Thursday, January 24, 2008

মৌনচিত্র ৩

‘অনেক জোরে বাতাস। বানে ভাসায় নিয়া যাইতেসিলো সব। ছোট বইন আমার কোলে আসিলো। আর এই ভাইটা মায়ের কোলে…’

ভাল লাগে না এসব। খবরে দেখার কীই বা আছে আর। ঝড়ে ভাসা মানুষগুলোকে না দেখলে কী এমন ক্ষতি হয়? দেখে কষ্ট বাড়বে অযথা। থাকুক না। ত্রাণের টাকা জোগাড় করতে লেগে গেলেই হল। সকাল থেকে জ্বর, মাথা ব্যাথা। তাড়াতাড়ি কাজের কাজ সারি, খবর তো কতই দেখা যাবে।

‘টাকা কি এখনই যাবে, নাকি কোন ফান্ডে জমা পরে থাকবে? কেয়ারের এমনিতেই ১৫ মিলিয়ন ডলার আছে, এর মধ্যে আমাদের পাঁচ হাজার ডলার শুধু জমা পড়বে। খরচ হতে হতে মানুষ না খেয়েই মরবে আরো কয়েক হাজার। আগে ভোটাভুটি হোক, টাকা কি এখনই পাঠাবো, নাকি আরো টাকা জমিয়ে তারপর।’

যাক, খুঁটিনাটির ফয়সালা হল তাহলে। খাওয়ার পর টাকা তোলা যাবে। ইমেইলে কিছু খোঁজ নেওয়া দরকার আরো। আইডিয়া মন্দ না। জনপ্রতি কত টাকা করে লাগে সেই রকম একটা হিসাব ফ্লাইয়ারে দিতে পারলে ভাল হয়। সাথে ঘর তুলবার টিনের টাকা। সবার তো মাছের ব্যবসা ঐ দিকে। কত করে লাগে জানতে পারলে হত।

‘থ্যাংক ইউ ফর ইওর কোয়েরিজ। লিটল লেস দ্যান ফরটি ল্যাক পিপল আর অ্যাফেকটেড। ফর আ ফ্যামিলি অফ ফাইভ, উই নিড ফিফটিন থাউজ্যান্ড টাকা টু বিল্ড টিন-শেড শ্যাকস। এভরি ফিশারম্যান নিডস অ্যাট লিস্ট ফাইভ থাউজ্যান্ড টাকা টু বিগিন দেয়ার ফিশিং।’

কাল বাদে পরশু ব্ল্যাক ফ্রাইডে। ঘরে ফিরে কী কী কিনবো তার ফর্দ করা দরকার। বেস্ট বাইয়ের ডেস্কটপটা গত দুই বছর ধরতে পারিনি। কেন যে সেবার পেয়েও নিলাম না। কঞ্জুসী না করলেও পারতাম একবারের জন্য। থাক, আফসোস করে লাভ নাই। কপালে না থাকলে ঘি, ঠকঠকাইয়া হবে কী? এবার আগে গিয়ে দাঁড়াবো। আবহাওয়াও বেশ ভাল কিছুদিন ধরে। ঠান্ডা হবে বলছে, একটু কম করে হলেই হয়। এবার সার্কিট সিটিতে অল্প একটু বেশি টাকায় আরো ভাল কম্পিউটার দিচ্ছে। দুই শ’র বদলে দুই শ’ তিরিশ, সেলেরনের বদলে পেন্টিয়াম। ফেলি কী করে? শ’ তিনেকে ল্যাপটপ দিচ্ছে সব মিলিয়ে চারটা।

‘সাঁতরায় উইঠা দেখি বইনডা নাই আমার। খুঁজি অনেক, বইনরে দেখি না…’

এক ঘর মানুষ আমরা, মাত্র এই কয়টা টাকা তুললাম? এত সামর্থ্য আমাদের। এত এত টাকা দিয়ে একেক জন দুইটা-তিনটা করে কিনছি, আর চল্লিশ লাখ নিঃস্ব মানুষের জন্য লিখছি পঁচিশ-ত্রিশ টাকার চেক। কিছু একটা ভুল হচ্ছে কোথাও। কেন দেখতে হল এই নিউজ? কষ্ট দেখতে পাওয়ার কষ্ট তবু সহ্য হত। কষ্ট দেখেও বিকার না হওয়ার কষ্ট কি বিবেকে সয়?

‘মায় কইলো, তুই আমার মাইয়াডারে ফালাইয়া দিলি? আমি কইলাম আমি ফালাই নাই। ধইরা রাখসি, শক্ত কইরা। ঝড়ে লইয়া গেসে। আমার ছোড বইনডারে ঝড়ে লইয়া গেসে আমার হাত থেইকা…’

দেখতে চাই না বোনের মুখ। মুছে না কেন চোখ থেকে? থ্যাংকসগিভিঙের সেলের বদলে দুর্গতদের দিলেও কি এই ময়লা বিবেক পরিষ্কার হবে? কেন প্রথমেই মনে হল না এই কথা? দেখতে চাই না সেই মুখ। সরে না কেন এই ছবি আমার চোখের সামনে থেকে? ধুর…

No comments: