মাত্রই গত রাতে ঘুমানোর আগে দেখছিলাম মাইকেল জ্যাকসন ব্রিটেনে গাইবেন। জ্যাকসন-ফাইভের রিইউনিয়ন হবে, এরপর ৫০টি শো করবেন তিনি। খুব আফসোস হচ্ছিল ব্রিটেনে নেই দেখে। একই সাথে আনন্দিত হচ্ছিলাম অনেক, অনেক দিন পর এই মহাশিল্পীর গান-নাচ দেখার আশায়।
মনে মনে ভাবছিলাম, এই ভঙ্গুর শরীরে মুনওয়াক সইবে তো? দেখা যাবে ঝাঁকি দিতে গিয়ে হাড়-গোড় খুলে রয়ে গেছে। এক টানা ৫০টি শো করা তো নবীন শিল্পীদের জন্যও অনেক ধকলের!
বিবিসি-র ছবিতে তাকিয়ে ভাবছিলাম, এই জ্যাকসনের পেছনে সেই জ্যাকসনের ভিডিও ছাড়লে কেমন হবে। মনে মনে গালি দিচ্ছিলাম কালো থেকে সাদা হওয়ার জন্য। মানুষের সবকিছু বদলে গেলেও নাকি তার চোখগুলো একই রকম থেকে যায়। ছবি দেখে ভাবছিলাম, সেই দুরন্ত চোখগুলোও আর আগের মত নেই।
সব ভাবনা আর কল্পনার সমাপ্তি হয়ে গেল। বিশ্বজুড়ে সব মিডিয়ায় প্রকাশ, মাইকেল জ্যাকসন আর নেই। আজ দুপুরের পর তিনি হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। খুব দ্রুত তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হলেও তাঁকে আর ডিপ-কোমা থেকে ফিরিয়ে আনা যায়নি।
বহু গায়ক আসবেন, অনেক "এন্টারটেইনার" জন্ম নেবেন, কিন্তু দ্বিতীয় জ্যাকসন আসবে না। শত বিতর্ক আর হাস্যকর কার্যকলাপ সত্বেও মাইকেল জ্যাকসন চিরকাল "থ্রিলার" হয়েই রইবেন।
গান গেয়ে বিখ্যাত হয়েছিলেন অনেকেই, কিন্তু মাইকেল জ্যাকসনের মত কেউই ছিলেন না। 'থ্রিলার' অ্যালবামের ৭টি গান টপচার্টের শীর্ষে ওঠার কথা সবাইই জানেন। মুনওয়াকের কথাও সবাই জানেন। একই কণ্ঠে নরম-কঠিন সব রকম গানের কথাও জানেন।
এই সাফল্যটুকুও অনেকেই হয়তো পাবেন। যা পাবেন না, তা হল জ্যাকসনের বাধভাঙা জনপ্রিয়তা। জ্যাকসন সেই কৃষ্ণাঙ্গ শিল্পী যাঁর গান শ্বেতাঙ্গ দুনিয়াকেও কাঁপিয়েছিল। সেই শিল্পী যাঁর গান শোনার পাশাপাশি দেখে এবং অনুকরণ করে কেটেছে লক্ষ লক্ষ কিশোর-তরুণ-যুবকের দিন-রাত। সেই শিল্পী যাঁর গান শুনে আমার বাবা তার বিদেশি কনসালটেন্টের কাছ থেকে ক্যাসেট চেয়ে এনে ছেলেদের শুনিয়েছিলো। সেই শিল্পী, যাঁর নামে বের হওয়া গেম সেগা'য় খেলতে বেহায়ার মত পড়শির বাড়ি গিয়ে বসে থাকতাম।
একটু পাগলাটে আর খামখেয়ালি না হলে বোধহয় প্রতিভাবানদের মানায় না। একটু তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে না গেলেও তাই। তাই বলে এতটাই দ্রুত? মাত্র ৫০ বছর বয়সে?
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment