমার এমনিতেই খারাপ, তার উপর সেই ঘটনা পাক্কা ২৬ বছর আগের। তবু যেন সেই মুহূর্তের আগলে ধরা অনুভূতিতে মনটা অবশ হয়ে যায়। কল্পণায় ভাসে, উত্তম কুমারের মত দেখতে এক সুপুরুষ রঙিন কাপড়ে মোড়ানো ছোট্ট একটা মাংসপিণ্ড কোলে করে শিশুতোষ আনন্দে গানটা গাইছে।<br /><br />নানার অফুরন্ত গল্পের সম্ভারের কারণে সত্যজিতের তাড়িণীখুড়োর কীর্তিকলাপ পড়ে মনে হয়েছিল যেন চুপিচুপি আমার নানাকে দেখে লেখা হয়েছে। ঢাকা মেডিকেলের যে-কোন ছাত্রকে বায়োকেমিস্ট্রির প্রফেসর ইছহাকের কথা জিজ্ঞেস করলেই জানা যাবে তার উচ্ছ্বলতার কথা। ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে বেড়াতো। ল্যাবরেটরি ক্লাসে সল্যুশন বানিয়ে নিজের ধমনীতে ঢুকিয়ে পরীক্ষা করতো। দেশ-বিদেশের ইতিহাস নিয়ে মজার সব গল্প বলে যেত। ‘প্রফেসর ইছহাকের বড় মেয়ের বড় ছেলে’ পরিচয়ের সুবাদে কোনদিন ডাক্তারের কাছে গেলে লাইনে দাঁড়াতে হয়নি, ফি দিতে হয়নি।<br /><br />হাল ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি করতে বিলেত গিয়েছিল। সে-সময় বন্ধুদের সাথে বাজি ধরে নাকি একবার বরফজমা হ্রদের উপরের বরফ কেটে খালি গায়ে ডুব দিয়েছিল। এছাড়াও কাজের চাপে বৌয়ের চিঠি ভাইকে পাঠিয়ে দেওয়ার মত কীর্তি ছিল অনেক। ডানপিটে, খেলাপ্রিয়, এভার্টন আর ইংল্যান্ডের ভক্ত, প্রচন্ড রোম্যান্টিক এই মানুষটাকে দেখে বোঝার উপায় ছিল না যে তার পাঁচটা ছেলে-মেয়ে আছে।<br /><br />বাজারে দর কষাকষিতে আমার নানার মত পারদর্শী খুব কম দেখেছি। এই বয়সেও সকাল হলেই চলে যায় কাঁচা বাজারে। নানার বাসায় বেলায় বেলায় জনা বিশেক লোক খাওয়া-দাওয়া করতো এক সময়। খাওয়ার লোক কমলেও বাজারের পরিমাণ তেমন কমেছে বলে মনে হয় না। নিউ মার্কেট আর টঙ্গী বাজারের দোকানীরা নানাকে আড়ালে ডেকে নানার পছন্দমত দামে জিনিস দিয়ে দিতো। সবার সামনে নানা দর-দাম করলে ব্যাপারীর বেশি ক্ষতি, তাই!<br /><br />নানার সাথের এই খুচরো অনুভূতিগুলো ঘুরে-ফিরে আসে এই গানটার সাথে। কথা হলেই বিভিন্ন রকম উপদেশ দেয় নানা। ভেজা চুলে বের হতে নেই, গলার পেছনটা স্কার্ফ দিয়ে ঢেকে রাখতে হয়, বাজারে গেলে প্রথম চক্করে কিছু না কিনে সব দোকানের দাম যাচাই করে নিতে হয়, এমন ছোট ছোট উপদেশের পাশাপাশি এই গানটাও গেয়ে শোনায় একবার করে। অতুলপ্রসাদের এই গানটা শুনলেই মনে হয় যেন নানি বিছানার পাশে মোড়ায় বসে সুপারি কাটছে, আমি নানার পাশে শুয়ে আনন্দমেলা পড়ছি, আর নানা উৎপাত করার জন্য গায়ের উপর পা তুলে দিয়ে দুষ্টামি করছে।Unknownnoreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-14251112.post-13112120018121522232008-11-14T08:12:00.001-05:002008-11-14T08:13:55.816-05:00গানবন্দী জীবনঃ খরবায়ু বয় বেগে<span style="font-weight:bold;">২. খরবায়ু বয় বেগে</span><br />বাংলায় কিশোর সাহিত্য বেশ অবহেলিত। সবাই শুধু বড়দের জন্য লিখতে চায়, বড়দের কথা লিখতে চায়। বড়দের লেখার মধ্যে অন্যায় কিছু নেই। বয়সের সাথে সাথে অনুভূতিগুলো গাঢ় হয়, মানুষ অনেক বেশি সংবেদনশীল হয়। সেই চিন্তাগুলো সাহিত্যে স্থান পেলে সাহিত্যই মহিমান্বিত হয়। পরিণত সাহিত্য তাই খুবই জরুরী। তবে তাই বলে যে কিশোর সাহিত্যকে অবহেলা করতে হবে, এমন তো কথা নেই।<br /><br />সাহিত্যের কাজ মূলত দু’টি – অভ্যস্ত জীবনের বাস্তবতাগুলো তুলে ধরা, নয়তো কল্পণার কোন জীবনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া। অধিকাংশ সাহিত্যিকই কল্পণার রাজ্য নিয়ে লেখেন। দুই বাংলা মিলিয়ে যেই উপন্যাসগুলো সবচেয়ে বেশি পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে, তার সবগুলোই লেখকের নিজের জীবন নিয়ে, অথবা নিজের জীবন থেকে লেখা। বড়দের লেখায় এটি আর দেখা যায় না। সবাই কল্পিত ঘটনা নিয়ে লেখেন। একলা ঘরে একটি নারী কার কথা ভাবে, নিঃসঙ্গ পুরুষ কীভাবে পরনারীতে স্বস্তি খোঁজে, ইত্যাদি বালছাল লেখায় ভরা চারদিক। এই সব প্যানপ্যানে ঘটনার চেয়ে প্রথম কৈশোরের কুকর্মগুলো অনেক উপাদেয় ছিল। স্কুল পালানো, পড়শি মেয়ের দিকে চোখ মারা, রগরগে নীল ছবি দেখা, নিষিদ্ধ বিনোদন, ইত্যাদি নিয়ে অকপটে লিখলে লেখকের সুশীলতা অক্ষুণ্ন থাকে না। কিশোর সাহিত্য অবহেলিত হওয়ার পেছনে হয়তো এটা অন্যতম কারণ।<br /><br />খোলামেলা লেখার দায়ে ‘সেবা’ প্রকাশনীর বই পড়তে হলে মায়ের কাছ থেকে অনেক ভাবে লুকাতে হত। প্রকাশ্যে পড়ার মত বলতে ছিল সত্যজিৎ রায় আর শাহরিয়ার কবিরের লেখা বই। স্কাউটিং, প্রবাস ভ্রমণ, উঠতি বয়সের কুসুম কুসুম প্রেম, সমাজতন্ত্রের স্বপ্ন, ইত্যাদি নিয়ে জানতে পারতাম শাহরিয়ার কবিরের বই খুললে। এভাবে কেটেছে আমার প্রথম কৈশোর। সে-সময়ের খুব প্রিয় বইগুলোর একটি ছিল ‘নিকোলাস রোজারিওর ছেলেরা’।<br /><br />নিজে মিশনারি স্কুলে পড়েছি, তাই বাড়তি আকর্ষণ ছিল বইটির প্রতি। মন যেন হারিয়ে গিয়েছিল সমবয়সী একদল কিশোরের মাঝে। কেউ বাড়ি থেকে অনুমতি পাচ্ছে না, কেউ চাঁদার টাকা জোগাড় করতে পারছে না, কেউ অন্যের ছায়া থেকে বের হয়ে আসতে ছটফট করছে। বুক ভারি হয়ে যেত গল্পের চরিত্রগুলোর কচি সংগ্রামে। হায় সে কী উৎকণ্ঠা!<br /><br />সম্ভবত সেখানেই পড়েছিলাম, গল্পের কোন এক বখাটে বড় ভাই বছরের পর বছর ধরে স্কাউটিং ক্যাম্পে ‘খরবায়ু বয় বেগে’ গেয়ে যেত। তখন পর্যন্ত শুধু গানটির দু’লাইন জানতাম। বই পড়েই খুঁজে-পেতে পুরো গান শুনেছিলাম। শাহরিয়ার কবিরের বই পড়ার অনুভূতিগুলো যেন সেই থেকেই আটকে গেছে ‘খরবায়ু বয় বেগে’র মধ্যে।<br /><br />প্রথমে মনে পড়ে ‘নিকোলাস রোজারিওর ছেলেরা’র কথা। এরপর একে একে মনে পড়ে যায় নুলিয়াছড়ির সোনার পাহাড়, পাথারিয়ার সোনার খনি, কার্পেথিয়ানের কালো গোলাপ, বার্চবনে ঝড়, সীমান্তে সংঘাত, অনীকের জন্য ভালবাসা, লুসাই পাহাড়ের শয়তান, ব্যাভারিয়ার রহস্যময় দুর্গ, হানাবাড়ির রহস্য।<br /><br />সমাজ, রাজনীতি, ধর্ম, দর্শন, ইত্যাদি নিয়ে অনেক তর্ক চলে বড়দের মহলে। খুব বড় একটা ব্যাপার ভুলে যায় সবাই। মানুষের মনন স্থায়ী রূপ নিয়ে ফেলে তার কৈশোরে। শত চেষ্টায়ও এরপর আর তার চিন্তা-চেতনার পরিবর্তণ সম্ভব না। বিশ্বাসের মধ্যাকর্ষণের কাছে জ্ঞানের বহুমুখী বিস্তার মার খেয়ে যায়। রাজনৈতিক পটপরিবর্তণ, রাজসভায় মিছিল-সমাবেশ, বা মিডিয়ায় জ্ঞানগর্ভ আলোচনা কৈশোরোত্তীর্ণ মানুষের মনের উপর খুব কমই প্রভাব রাখতে পারে।<br /><br />উঠতি প্রজন্মের কাছে কৈশোরের মৌলিক কিছু অনুভূতি তুলে ধরেছিলেন সত্যজিৎ রায়, শাহরিয়ার কবির, আর মুহম্মদ জাফর ইকবালের মত লেখকেরা। অধীর আগ্রহে তাঁদের নতুন বইয়ের অপেক্ষা, আর বই এলেই গোগ্রাসে গিলে ফেলার সেই সময়টা মনে আটকে আছে ‘খরবায়ু বয় বেগে’র মাঝে। কৈশোরের দ্বন্দ্ব আর ভয়গুলোর শৃঙ্খল বারবার ঝনঝন করে ওঠে এই একটি গানে। নিজের মনে প্রশ্ন জাগে, কতটুকু আসতে পেরেছি সেই দিনগুলো থেকে। স্বপ্নগুলো স্বপ্নই থেকে গেল। কান পাতলেই ঝন, ঝন, ঝন।Unknownnoreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-14251112.post-73638123983838100712008-11-14T08:09:00.001-05:002008-11-14T08:12:13.769-05:00গানবন্দী জীবনঃ সে যে বসে আছে একা একা<span style="font-weight:bold;">০. ভূমিকা<br /></span>জীবনের গতিময়তা, আকস্মিকতা, আর গভীরতার সাথে সবাই কমবেশি পরিচিত। বহুবার চেষ্টা করেও জীবনকে থামাতে বা ফেরাতে পারিনি। অথচ সেই জীবন যেন নিজে থেকে এসে আটকা পড়েছে কিছু গানের মাঝে। স্মৃতির স্ফটিক হয়ে যাওয়া জীবনের ভগ্নাংশগুলো খুব বেশি জীবন্ত হয়ে ফিরে আসে সেই গানগুলোর সাথে সাথে। কিছু গান, আর তার মাঝে আটকা পড়া জীবন নিয়েই এই প্রলাপ-সিরিজ।<br /><br /><span style="font-weight:bold;">১. সে যে বসে আছে একা একা<br /></span>সবেমাত্র নিজের একটা ঘর পেয়েছি তখন। আমেরিকা এসেছি প্রায় ৬ সপ্তাহ হয়ে গেছে। প্রথম ক'দিন খুব বাজে কেটেছিল। প্রথম যে-বাসায় উঠলাম, সেখান থেকে তিন দিনের মাথায় বেরিয়ে আসতে হয়েছিল। বিচিত্র এক অভিজ্ঞতা ছিল সেই ক'দিন। জেটল্যাগে মারা যাচ্ছি এমন সময় সাত-সকালে উঠিয়ে দিয়ে বাড়ির মালিক বললেন, আমি বাইরে যাবো, তুমি বের হও বাসা থেকে। সেই দিনটা কাটলো পার্কের বেঞ্চে বসে। সে-বাসার একটা ঘর খালি ছিল, তবু সেখানে ঢোকা বা শোয়া বারণ। যাঁর ঘর, তিনি দূর থেকেই মানা করে দিয়েছেন ফোন করে। উঠেছিলাম অস্থায়ী ভাবে, তবু তিন দিনের মাথায় বলে দেওয়া হল লিভিং রুমে শাওয়ার কার্টেইন টাঙিয়ে থাকার কথা। শর্ত মানলে এক-তৃতীয়াংশ ভাড়া দিয়ে থেকে যাওয়া, না মানলে সে-রাতেই অন্যত্র জায়গা খোঁজা। বের হয়ে গিয়েছিলাম।<br /><br />হেঁটে বেড়াচ্ছিলাম পথে পথে। জানুয়ারির সকাল। কী প্রচণ্ড শীত। দু'হাতের গিঁটের চামড়া ফেটে রক্ত ঝরছে শীতের প্রকোপে। এরই মাঝে আরেক স্বদেশী উদ্ধার করলেন। নিয়ে গেলেন তাঁর বাসায়। থাকতে দিলেন দু'সপ্তাহ। সে-বাসায় শোওয়ার ঘর তিনটি, কিন্তু মানুষ থাকে মাত্র সাতজন। এক বাঙালি নিজের ঘরে, বাকি দুই ঘর মিলিয়ে ছয় নেপালি। একটা ঘরে বিশাল উঁচু এক বিছানা। পথে-ঘাটে যত ম্যাট্রেস ফেলে রাখা ছিল, তার সব কুড়িয়ে এনে স্তুপ করা হয়েছে সেই ঘরে। ফলাফল, প্রায় চার ফুট উঁচু বিছানা। সেই ঘরে থাকতো দুই জন।<br /><br />অন্যঘরটি আয়তনে বড়, সাথে লাগোয়া বাথ, ড্রেসিং। সে-ঘরে থাকতো চারজন। কোন আসবাব নেই। এক কোণায় কিছু বই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা। চাদর পেতে বিছানা বানানো। একজন ঘুমিয়ে উঠে গেলে আরেকজন এসে ঘুমায়। খুব একটা অর্থকষ্টের কারণে যে এই ব্যবস্থা, তাও না। তবু অবাক হয়ে ভাবছিলাম, দু'জন বাঙালিকে আজ পর্যন্ত এক ঘরে থাকতে দেখলাম না। নিজের একটা ঘরের মূল্য আমাদের কাছে অপরিমেয়। অথচ মুদ্রার অন্য পিঠে একই এলাকা থেকে উঠে আসা এই ছাত্রেরা।<br /><br />চার সপ্তাহ পর এক অ্যাপার্টমেন্টে একটা ঘর খালি হল। উঠলাম সেখানে। নিজের ঘর। বিছানা হিসেবে ব্যবহারের জন্য আমিও একটা ম্যাট্রেস কুড়িয়ে নিলাম। সাথে করে নিয়ে গিয়েছিলাম ৩৫০০ ডলার। স্কলারশিপের পরও নিজের পকেট থেকে হাজার তিনেক টাকা দিতে হত বিশ্ববিদ্যালয়কে। বাকি টাকা থেকে ৪০০ ডলার দিয়ে একটা ডেস্কটপ কম্পিউটার কিনলাম। বাধ্য হয়েই কিনতে হল। ঠান্ডা বয়ে দু'মাইল হেঁটে লাইব্রেরিতে যেতে পারি না। সেই কম্পিউটার রাখবার জন্য টেবিলের প্রয়োজন। ওয়ালমার্ট থেকে বিশাল একটা টেবিল কিনলাম। অল-পার্পাস টেবিল হিসেবে ব্যবহারের জন্য। সেই দিন থেকে ৪ বছর ধরে লেখাপড়া, খাওয়াদাওয়া, কাপড় ইস্ত্রি করা, ইত্যাদি সব কাজই করেছি ৫৮ ডলারে কেনা সেই টেবিলে। আজকে আমি ভার্জিনিয়া, লুইজিয়ানায় সেই টেবিল আজও আছে।<br /><br />রাত জেগে নাট-বল্টু লাগাচ্ছিলাম সেই টেবিলের। শ্রান্ত হয়ে বিরতি নিয়েছিলাম একটু। এক বন্ধু বললো, নতুন একটা গান শুনে দেখতে। অর্ণবের "সে যে বসে আছে" সেই প্রথমবারের মত শুনলাম। কোথায় যেন একটা মোঁচড় লাগলো। একটা কোণায় গিয়ে পা ছড়িয়ে বসলাম। দেওয়ালে হেলান দিয়ে পুরো রাত কাটিয়ে দিলাম গানটা শুনতে শুনতে।<br /><br />এইতো সেদিন ওয়াশিংটন ডিসি গিয়েছিলাম অর্ণবের কনসার্ট দেখতে। শেষদিকে যখন সবাই গলা মিলিয়ে গাইছে, তখন আমি আনমনে ফিরে গেছি আমার সেই প্রথম দিকের দিনগুলোয়। সেই দিনের প্রতিটা অনুভূতি যেন অনেক বেশি জীবন্ত হয়ে ফিরে এসেছিল গানটার সাথে। শত মানুষের মাঝেও যেন একা একা বসে ছিলাম, রঙিন স্বপ্ন বুনছিলাম, জানালার পাশে বসে মেঘ গুনছিলাম। ঘাড় ফেরালেই জীর্ণ বিছানা, হাত বাড়ালেই কোণায় পড়ে থাকা ওটমিল বিস্কুট।Unknownnoreply@blogger.com0