Tuesday, March 31, 2009

আহা, বিদেশ!

দু'দিনের তুষারপাতে ব্ল্যাক্সবার্গ ঢেকে গেছে পুরো। স্কুলের ক্লাস বাতিল করে দেওয়া হয়েছে কিছু।

আহা, বিদেশ!

ফ্রিজের বাইরে বরফ দেখার শখ আমার অনেক দিনের। আমেরিকা এসেও ৪ বছর লুইজিয়ানায় থাকার বদৌলতে শীত কেটেছে ৮০ ডিগ্রি ফারেনহাইটে! গত শীতে ভার্জিনিয়া এসে দেখলাম বরফ। স্লেজিং নামক কাজটা সেবারই জীবনে প্রথম করলাম। এই শীতে বরফ পড়েছে বেশি, কিন্তু জমলো এবারই প্রথম। মাঝে -২৫ ডিগ্রি ফারেনহাইটেও খটখটে শুকনো ছিল।

আমার কাছে বিদেশ মানেই বরফ। শিশুতোষ এক ধরণের রোমান্টিকতা কাজ করে আমার তুষারপাত দেখলে। এই যে একটু আগে ব্ল্যাক আইসে পিছলে পা মচকে আসলাম, শক্ত মাটি মনে করে পানির উপর জমে থাকা বরফে পা দিয়ে জুতা ভিজিয়ে ফেললাম, তবুও ভালই লাগছে। ঝকঝকে রোদ উঠলেও শীত কমেনি। বালু-ঝড়ের মত উড়ছে মিহি তুষারকণা। বাতাস কাঁপিয়ে যাচ্ছে, মুখে সুঁইয়ের মত বিঁধছে, তবু ভালই তো লাগছিলো।

আমার কম্পিউটারটা জানালার পাশে। এখানে বসে দিনরাত প্রকৃতির খেলা দেখি। দু'দিন যাবৎ একটানা তুষারপাত দেখছিলাম। পরশু বের হবার আগে আবহাওয়ার পূর্বাভাষ দেখিনি। ক'দিন ধরে বৃষ্টি পড়ছিল, ভাবছিলাম তেমনটাই চলবে। ফতুয়া আর একটা জ্যাকেট পরে বেরিয়েছিলাম। চোখের সামনে বৃষ্টির পানি জমে ফ্লারি হয়ে গেল, তার দু'সেকেন্ড পরই পেঁজা তুলার মত তুষারপাত।

আহা, বিদেশ!

এক ফাঁকে পয়েন্ট-অ্যান্ড-ধ্যুৎ ক্যামেরাটা নিয়েই বের হলাম পার্কিং লটে। কিছু ছবি তুলে ফেললাম ঝটপট।

সিড়ি দিয়ে নেমেই...


বায়ে তাকিয়ে দেখলাম রাস্তা মাত্রই সাফ করা হয়েছে...


ডান দিকে তাকিয়ে দেখি এই দৃশ্য...


ভাবলাম এদিকেই দু'কদম এগোই...


আমার বাড়ি স্টেট হাইওয়ের একেবারেই পাশে। বেড়ার পাশ দিয়ে সেটার দিকে তাকিয়ে...


দুই বিল্ডিং-এর মাঝের এই ধাপগুলো আমার খুব প্রিয় একটা জায়গায় নিয়ে যায়...


পেছনের দিকে আমার খুব প্রিয় সেই বেঞ্চটা, যেখানে মন খারাপ হলেই একা বসে থাকি...


এত বরফ ডিঙিয়ে নিজেকে ততক্ষণে হিলারি-হিলারি মনে হচ্ছে। ক্লিনটনের শয্যাসঙ্গিনী না, হিমালয়-বিজয়ী হিলারি। মনে হল নিজের দাবিটুকু রেখে যাই...


যাবতীয় রোমাঞ্চ কেটে গেল এই গাছটা দেখে...


অজান্তে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল। এই গাছগুলোর মতই আলো-হাওয়ার প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে পরে আছি পরের দেশে। নিজের বলতে যেই পাতাগুলো, সেগুলো হারিয়ে গেছে। নুয়ে পড়া শরীরে শুধু ভার বইছি ভিন্‌দেশি বরফকণার।

ডাক পড়লো স্লেজিং-এ যাবার। কী মনে করে যেন মানা করে দিলাম। গরুর মাংস আর খিচুড়ি রাঁধবো। তুষারকে বর্ষা করে দেবো।

আহা, বিদেশ!

No comments: