Tuesday, June 03, 2008

প্রবাসের কথোপকথন - ১৫

তোমার গা থেকে ফুলের সুবাস আসছে আজকে। খুব সুন্দর গন্ধ, এত চেষ্টা করেও মনে করতে পারছি না কীসের গন্ধ এটা। ইউ লুক ভেরি ফ্রেশ অ্যাজ ওয়েল।
ফুল ঠিক মাই কাপ অফ টি না। আমার দৌঁড় গোলাপ পর্যন্ত। তবে ল্যাভেন্ডার খুব প্রিয়। ছোটবেলায় নানাকে দেখতাম ইয়ার্ডলি ব্যবহার করতে। ওদের ল্যাভেন্ডারটা অসাধারণ লাগতো। আমিও তোমার পারফিউমের গন্ধটা চিনতে পারছি না। সকাল বেলা বাসে যাবার সময় এরকম তাজা সুবাস পাই, কিন্তু মেয়েলি ব্যাপারে ধারনা কম দেখে চিনতে পারি না। ওদিকে আবার জিজ্ঞেসও করতে পারি না চড় খাবার ভয়ে।

উহু, তবুও কিছু একটা ভিন্ন আজকে। কিছু একটা করেছো যা আগের বার করনি।
আজকে গোসল করে, শেভ করে এসেছি। নাহলে আমার ঘাম-ময়লা-দুর্গন্ধ তোমার হাতে চলে যেত। সেটা হতে পারে। আফটার শেভটার জন্য এরকম লাগছে হয়তো। আন্দাজ করতে পারো কিনা দেখি তো। উহু, জিলেট না। ওল্ড স্পাইসও না। ব্রুট।

গন্ধটা পছন্দ হয়েছে আমার। আগে তেমন কাউকে দেখিনি এটা ব্যবহার করতে।
না দেখারই কথা। এটার বদনাম আছে বুড়াদের ব্র্যান্ড হিসেবে। তবে আমার বেশ লাগে। কেমন যেন শান্ত একটা গন্ধ। জ্বলে খুব, এটাই সমস্যা।

তোমার চুলগুলো অনেক বড় হয়ে গেছে। দেখে তো মনে হচ্ছে না চুল পড়ার সমস্যা আছে, বরং বেশ ঘন আর সিল্কি।
বলে যাও, শুনে সুখ পাই। আমার অত খুঁতখুঁতে ভাব নেই। শুধু কান আর ঘাড়ে চুল লাগলেই অস্বস্তি লাগে।

ট্রিমারে কয় নম্বর সাইজ ব্যবহার করো তুমি চুল কাটানোর সময়? সে কী, এত বছর ধরে চুল কাটিয়েও তুমি জানো না কোন সাইজ? ঠিক আছে, কত ইঞ্চি বললেও চলবে।
এসব ব্যাপারে আমার কোনই ধারনা নেই। সাইজের আন্দাজ বলতে পারবো না। আমি চুল কাটাতে গেলে শুধু বলি, আই জাস্ট ওয়ান্ট টু ফিল মাই ইয়ারস। এরপর নাপিত যা করার করে। এই যে এখন যেমন চুলের ভারে এলোমেলো অবস্থা। মেয়েদের মত কানের উপর থেকে চুল সরাতে সরাতে ক্লান্ত।

মেয়েদের মত হলেই খারাপ, তাই না? খুব খারাপ। রাগ করার কিছু নেই, ঠাট্টা করছিলাম। সাইজ না জানলে তো একটু ঝামেলা হয়ে গেল। এত্ত কম জানলে কি চলে এই যুগে? লম্বা চুল রাখলে যখন খারাপ লাগে, তাহলে যেমন আছে তেমনটাই রেখে শুধু ছোট করে কাটাতে পারো তাহলে।
সেটাই ভালই হয়। সেই যে ছোটবেলায় বাবা চুল আঁচড়ে দিতো, এরপর থেকে তো সাহসে কুলায়নি কোনদিন কিছু করতে। তোমার মাথায় কিছু খেললে বল। লেট ইওর ইমাজিনেশন রান ওয়াইল্ড। তুমি যা বলবা, তাই হবে। একটা ঝুলঝাড়ুর চুল কাটলেও আপত্তি করতে পারে, আমি করবো না। তোমার হাতেই আমার মাথা সঁপে দিলাম, যাও। অবশ্যই, বল তো ন্যাড়া হতেও আপত্তি নেই। আই ওয়োন্ট হোল্ড এনিথিং এগেইন্সট ইউ, আই প্রমিস। আমার এই খোমা প্রসাধনের ঊর্ধ্বে, তাই এসব নিয়ে মাথা ঘামাই না। বছরের পর বছর ধরে সাত-সকালে উঠে নিজের মুখ দেখতে দেখতে এখন দুঃস্বপ্ন দেখেও ভয় লাগে না। এই রকম চেহারা নার্ভের জন্য ভালো।

অনেক হল, ঠাট্টা রাখো এবার। তুমি কোন দেশ থেকে যেন? ও হ্যাঁ, বাংলাদেশ। আমি লেবানন থেকে এসেছি। আমি আরেকটু বেশিদিন হয় দেশে যাই না। প্রায় ১৩ বছর। যেতে মন চায়, যাবো যাবো করি, আমার মা ওখানেই, কিন্তু গোলাগুলি আর যুদ্ধ-বিগ্রহের জন্য যাওয়া হয় না।
খুব খারাপ লাগার কথা অবশ্যই। বাকি ভাই-বোন সহ এখানেই থাকো, না? ওহ, আমি তো ভাবলাম তুমি এখানে পড়াশোনা কর। আমি আছি ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিঙ্গে। আরে ধুর, ফালতু কথা ওসব। স্মার্ট না ছাই। বাপ-মা ধরে-বেঁধে পড়ালো দেখে পড়ছি। আমার হাতে ছেড়ে দিলে অর্থনীতি নয়তো ইতিহাস নিয়ে পড়তাম। এই যে, এখন বুড়া বয়সে এসে আর ভাল লাগে না পড়তে, তার কারণ ঐ জোর করে পড়ানোই।

এটা কোন কথা হল না। লেগে থাকো, হয়ে যাবে। লাইফ ইজন্‌’ট ফেয়ার, অ্যান্ড নো ওয়ান এভার সেড ইট ইজ। ম্যান আপ, ডুড।
ঠিক হল না কিন্তু। মারলা তো মারলা, একদম বেল্টের নিচেই মারলা। নাহ, এই জন্যই মেয়েদের সাথে কথা বলতে ভয় লাগে আমার। প্রথম দিকের আধো-আধো কথা ভুলে নিজের ডিফেন্স লোয়ার করি, আর তারপর ধুম করে এরকম কিছু একটা বলে বসে সবাই।

নারী আর পুরুষ কখনও সমান হতে পারে না, এটা আমরাও বুঝি। তবে ছেলেরা দুর্বল লিঙ্গ হওয়া সত্ত্বেও মেয়েরা তাদের ঠিকই সহ্য করে এসেছে লক্ষ লক্ষ বছর ধরে।
ঐ যে আবার শুরু হল কোমড়ের নিচে মারামারি। এমন একটা সময় বলছো এসব, যখন আমি পুরোপুরিই তোমার মর্জির কাছে জিম্মি। এই মুহূর্তে তোমার সাথে একমত না হলে আমাকে যাচ্ছেতাই একটা মো-হক নিয়ে ঘুরতে হবে এক মাস।

ভয় নাই। চুলও ছিড়বো না, বকাও দিবো না। গরমের এত ভয় তোমার, মাথায় এত গরম লাগে, তবু আজকের মত দিনে তুমি সুইমিং পুলে না কেন?
চুল, চুল। এই জঙ্গলটা সাফ করে নেই আজকে, তারপর কালকে থেকে নাহয় যাবো আবার। সপ্তাহ খানেকের একটা বড় ট্রিপ দিয়ে আসলাম। বাড়ি থেকে সাতশ' মাইল দূরে গিয়ে গাড়ি নষ্ট হয়ে গেল। সেই গাড়ি ঠিক করতে করতে আমরা আরো ঘুরে বেড়ালাম। না না, বন্ধুর গাড়ি। আমার না।

আমার একটা হোন্ডা আছে। ১০ বছর পুরনো। আমি যখন ১৮ বছরের ছিলাম, তখন কিনেছিলাম।
ভাল সার্ভিস দেওয়া উচিত। হোন্ডা খুব রিলায়েবল গাড়ি। তবে আওয়াজ বেশি করে, এটাই সমস্যা। ইদানিং সেগুলো ঠিক করে ফেলেছে অবশ্য।

আমি চালাই খুব কম। ১০ বছরে মনে হয় মাত্র এক লাখ মাইলে চলেছে গাড়ি। আই বট অ্যান অ্যাকর্ড।
এক মালিকের হাতে চলা গাড়ি, বিক্রি করলে দাম পাবা ভালো। হোন্ডার প্রাইস রিটেনশন সবচেয়ে ভাল। আমেরিকান আর কোরিয়ান গাড়ির দাম সবচেয়ে কমে।

আমার বাবা বলেছিল তাকে বিক্রি করে দিতে। তেলের দাম বেশি দেখে তার ট্রাকটা বের করতে চায় না।
কেনার সময় খেয়াল রাখা দরকার ছিল। এই ভুল করেই ডেট্রয়েট ডুবলো। তেল একটা সীমিত সম্পদ, এর দাম কখনো না কখনো বাড়বে। এই সহজ সত্যটা ভুলে গিয়ে আজকে আমেরিকার বেহাল দশা। বেশি বেশি লাভের লোভে ট্রাক আর এসইউভি বিক্রি করতে থাকলো। আজকে অর্থনীতির বেহাল দশা হত না সময় থাকতে সচেতন হলে।

আমি এই জন্যই কোন খোঁজ রাখি না। সবাই শেয়ার মার্কেট নিয়ে চিন্তা করে, আমি কিচ্ছু করি না। স্রেফ নিজের মত থাকি।
কে যেন বলেছিল, হ্যাপিনেস ইজ আ চয়েস। সুতরাং যা করছো, ঠিকই হয়তো। অযথা খাল কেটে ডিপ্রেশন ডেকে আনার মানে নেই কোন। তবে তেলের দাম হিসেবে রাখতেই হয়। আমি চার বছর আগে ওয়ান এইটি ফাইভে কিনেছিলাম, এবার কিনলাম ফোর টুয়েন্টিতে। জাপানি গাড়ি কিনেছিলা বলে রক্ষা, নয়তো অনেক টাকা যেত তেল কিনে।

আমার ইচ্ছা একটা লেক্সাস কেনার। ইএস। ইউ নো হোয়াট আই অ্যাম টকিং এবাউট, রাইট?
আই শিওর ডু। আমার রুমি একটা লেক্সাস চালায়। আর এবার ঘুরে আসলাম ভলভোয়। বেশ লাগলো চড়ে। আমার শখ বিএমডব্লিউ কেনার। সারা জীবনের শখ আমার।

শোন, থ্রি-এইটথ্‌ ইঞ্চ কাটি তোমার চুল। আর সামনে কিছুটা বড় রাখি। স্পাইকিং জেল লাগিয়ে দেই। খারাপ লাগবে না দেখতে।
অ্যাজ ইউ লাইক ইট। আমার কাছে সব সমান। পেছনে যেমন খুশি করতে পারো। স্কোয়্যার আর রাউন্ডের তফাৎ নেই আমার কাছে। দ্যাট্‌স পারহ্যাপস দি ওনলি পার্ট অফ মাই বডি হুইচ আই ক্যান্ট সি নো ম্যাটার হাউ মাচ আই ট্রাই। ওয়েল, হয়তো আরো দুই-একটা জায়গা আছে, তবে সেদিকে নাহয় না যাই। আপাতত স্কোয়্যারই করে দাও। তো এই গাড়ি বিক্রি করলে কি লেক্সাস কিনবে? মিন্ট কন্ডিশনে আপত্তি না থাকলে বছর পাঁচেকের পুরনো লাক্সারি মডেলের গাড়ি কিনতে পারো। দে কাম ফুললি লোডেড টু।

আমার এই স্বপ্নটা সত্যি হবে বলে মনে হয় না। ঐ যে আয়নার নিচে ছবিটা দেখতে পারছো? ঐটা আমার মেয়ের ছবি। ওর জন্মের পর আমার এক্স-হাসব্যান্ড খুব অবাক হয়েছিল আমার দেওয়া নাম শুনে। আই নেমড হার অ্যালেক্সিস, বিকজ আই ওয়ান্টেড আ লেক্সাস অল মাই লাইফ।
আইডিয়াটা খুব পছন্দ হয়েছে আমার। আমার ছেলে হলে তাহলে নাম রাখতে হবে বিমার।

বিমার ফ্রম বিএমডব্লিউ, রাইট? শুনতে খারাপ না। নাও, হয়ে গেছে তোমার চুল কাটা। ইট্‌স টুয়েলভ নাইনটি ফাইভ।

2 comments:

NameLess said...

প্রথমে বুঝিনাই কার সাথে কথা বলছিলেন।
then I figured out she was ur hairdresser!

Ishtiaq Rouf said...

thanks for reading. ha, oi bodmaishi-ta resist korte parchhilam na. :P