Friday, February 01, 2008

প্রবাসের কথোপকথন ১২

“মেয়ের জ্বর কমে নাই এখনো? ডাক্তার দেখান। ভাবীকে দুইটা দিন ছুটি নিতে বলেন। নতুন কাজ নিলে ছুটি পেতে সমস্যা হবেই এরকম। কী আর করবেন ছুটি না পেলে, আল্লাহ আল্লাহ করেন, ঠিক মত ওষুধ দেন, দেখে রাখেন।”

“ডঃ ইউনুস সাক্ষাৎকার দিসে, দেখসেন নাকি? কয় বিজ্ঞাপন দিয়েও নাকি গরীব পাওয়া যাবে না বাংলাদেশে। হায়রে গ্রামীন ব্যাংক। ৮০ বছরের বুড়িরেও রেহাই দেয় না টিনের চালের জন্য, আবার বড় বড় কথা।”

“এই কয়দিন ধরে ব্যবসায় এত মন্দা অবস্থা যে বলার না। জমার টাকাই তুলতে পারি না। মন খারাপ করে কালকে গাড়ি বেরই করি নাই। ঘর থেকে টাকা নিয়ে জমার টাকা পুরাতে হয়, এমন বাজে অবস্থা। অর্থনীতি একদম গেছে। আগে কী রমরমা ছিল!”

“আজকের ঠিকানা দেখেছেন? তারেক রহমানকে নাকি রিমান্ডে টর্চার করা হয়েছে। এই কাজটা কেন করতে গেল? এত্ত সাহস বেড়ে গেছে সরকারের? যত যাই হোক, শহীদ জিয়ার ছেলে। তাকে এই ভাবে চোখ বেঁধে অত্যাচার করার কী মানে আছে? এইটার আন্তর্জাতিক তদন্ত হওয়া দরকার।”

“আর তারেক যে পাঁচ বছর ধরে এত লুটপাট করলো, সেটার কী হবে? তখন আইন কই ছিল? কথা বের হয় নাই কেন তখন আপনাদের মুখ দিয়ে? আরে আমার মামা বুক চাপড়ায় বলসিলো, আমারে ঠিক মত বিয়াটা করতে দে। তারেক লোকজন সহ তারে বিয়ার আসর থেকে তুইলা নিয়া গিয়া পিটাইসে। আজকে স্রেফ চোখ বানসে আর এত কান্নাকাটি লাগায় দিসেন! মহিউদ্দীন খান আলমগীরকে যে চোখ বেন্ধে পিটাইসে, যাতে কে মারসে দেখতে না পারে? আদালতে বলসিলো যে তার পায়খানার রাস্তা দিয়ে গরম ডিম ঢুকায় দিসে, যাতে কাউকে দেখাতে না পারে।”

“রাবেয়া আপা, আমার মামাতো ভাই এইটা। বড় মামার ছেলে। ওরে দুইটা পিঠা দেন। এই নাও ভাইয়া, তোমাদের ভার্জিনিয়ায় তো ভাপা পিঠা পাও না। এই, তোর ছেলেকে এই পিঠাটা দে।”

“পিঠার ইংরেজি জানি না, বাবা। সাদাটাই মজা তো। এটায় নারিকেল আছে। থাক, ভাল না লাগলে গুড়টা খাও শুধু। বার্গার আরেকদিন খাবো। হ্যাঁ হ্যাঁ, মা বাসায় গেলে বিরিয়ানি রান্না করে দিবে তোমাকে।”

“আরে তারেকের হাড্ডি ভাঙে ভাঙুক, আপনি নিজে সৎ হন। আপনি কখনো চুরি করেন নাই? এত বছর ধরে নিউ ইয়র্ক আছেন, কোন অন্যায় করেন নাই? দেশে যে এনজিও খুলতে মাসে মাসে টাকা পাঠান, ঐটা এমনি এমনি হয়ে যাচ্ছে?”

“না, কোন অন্যায় করি নাই। আমাকে বলসে এনজিও খুলতে ৫০ লাখ টাকা লাগবে। ৩০ লাখ মত জোগাড় করে পাঠায় দিসি। আরেক কিস্তি সামনে পাঠাবো। এই টাকা এখানেই জোগাড় করা। এর মধ্যে চুরি নাই কোন।”

“একটা ফর্ম জমা দিতে হয় প্রথমে, মনে পড়ে? জ্বী, ঐ যে ১০ জনের সিগনেচার সহ একটা কাগজ জমা দিতে হয়। ঐটায় কার কার নাম ছিল? ঐ ১০ জনের কেউ কি আদৌ অংশীদার? সাজানো নাম ছিল না সব? জ্বী, এই খানেই চুরিটা করছেন। আমার এক চাচা একই কাজ করসে। আমাকে বলতে আইসেন না যে এনজিও খুলসেন কিন্তু চুরি করেন নাই। নিজে সৎ হন, তাহলেই সব ঠিক। অযথা তারেকের জন্য কেঁদে লাভ নাই।”

“চেনা চেনা লাগে, তবু অচেনা, ভালবাসো যদি, কাছে এসো না...”

“আহারে কী সুন্দর সব সিনেমা ছিল। জোনাকি সিনেমা হলে প্রতি সপ্তাহে যেতাম সিনেমা দেখতে। এখন কী সব নাখাস্তা সিনেমা বানায়।”

“আচ্ছা, আমি একটা কথা বুঝি না। মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে ধরে না কেন? এই চোর দেখি সেদিন টিভিতে সাক্ষাৎকার দেয়। আমার তো রাগে গা জ্বালা করছে এখনো।”

“আরে এরা বেছে বেছে নিজের মত লোক ধরছে। নাইলে মান্নান ভূঁইয়া কীভাবে বাইরে থাকে এখনো? সবচেয়ে দুর্নীতিবাজ মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী হয়েও ব্যাটা এখন আরামে ঘুরে বেড়ায়। ঐদিকে আওয়ামী লীগে আমুর মত চোরকে ধরার নাম নাই। সবই এক। নিজেরটা ছাড়া কেউ কিছু বুঝে না।”

“মেয়র মহিউদ্দীন প্রতি বছর ২৫ জন হাজ্বীকে হজ্জ্ব করার পয়সা দেয়। একবার গরমের জন্য ২৪ টা এসি কিনে দিসে নিজের টাকায়। একে জেলে ভরসে, কিন্তু সাদেক হোসেন খোকা বাইরে।”

“আরে মহিউদ্দীনকে ধরসে শুধু চট্টগ্রাম বন্দর খোলা রাখতে। তবে ধরুক। সব কয়টাকে ধরুন। এগুলার একটাও নির্দোষ না। বাইন্ধা পিসা দিয়া বাইরানোর কাম এগুলারে।”

“হবে, বাবা। তুমিও একদিন স্টুডেন্ট অফ দ্য মান্থ হবে। মাথাটা খারাপ করে ফেললো, বুঝলা? সবাই স্টুডেন্ট অফ দ্য মান্থ হয়, আমি কেন হই না? এত বলি যে তুমি মাত্র এসেছো, ইংরেজি বুঝতে সমস্যা হবে তোমার। পড়াশুনার দিকে আগ্রহটা আছে। ইচ্ছা আছে ভাল একটা ইউনিভার্সিটিতে পড়ানোর, কিন্তু নিউ ইয়র্কে থেকে টাকা জমানো সম্ভব না। সাইথে যাবো গিয়ে ভাবি প্রায়ই। আমরা দুই জন মিলে কাজ করলে এর অর্ধেক টাকায়ও ভাল চলে যাবে।”

“আরে মঈন ইউ তো নোয়াখালির লোক। বরকতুল্লাহ বুলুর আত্মীয়। ওর দৌড় জানা আছে। কিছুই করবে না বিএনপির লোকজনের।”

“আরে আরও আছে। জেনারেল মতিন তো ৭১’এর সেই চার আল বদরের একটার আত্মীয়। যেইটা শহীদুল্লাহ কায়সারের বাসায় এসে তাকে চিনিয়ে দিলো। পান্না কায়সার নাকি টান দিয়ে মুখের উপর থেকে মাফলার খুলে চেহারা দেখে ফেলেছিলো। বিবিসি থেকে ডকুমেন্টারি করার সময় সাক্ষাৎকার নিতে গিয়েছিলো, দরজা খুলে নাই। খুব নাকি ব্রিলিয়ান্ট ছাত্র ছিল ঢাকা ইউনিভার্সিটির।”

“খোকাকে কেন ধরে না জানেনে? খোকা এক সময় ব্যারিস্টার মইনুলের উকিল ছিল। এদের অনেক আগে থেকেই কানেকশন। মইন তো জামাতের সমাবেশেও যাওয়া-আসা করতো।”

“এই লোকটা অতিরিক্ত কথা বলে, বুঝলেন? এর একলার জন্য সরকারের ভাবমূর্তির ১২টা বাজলো পুরা। হাসিনার পিছনে যেভাবে উঠে-পড়ে লাগলো। অথচ কয়দিন আগেই নিজের ছেলের জন্য নমিনেশন চাইতে হাসিনার কাছে ঘুরে আসলো। হাসিনা দেয় নাই দেখে শোধ তুলছে এখন।”

“আরে আর্মিও তো মানুষ। দেশে এখন শুনি ঘুষের রেট বেড়ে গেছে, তবু ঘুষ আছেই। রিস্ক বেশি, তাই রেট বেশি। আসল লোকগুলোকে তো ধরে না। এরা আছে দুই দিন পরপর মাইনাস-টু নিয়ে লাফালাফিতে। হাসিনাকে আজম চৌধুরীর মত একটা বাটপারের মামলা দিয়ে আটকায় রাখলো। এত কিছু থাকতে নাজমুল হুদাকে গ্রেফতার করলো ঘরে মদ-বিয়ার রাখার জন্য। তামাশা নাকি রে ভাই এগুলা?”

“এদের আসলে সমাজ থেকেই বর্জন করা উচিত। মিডিয়াও তো এদের নিয়েই লাফায়। আদালতে নেওয়ার সময় শ’খানেক ক্যামেরাম্যান সামনে গিয়ে দাঁড়ায়, আর এরা ভিক্টরি সাইন দেখায়। আরে ব্যাটা জেলে যাওয়ার সময় এসব কী? সেই দিন আর নাই যে জেলে গেলে বড় নেতা হয়ে বের হবে। বাঙালি এত গাধা না। মিডিয়ার উচিত এদের কোন ছবিই না দেখানো। পত্রিকাগুলার উচিত শুধু হাতে-পায়ে বেড়ি পড়ানো ছবি ছাপানো।”

“ম্যারিয়ন জোন্সের স্বর্নপদক কেড়ে নিসে দেখসেন? মজা দেখেন, যে সেকেন্ড প্লেসে ছিল, তাকেও দিবে না। আজব কথাবার্তা।”

“সেইদিন একটা নাটক দেখলাম নতুন। ফোর-টুয়েন্টি। হেব্বি জোস। দুই ঠগ গ্রাম থেকে শহরে এসে বড়লোক হয়ে যায়, সেই কাহিনী। ১০ পর্ব দেখলাম। আজকে রাতে আবার আছে।”

“হ্যাঁ, এইটাই বাকি ছিল। বাংলাদেশের যেই অর্ধেক মানুষ ফোর-টুয়েন্টি ছিল না, এখন সেগুলাও বাটপার হবে এই নাটক দেখে।”

“ঐ যে দেখেন, ভাগলো আমার চেহারা দেখেই। আমার আগের রুমমেটের কাছ থেকে ব্যবসার নাম করে ২২ হাজার ডলার হাতায় নিয়ে ভাগসে শালা। অল্প অল্প টাকা নিয়ে ফেরত দিয়ে দিতো তাড়াতাড়ি করে। এই ভাবে বিশ্বস্ততা দেখায় একবার পুরা ২২ হাজার ডলার নিয়ে ভেগে গেছে।”

“দেখেন, দেখেন। দুদক থেকে বলে, দুর্নীতি না হলে নাকি বছরে ১২ হাজার প্রাইমারি স্কুল বানানো যেতো। শালা বাঞ্চোতের দল, দেখা দেখি এক বছরে কয়টা স্কুল বানালি! উলটা ঢাকা ইউনিভার্সিটির স্যারেগো নিয়া রিমান্ডের ভরসোস।”

No comments: